সৃষ্টির ওপর স্রষ্টার মর্যাদা যেমন সব বাণীর ওপর কোরআনের মর্যাদাও তেমন। তাই ঐশী বাণী পবিত্র কোরআনুল করিম তেলাওয়াতের ফজিলত এবং মর্যাদাও সবচেয়ে বেশি। এতে রয়েছে অনেক সওয়াব, কল্যাণ, রহমত, বরকত, আত্মার প্রশান্তি ও ইমানি শক্তি। কোরআনের প্রতিটি আয়াতে যেমন রয়েছে বিশ্ব মানবতার হেদায়েত ও মুক্তির বার্তা, তেমনি কোরআন তেলাওয়াতে রয়েছে বিশ্ববাসীর জন্য অফুরান সওয়াব ও পুরস্কারের ঘোষণা। কেননা বান্দার জন্য আল্লাহর সঙ্গে কথা বলার একমাত্র মাধ্যম পবিত্র কোরআনুল কারিম তেলাওয়াত। হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর উম্মতের বয়সের সময় ও শ্রম কম, কিন্তু তার সম্মান ও সওয়াব অনেক অনেক বেশি। এ উম্মতকে আল্লাহতায়ালা কালামুল্লাহ বা আল কোরআন দান করেছেন, যা স্বয়ং আল্লাহর কথা। হজরত মুসা (আ.) আল্লাহর সঙ্গে কথা বলতেন, তবে তা ছিল নির্ধারিত সময়ে। আর এ উম্মতের জন্য যখন খুশি তখন আল্লাহর সঙ্গে কথা বলার সুযোগ রয়েছে। হজরত আলী রাদিয়াল্লাহুতায়ালা আনহু বলেন, আমার যখন মন চাইত আল্লাহর সঙ্গে কথা বলব, তখন আমি কোরআন তেলাওয়াত শুরু করে দিতাম। রমজান মাস ছাড়া পবিত্র কোরআন শরিফ খতম করে এমন মানুষের সংখ্যা খুবই কম। অথচ ইচ্ছা করলে নিয়মিতভাবে প্রতি ওয়াক্ত নামাজের আগে-পরে ও সকাল-বিকাল দু-চার পৃষ্ঠা করে কোরআন শরিফ তেলাওয়াত করা যায়। তাতে দেখা যাবে প্রতি দুই বা তিন মাসে একটি করে খতম হয়ে যাবে। এ ছাড়াও কাজের সময়ও মুখস্থ করা ছোট ছোট সুরাগুলো আমরা পড়তে পারি। অথবা অ্যান্ড্রয়েড মোবাইলে কোরআন অ্যাপসের মাধ্যমে ডাউনলোড করা কোরআন শরিফ দেখে দেখে তেলাওয়াত করতে পারি। প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর কিতাব নিয়মিত তেলাওয়াত করবে সে ব্যক্তিকে যখন মৃত্যুর পর কবরে দাফন করা হয় তখন ফেরেশতারা মাথার দিক থেকে আজাব দেওয়ার জন্য এলে তখন কোরআন তাকে বাধা দেয়, যখন ফেরেশতা সামনের দিক থেকে আসে তখন দান-সদকা তাকে বাধা দেয়, যখন ফেরেশতা পায়ের দিক থেকে আসে, তখন মসজিদে পায়ে হেঁটে যাওয়া তাকে বাধা দেয়। হজরত আবু মুসা আশআরি (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, যে মমিন ব্যক্তি কোরআন তেলাওয়াত করে, তার উদাহরণ হলো কমলালেবুর মতো, তার স্বাদও ভালো আবার ঘ্রাণও ভালো। তেলাওয়াতবিহীন মুমিনের উদাহরণ হলো খেজুরের মতো, তার স্বাদ ভালো কিন্তু কোনো ঘ্রাণ নেই। আর কোরআন তেলাওয়াতকারী পাপী ব্যক্তির উদাহরণ হলো ফুলের মতো, ঘ্রাণ ভালো কিন্তু স্বাদ তিক্ত। আর যে কোরআন তেলাওয়াত করে না, এমন পাপী মমিনের উদাহরণ হলো মাকালের মতো, যা দেখতেই সুন্দর, তবে স্বাদে তিক্ত, বিষাক্ত ও দুর্গন্ধময়। (বোখারি)।
বিশ্বনবী প্রিয় নবী মুহাম্মদুর রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, কোরআনের আয়াতের সংখ্যার পরিমাণ হবে জান্নাতের সিঁড়ি, আর কোরআনের পাঠককে বলা হবে তুমি যতটুকু কোরআন পড়েছ, ততটুকু সিঁড়ি বেয়ে ওপরে উঠে যাও। যে ব্যক্তি সম্পূর্ণ কোরআন পড়েছে, সে আখেরাতে জান্নাতের সর্বশেষ ধাপে উঠে যাবে। আর যে ব্যক্তি কোরআনের কিছু অংশ পড়েছে, সে সমপরিমাণ ওপরে উঠতে পারবে। আর তার কোরআন পড়ার সীমানা যেখানে শেষ হবে, সেখানে তার সওয়াবের সীমানাও শেষ হবে। দুনিয়াতে কোরআন চর্চা তথা শেখা এবং শেখানোর ফজিলত সম্পর্কে প্রিয় নবী বলেন, তোমাদের মধ্যে সর্ব উত্তম ওই ব্যক্তি যে নিজে কোরআন শেখে অতঃপর অন্যকে শেখায়। (বুখারি)। প্রিয় নবী আরও ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি কোরআনের একটি অক্ষর পড়বে সে একটি নেকি পাবে, আর একটি নেকি দশটি নেকির সমপরিমাণ। (তিরমিজি)। দয়ার নবী (সা.) ইরশাদ করেন, কেয়ামতের দিন কোরআন অধ্যয়নকারীকে বলা হবে তুমি পবিত্র কোরআন পড় এবং জান্নাতের ওপরে উঠতে থাক, যেভাবে তুমি দুনিয়াতে সুন্দরভাবে, সহিভাবে, তারতিলের সঙ্গে কোরআন পড়তে, সেভাবেই পড়। জেনে রাখ যেখানে তোমার আয়াত পাঠ করা শেষ হবে, জান্নাতের সেই সুউচ্চ স্থানই হবে তোমার চিরস্থায়ী সুখশান্তিময় বাসস্থান। (তিরমিজি)। প্রিয় নবী (সা.) আরও ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি কোরআন পাঠ করবে এবং তা মুখস্থ করবে ও তার বিধিবিধানের প্রতি যত্নবান হবে, সে উচ্চ মর্যাদার সম্মানিত ফেরেশতাদের সঙ্গে জান্নাতে অবস্থান করবে, আর যে ব্যক্তি কষ্ট হওয়া সত্ত্বেও কোরআন পাঠ করবে এবং তার সঙ্গে নিজেকে সম্পৃক্ত রাখবে, সে দ্বিগুণ সওয়াবের অধিকারী হবে। (বুখারি- মুসলিম)। নবীজি (সা.) আরও ইরশাদ করেন, তোমরা কোরআন তেলাওয়াত কর, কেননা কেয়ামতের দিন কোরআন তার তিলাওয়াতকারীর জন্য সুপারিশকারী হবে। (মুসলিম)। তিনি আরও বলেন, কেয়ামতের দিন সিয়াম ও কোরআন বান্দার জন্য আল্লাহর কাছে সুপারিশ করবে। (মুসনাদে আহমদ)। প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, কোনো সম্প্রদায় যদি কোনো স্থানে একত্র হয়ে কোরআন তেলাওয়াত করে এবং তা পরস্পরে শেখে এবং সে বিষয়ে আলোচনা করে, তবে আল্লাহতায়ালা তাদের ওপর প্রশান্তি নাজিল করেন এবং আল্লাহর রহমত তাদের আচ্ছাদিত করে এবং ফেরেশতারা তাদের ঘিরে রাখে, আর আল্লাহতায়ালা তার কাছের ফেরেশতাদের সামনে তাদের কথা আলোচনা করেন। (মুসলিম)।
লেখক : ইমাম ও খতিব, কাওলার বাজার জামে মসজিদ, দক্ষিণখান, ঢাকা