প্রতিটি কাজে আমাদের প্রত্যেককেই আল্লাহর তাকওয়া অবলম্বন করা উচিত। তাহলে এর ফলাফল শেষে বিচারের দিনে দেখতে পাওয়া যাবে। দীর্ঘ জীবন লাভের কোনো কল্যাণ নেই, যদি না তাতে তাকওয়া অবলম্বন না হয়। মুসলিম উম্মাহ! আল্লাহ মানুষকে দুনিয়াতে তাঁর খলিফা বা প্রতিনিধি বানিয়ে সম্মানিত করেছেন। তিনি সুরা বাকারার ৩০নং আয়াতে বলেন, ‘আমি দুনিয়াতে প্রতিনিধি সৃষ্টি করতে চাই। আর এই প্রতিনিধিত্ব প্রতিষ্ঠিত সংশোধন, ভালো কাজের আদেশ, অসৎ কাজের নিষেধ এবং মানুষের মধ্যে ন্যায়পরায়ণতা প্রতিষ্ঠার মাঝেই রয়েছে।’ আল্লাহতায়ালা তাঁর রসুলদের এসব গুরুত্বপূর্ণ কাজ পালনের উদ্দেশ্যে এবং মানুষের ওপর দলিলস্বরূপ প্রেরণ করেছেন। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘সুসংবাদদাতা ও সাবধানকারী হিসেবে রসুল প্রেরণ করেছি, যাতে রসুল আসার পর আল্লাহর বিরুদ্ধে মানুষের কোনো অভিযোগ না থাকে।’ আল্লাহ পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময় (নিসা-১৬৫)। আল্লাহতায়ালা এই সুস্পষ্ট আয়াতের মাধ্যমে আমাদের সহযোগিতা করেছেন, যাতে আমরা সন্দেহমুক্ত হতে পারি। তিনি আরও বলেন, ‘আমি আমার রসুলগণকে সুস্পষ্ট নির্দেশসহ প্রেরণ করেছি।’ এরপর তিনি মানবজাতির কাছে মহানবী মুহাম্মদ (সা.)-কে প্রেরণ করেছেন। আদম সন্তানদের নেতা হিসেবে। নবীদের ইমাম ও সর্বশেষ রসুল হিসেবে। আল্লাহতায়ালা তাঁর ওপর সালাত ও শান্তি বর্ষিত করুন। আল্লাহতায়ালা সুরা আহযাবের ৪৫নং আয়াতে বলেন, ‘হে নবী! আমি আপনাকে পাঠিয়েছি সাক্ষীরূপে এবং সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারীরূপে।’ আল্লাহর অনুমতিক্রমে তাঁর দিকে আহরণকারীরূপে এবং উজ্জ্বল প্রদীপরূপে।
তাঁকে ইসলাম ধর্মসহকারে প্রেরণ করেছেন, যাতে আমাদের পথ আলোকিত হয় এবং আমরা খাঁটি তাওহিদের দিকে চলতে পারি। এর মাধ্যমে আল্লাহর শিরকের ভয়াবহতা ও সে অন্ধকার থেকে বের হয়ে আসতে পারি এবং সৃষ্টির ইবাদত পরিহার করে স্রষ্টার ইবাদতের দিকে ফিরে আসতে পারি। এর পরও কি আমরা আল্লাহ অভিমুখী হব না। আল্লাহতায়ালা আরও বলেন, ‘আমি মানুষ ও জিন জাতিকে আমার ইবাদতের জন্যই সৃষ্টি করেছি।’ (যারিয়াত-৫৬)। তিনি আরও বলেন, ‘আমি আপনার পূর্বে এমন কোনো রসুল প্রেরণ করিনি, যাঁর প্রতি এই ওহি ব্যতীত যে আমি ব্যতীত অন্য কোনো ইলাহ নেই, সুতরাং আমারই ইবাদত কর।’ (সুরা-আম্বিয়া-২৫)। এটা তাওহিদের গুরুত্বের প্রমাণ বহন করে। আর তা হচ্ছে বান্দার ওপর আমাদের হক বা অধিকার। সুতরাং সার্বিক ও ইমানের পথে আমাদের আসতে হবে। ইসলাম সত্য ধর্মসহ এসেছে। যার সম্পর্কে কোনো মুসলমানের সন্দেহ থাকা বৈধ নয়। এটা এমন দীন, যে দীন ছাড়া অন্য কোনো দীনকে আল্লাহতায়ালা গ্রহণ করবেন না। যে ব্যক্তি ইসলাম ছাড়া অন্য কিছু দীন হিসেবে গ্রহণ করবে তার পক্ষ থেকে তা কবুল করা হবে না। দীন এসেছে মানুষের মাঝে কল্যাণ ও সার্বিক নির্দেশনা, মুক্তি ও সফলতা নিয়ে। তাই আমাদের প্রত্যেকের এই দীন অনুসরণ করা আবশ্যক। সুরা মায়েদার ৩নং আয়াত এর সুস্পষ্ট প্রমাণসহ এসেছে রসুল (সা.) মানুষকে অন্ধকার থেকে আলোর পথে আনার জন্য যাতে আল্লাহর অনুমতিক্রমে একটি নতুন জাতি গঠন হয় তার সুস্পষ্ট নির্দেশনাসহ এবং তার মূলনীতি সহকারে। এতে আমরা অজ্ঞতা থেকে বেরিয়ে আসতে পারি। এ বিষয়ে সুস্পষ্ট শিক্ষা হিসেবে নবী করিম (সা.)-এর বক্তব্য হচ্ছে, ‘হে লোক সকল শোন! তোমাদের প্রতিপালক এক, তোমাদের পিতা এক। শোন! আরবের ওপর অনারবির এবং অনারবির ওপর আরবির, কৃষ্ণাঙ্গের ওপর শ্বেতাঙ্গ এবং শ্বেতাঙ্গের ওপর কৃষ্ণাঙ্গের কোনো শ্রেষ্ঠত্ব ও মর্যাদা নেই। শ্রেষ্ঠত্ব ও মর্যাদা আছে কেবল তাকওয়ার কারণেই।’
এ সম্পর্কে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘তোমাকে যা দান করা হয়েছে তা দ্বারা পরকালের গৃহ অনুসন্ধান কর এবং ইহকাল থেকে তোমার অংশ ভুলে যেও না।’ তাই আসুন! আমরা আল্লাহর তাকওয়া অবলম্বন করি। কারণ আল্লাহর বাণী অনুযায়ী আল্লাহভীতির মধ্যে দুনিয়া ও আখেরাতের সব কল্যাণ রয়েছে। যে কেউ আল্লাহর তাকওয়া অবলম্বন করবে আল্লাহ তার জন্য উত্তরণের পথ বের করে দেবেন এবং তিনি তাকে তাদের তাঁর ধারণাতীত উৎস থেকে রিজিক দান করবেন (তালাক-২-৩)। এরপর বাকি কী থাকতে পারে? উপরন্তু তাকওয়া অবলম্বনকারীদের সব সমস্যা সমাধানের পথ করে দেবেন এই জীবন এবং আখেরাতের অনন্ত জীবনের উত্তম আবাসের (তালাক-৪)। হে আল্লাহ! আমাদের প্রত্যেককে তোমার তাকওয়া অবলম্বনের তওফিক দান কর। আমিন।
লেখক : প্রাবন্ধিক