চারদিকে নদীবেষ্টিত খুলনা নগরে বছরজুড়েই সুপেয় পানির তীব্র সংকট। সংকট কাটাতে ওয়াসা হয়েছে, কিন্তু নিরাপদ পানির কষ্ট পিছু ছাড়ছে না নগরবাসীর। বাধ্য হয়ে কিনে পান করতে হচ্ছে পানি। নগরীর প্রায় ৪২ হাজার গ্রাহককে প্রতিদিন সাড়ে আট কোটি লিটার পানি সরবরাহ করছে ওয়াসা। কিন্তু এর বাইরে ৩২ হাজার হোল্ডিং মালিক ওয়াসার পাইপলাইন সংযোগ নেননি। তাঁদের মধ্যে উচ্চবিত্ত অনেকে নলকূপের সঙ্গে সাবমারসিবল পাম্প লাগিয়ে পানি তুলছেন। বাকিরা রয়েছেন তীব্র পানিসংকটে। এ ছাড়া নিম্নবিত্ত বসতি এলাকায় পানিসংকট আরও ভয়াবহ, নিদারুণ ভোগান্তি তৈরি করেছে। সংকট নিরসনে সিটি করপোরেশন বিভিন্ন স্থানে পানির ট্যাংক তৈরি ও গভীর নলকূপকে সাবমারসিবল পাম্পে পরিণত করে জরুরি পানি সরবরাহ করছে। ৪০টি ব্যক্তিমালিকানাধীন কোম্পানি প্রতিদিন ২৮ হাজার জার (প্রতিটি ২০ লিটারে প্লাস্টিকের বোতল) পানি বিক্রি করছে অফিস-আদালত ও বাসাবাড়িতে।
জানা যায়, ৩১টি ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত খুলনা নগরে প্রায় ৭৪ হাজার হোল্ডিংয়ের বাসিন্দা ১৫ লাখের বেশি। দিনদিন এই সংখ্যা বাড়ছে। একই সঙ্গে বাড়ছে পানির চাহিদাও। বর্তমানে নগরীতে প্রতিদিন গড়ে ২৪ কোটি লিটার পানির চাহিদা রয়েছে। কিন্তু পাইপলাইনে মাত্র সাড়ে আট কোটি লিটার পানি সরবরাহ করতে পারছে ওয়াসা। ফলে নগরে বিশুদ্ধ খাওয়ার পানির সংকট নিয়ে ভোগান্তি রয়েই গেছে। প্রতি শুষ্ক মৌসুমে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যায়। তখন নগরীর অধিকাংশ এলাকার গভীর নলকূপে পানি ওঠে না। নতুন সংকট তৈরি হয়। এ সময়টায় সামর্থ্যবানরা পানি কিনে পান করেন। যাদের সামর্থ্য নেই, তাদের দূরদূরান্ত থেকে সুপেয় পানি সংগ্রহ করতে হয়। নগরীর নবপল্লী এলাকায় এবার শুষ্ক মৌসুমের শুরু থেকেই পানির সংকট চরমে পৌঁছেছে। আশপাশের কোথাও নলকূপে পানি উঠছে না। রিকশায় বা পায়ে হেঁটে পানি সংগ্রহ করতে হচ্ছে দূরদূরান্ত থেকে।
নগরের টেকসই উন্নয়নে ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলনের বিষয়ে কঠোর বিধিনিষেধ থাকলেও পানির সংকটের কারণে কিছুটা নমনীয় হয়েছে সিটি করপোরেশন। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে পানির চাহিদা পূরণে সিটি করপোরেশন বিভিন্ন স্থানে পানির ট্যাংক তৈরি ও গভীর নলকূপকে সাবমারসিবল পাম্পে পরিণত করে পানি সরবরাহের কাজ করেছে। কিন্তু তাতেও সংকট কাটেনি। নগরবাসীর পানির সংকট নিরসনে ‘পানি সরবরাহ প্রকল্প, ফেইজ-টু’ হাতে নেওয়ার কথা বলছে খুলনা ওয়াসা। ২০১০ সালের সার্ভে অনুযায়ী খুলনা নগরীতে ‘সুপেয় পানি সরবরাহ প্রকল্প’ বাস্তবায়ন করা হয়। ওই সময় সড়কে-অলিগলির বাসিন্দারা আবেদন না করায় ওয়াসার পাইপলাইনের সংযোগ দেওয়া যায়নি। তখন নগরীতে বাড়িঘরের সংখ্যাও ছিল অনেক কম। প্রায় ১৫ বছরে নগরীতে বসতির সংখ্যা বেড়েছে। সুপেয় পানির চাহিদাও বেড়েছে। এ কারণে ফের ওয়াসা আরও ৮-১০ হাজার হোল্ডিংকে টার্গেট করে ‘পানি সরবরাহ প্রকল্প-ফেইজ টু’ প্রকল্প হাতে নিয়েছে। ইতোমধ্যে সার্ভের কাজ শুরু হয়েছে। এ প্রকল্পের মাধ্যমে সিটি করপোরেশনের বর্ধিত শহরাংশেও ওয়াসার পানির সংযোগ দেওয়ার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। ওয়াসা কর্তৃপক্ষের আশা, প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে নগরবাসীর পানির সংকট আর থাকবে না। কিন্তু শুকনো কথায় চিড়ে ভিজবে না; নগরবাসী ওই আশার কার্যকর বাস্তবায়ন দেখতে চায়।
লেখক : গণমাধ্যমকর্মী