ধর্মীয় ও নৈতিকতার বিচারে অসাধুতা এবং সত্য-ন্যায়ের অবস্থান থেকে বিচ্যুতিই দুর্নীতি। ঘুষ দেওয়া-নেওয়া, সম্পদ-সম্পত্তির অন্যায় দখল, সরকারি বা রাজনৈতিক ক্ষমতার অপব্যবহারে ব্যক্তিস্বার্থ চরিতার্থ করা দুর্নীতি। এসব অপকর্ম সমাজের প্রায় সব ক্ষেত্রে এমন মহামারি আকারে ছড়িয়েছে যে, এর বাইরে দু-একজন থাকলেও তাদের খুঁজতে ম্যাগ্নিফাইং গ্লাসের সাহায্য নিতে হবে। ‘টাকা ছাড়াই পুলিশে চাকরি’ এমন সংবাদ প্রকাশ হয়েছে গণমাধ্যমে। মানে এটা অবিশ্বাস্য, এমনতো হয় না! দুর্নীতিতে আমরা কত নিচে নেমেছি এতে তা স্পষ্ট। ২০০৭-এ ওয়ান-ইলেভেনের পর সমাজের বিভিন্ন স্তরে বড় দুর্নীতিবাজদের স্বরূপ উন্মোচিত হয়েছিল। বনের রাজা গনি মিয়ার গল্প মানুষ এখনো ভোলেনি। কোটি টাকার গাড়ি পথেঘাটে ফেলে রেখে গেছে কেউ কেউ। দীর্ঘদিন পর আবার এক বৈপ্লবিক পরিবর্তনে দুর্নীতিবাজদের খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে। বেরিয়ে আসছে এক এক খাতের দুর্নীতির থলের বিড়াল। কোটি কোটি নগদ টাকা উদ্ধার হচ্ছে সাবেক সচিবের বাসা থেকে। হাজার হাজার কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন পুলিশের অনেক কর্মকর্তা। মন্ত্রী এমপি এমনকি ড্রাইভার-পিওন পর্যন্ত শত-সহস্র কোটি টাকার সম্পদের অধিকারী। কয়েক কোটি টাকার গাড়ি পাওয়া গেল পরিত্যক্ত। চোরের বউ গয়না পরতে পারে না- এমন প্রবচন প্রচলিত আছে। এই গাড়ির ক্ষেত্রেও এ প্রবাদই প্রযোজ্য। অবৈধ অর্জন না হলে তা পথে পড়ে থাকার কথা নয়। আইন, বিচার, প্রশাসন থেকে শুরু করে সরকারি কর্মক্ষেত্রের সর্বত্র দুর্নীতি এমন সর্বগ্রাসী মাত্রায় ছড়িয়েছে, যেন কেউ এর বাইরে নেই। ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছে। দুর্নীতি দমন কমিশন তৎপরতা শুরু করেছে। আমরা এ পদক্ষেপকে সাধুবাদ জানাই। সমাজে দুর্নীতির মূলোৎপাটনে দুদকের জনবল কয়েক গুণ বাড়ানো হোক। অতীতে দুদক কর্মকর্তার দুর্নীতির নজির আছে, তার শাস্তিও হয়েছে। ভূত তাড়ানোর শর্ষেতে এখনো যদি ভূত থেকে থাকে- আগে সেটা তাড়ানো প্রয়োজন। দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরকারের অঙ্গীকার যেন বাস্তবিক অর্থে কার্যকর হয় তা নিশ্চিত করতে হবে। অনেক জীবনের বিনিময়ে জুলাই বিপ্লবে অর্জিত নতুন বাংলাদেশে শতভাগ দুর্নীতিমুক্ত সমাজ কামনা করে সবাই।