যে কোনো বিষয়ে উদাহরণ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রকে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে আনতেই হয়, যদিও ইউরোপই যুক্তরাষ্ট্রকে বিশ্বের এক নম্বর দেশ বানিয়েছে। এই যে বিভিন্ন জেনারেশন নিয়ে কথা বলছি সেগুলোও যুক্তরাষ্ট্রই নির্ধারণ করেছে। যেমন জেনারেশন আলফা (২০১৩-) জেনারেশন জেড, মিলেনিয়াম, জেনারেশন এক্স, জেনারেশন বেবি বুমার, সাইলেন্ট জেনারেশন, গ্রেটেস্ট জেনারেশন এবং লস্ট জেনারেশন। প্রজন্ম বেবি বুমার হলো ১৯৪৬ থেকে ১৯৬৪ সালের মধ্যে জন্মগ্রহণকারী ব্যক্তিদের (৫৬ থেকে ৭৮ বছর) বর্ণনা করতে ব্যবহৃত হয়। অর্থাৎ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষে বুমার প্রজন্মকে সংজ্ঞায়িত করে, যখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তার জন্মহারে হঠাৎ ঊর্ধ্বগতি দেখতে পায়। আর সাইলেন্ট জেনারেশন হচ্ছে ১৯২৮ থেকে ১৯৪৫ পর্যন্ত। আমি হলাম বেবি বুমারদের শেষ প্রান্তে।
আজকের জেনারেশন জেড-এর বাবা-মা জেনারেশন এক্স বা বেশির ভাগ বেবি বুমারই হবে। আমার কথা হচ্ছে এই প্রজন্মের জেনারেশন জেডরা, তোমরা তোমাদের বাবা-মা অথবা অভিভাবকদের কথা কান পেতে শোনো। কেননা সাধারণত এই বেবি বুমারদের একটি প্রধানতম বৈশিষ্ট্যই হলো কার্যকর সিদ্ধান্ত গ্রহণের দক্ষতা এবং এরা আশাবাদী এবং বাস্তববাদী। এদের অপরিসীম ধৈর্য। তাছাড়া কঠোর পরিশ্রমী, প্রতিযোগিতামূলক এবং লক্ষ্যভিত্তিক হয়ে থাকে।
আমাদের বাঙালিদের জন্য আরেকটি উল্লেখযোগ্য দিক হলো নস্টালজিক হয়ে পড়া এবং বসন্তসুখেও দুঃখবোধ অনুভব করা। এখনো আমাদের ভালো লাগে সুচিত্রা-উত্তমের যে কোনো সিনেমা, অথবা রাজ্জাক-কবরীর ‘সুতরাং’ কিংবা শবনম-রহমানের সিনেমাগুলো। আর গান বলতে সেই হেমন্ত, মান্না দে, সতীনাথ, সন্ধ্যা, লতা কিংবা মোহাম্মদ রফি অথবা ফেরদৌসী রহমান। তা ছাড়া রয়েছে রবীন্দ্রসংগীত ও নজরুলগীতি প্রতিদিনকার সাথি। এই বেবি বুমারদের মধ্যে আর যুদ্ধংদেহি মনোভাব নেই। ১৯৭১ সালের সেই স্মৃতি, বৃদ্ধা মাকে কোলে করে ভারত বর্ডারের দিকে পথহাঁটা। একদিকে পাকবাহিনীকে মোকাবিলা অন্যদিকে স্বগোত্রীয় রাজাকারদের নিষ্ক্রিয় করা। অতঃপর ১৯৭২ সালে পুকুর, নদীর পানিতে ডুব দিয়ে যুদ্ধংদেহি মনোভাব পরিত্যাগ করে সূচিস্নিগ্ধ হয়ে জেনারেশন পথচলা শুরু। এই পথচলায় বেবি বুমারদের একমাত্র চাওয়া স্বাভাবিক মৃত্যু। এদিক থেকে বেবি বুমাররা সৌভাগ্যবান। এখনো পর্যন্ত বেঁচে থাকাটাই বড় কথা। বেবি বুমারদের বয়স সত্তরের ঊর্ধ্বে যাওয়ার পর মৃত্যু হলে তেমন একটা আফসোস থাকার কথা নয়। তবু যে কোনো মৃত্যুই পীড়াদায়ক তা শততম বছরে হলেও। আর জেনারেশন আলফা বা জেড হলে তো চোখের ওপর হঠাৎ পৃথিবীটা অন্ধকার হয়ে পড়ে।
একটা কথা বলে রাখি, আমি যখনই কোনো আর্টিকেল লিখি, আমার কথা, আমার চিন্তা বা আমার অভিজ্ঞতার কথাই বলতে চেষ্টা করি। আমার এই বয়সে আমি কখনো চাই না আমার মেয়েরা আমার আগে এই পৃথিবী ছেড়ে চলে যাক। আমার মনে হয় সমস্ত সত্তরোর্ধ্ব বেবি বুমারদের আমারই মতো চিন্তাধারা। কোনো বাবা মা-ই সন্তানদের মৃত্যু দেখতে চায় না। তারপরও রোগ-শোক, দুর্ঘটনা ইত্যাদি লেগেই থাকে। কভিডের কথাই ধরুন না! সাম্প্রতিককালে কভিডের মহামারি মানুষকে কিছুই কি শিক্ষা দেয়নি? কী বিভীষিকাময় মৃত্যু! জীবিত এবং মৃতের মধ্যে বিরাট ফারাক সৃষ্টি করেছিল এই কভিড। বাংলাদেশের দুর্নীতি নিয়ে আমি কয়েকটি প্রতিবেদন লিখেছি। বাংলাদেশ প্রতিদিন ও প্রথম আলোতে প্রকাশিত হয়েছে। অনেক ফিডব্যাক পেয়েছি। পাঠকদের ধন্যবাদ জানাতে চাই। জেনারেশন জেড নিয়েও লিখেছি। বলার অপেক্ষা রাখে না, এই জেনারেশনের ওপরই নির্ভর করছে ভবিষ্যতের বাংলাদেশ সিঙ্গাপুর হবে কি না? ধর্মপ্রাণ মানুষ হওয়া ভালো। কিন্তু রাজনীতিতে ধর্ম ঢুকে যাওয়া কিংবা ধর্মে রাজনীতি ঢুকে যাওয়াতে যে কোনো সময় ভয়ানক বিপদ ডেকে আনতে পারে। শতকরা ৯০% যেখানে ইসলাম ধর্মাবলম্বী, রাষ্ট্রধর্ম যেখানে ইসলাম, পাড়ায় পাড়ায় যেখানে মসজিদ, আজানের ধ্বনি আকাশে-বাতাসে সেক্ষেত্রে আর কি চাওয়ার থাকতে পারে ধর্মপ্রাণ মুসলিমদের?
প্রকৃতি মাত্রই বৈচিত্র্যময়। সুতরাং বাংলাদেশে সেই বৈচিত্র্যময়তা বজায় রাখতে ১০% অন্যান্য ধর্মাবলম্বী মানুষ থাকাটাও একান্তভাবেই প্রয়োজন। সেক্ষেত্রে আবার কোটা পদ্ধতি আরোপের প্রয়োজন নেই। আগুনসন্ত্রাস একেবারেই কাম্য নয়। জেনারেশন জেড হলো এঁঢেল মাটির মতো। এদের গোল্ড প্লেট দিয়েই মোল্ড করতে হবে। আগের লেখাটায় বলেছিলাম সার্ভে করুন। গবেষণার মাধ্যমে বের করুন এদের হ্যাপিন্যাসটা কোথায়? এক সপ্তাহ আগে বিশ্বের সর্ববৃহৎ অলিম্পিয়াড শুরু হয়েছে ফ্রান্সে। তিন ঘণ্টাব্যাপী ওপেনিং অনুষ্ঠান হয়ে গেল। ২০৫টি দেশ জোগদান করেছে। বাংলাদেশও। কিন্তু কোনো বোট বা জাহাজে বাংলাদেশকে দেখতে পাইনি। মনটা খারাপ হয়ে গেল। ইন্টারনেট খুঁজে দেখলাম কোনো বাংলাদেশি অ্যাথলেট কোয়ালিফাই করেনি। আর্চার সাগর ইসলাম কোয়ালিফাইং রাউন্ডে ৪৫তম হয়েছেন। আর শুটিংয়ে রবিউল ইসলাম ৪৩তম হয়েছেন। ১৭ কোটি মানুষের মাঝে কেউ কোয়ালিফাই করতে পারছে না। দুঃখজনক অবশ্যই। তবে ১৪০ কোটি মানুষের পাশের দেশ, ভারত এই অলিম্পিকে এ পর্যন্ত মাত্র একটি ব্রোঞ্জ মেডেল পেয়েছে। জেনারেশন জেডদের জন্য অ্যাথলেটিক্স এবং খেলাধুলায় পারদর্শী করে তোলার ব্যবস্থা করতে হবে। যে খেলায় কিছুটা ভালো, সেই ক্রিকেটে ফাইনালে এখনো বাংলাদেশ পৌঁছাতে পারছে না। বিশ্বের এক নম্বর অলরাউন্ডার থাকতে, এক নম্বর কাটার, এক নম্বর লেগ স্পিনার থাকতেও ফাইনাল পর্যন্ত যেতে পারছে না; দেশের ভিতরেই কম্পিটিভন্যাস গড়ে তুলুন; আরও অনুশীলনের ব্যবস্থা করুন।
শিক্ষাব্যবস্থা সঠিক পথেই আছে, তবে গবেষণার সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে। শিক্ষা ক্ষেত্রে রাজনীতি পুরোপুরি বন্ধ করতে হবে। কোনো দলেরই শিক্ষক অথবা ছাত্র উইং থাকতে পারবে না। এগুলো না করতে পারলে বাংলাদেশ কখনো সিঙ্গাপুর হতে পারবে না।
সৌদি আরব যেখানে নিত্যদিন সংস্কারের পথে হাঁটছে, সেখানে বাংলাদেশ তালেবানদের দিকে ধাবিত হবে, আমি বিশ্বাস করি না। ঐতিহ্যবাহী দেশ তুরস্কের দিকে তাকান। বিশ্বের মুসলিম দেশগুলোর সঙ্গে আরও ঘনিষ্ঠ হওয়ার চেষ্টা করুন। মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়ায় শ্রমবাজার আরও বৃদ্ধি করুন। পশ্চিমা দেশগুলো তাদের প্রয়োজনেই বাংলাদেশকে কাছে টানবে। সর্বোপরি দেশের মানুষকে মানবতাবাদী ভালো মানুষ তৈরি করতে নিরন্তর চেষ্টা চালিয়ে যান।
কয়েক সপ্তাহ আগে, ‘Positivity in life’ নিয়ে একটি লেখা লোকাল পেপার, Dispatch -এ ছাপা হয়েছিল। সেখান থেকে একটি প্যারা পাঠকদের জন্য সংযোজন করে দিলাম :
I liked the idea of positivity in our life. This is very important. Whenever we use negative comments to someone for any reason, it makes a permanent scar on the recipients. However, we can easily convert those negative sayings in a positive way. Let’s take an example, sometimes we are tempted to say, even to our children, “you are worthless.” We can convert this saying in a sort of positive way such as “you have to try hard to do something. ” Better to avoid any negative word such as no, not or something like that.
লেখক : অধ্যাপক; বিজ্ঞান ও অঙ্ক বিভাগ, মিসিসিপি ইউনিভার্সিটি ফর উইম্যান, কলম্বাস, যুক্তরাষ্ট্র
Email: [email protected]