বুধবার, ২৪ অক্টোবর, ২০১৮ ০০:০০ টা

নবম ও দশম শ্রেণির বাংলাদেশের ইতিহাস ও বিশ্বসভ্যতা

সুকুমার মন্ডল, সিনিয়র শিক্ষক

নবম ও দশম শ্রেণির বাংলাদেশের ইতিহাস ও বিশ্বসভ্যতা

সৃজনশীল প্রশ্ন

নবম অধ্যায়

উদ্দীপক : এক সময় নন্দলালপুরের জমিদার আক্তার মোল্লা জোরপূর্বক তার এলাকার কৃষকদের দ্বারা নিজের পছন্দের ফসল চাষ করাত। কৃষকরা এতে ক্ষতিগ্রস্ত হলেও অত্যাচারের ভয়ে মুখ খুলতে পারত না। বেশ কিছু বছর পর সুজন নামের এক কৃষক অন্য কৃষকদের নিয়ে এ ধরনের ফসল চাষের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ শুরু করে। এক সময় আক্তার মোল্লাও কৃষকদের এ দাবি মেনে নিতে বাধ্য হয়।

ক) কত খ্রিস্টাব্দে মজনু শাহ সারা উত্তর বাংলায় ইংরেজবিরোধী তৎপরতা শুরু করেন?

খ) ‘বাংলার ফকির-সন্ন্যাসী আন্দোলন ছিল একটি ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন’—কথাটি বুঝিয়ে বল।

গ) সুজনদের বিদ্রোহের সঙ্গে যে ঐতিহাসিক বিদ্রোহের মিল রয়েছে—তার ব্যাখ্যা দাও।

ঘ) ‘উক্ত আন্দোলনে বাংলার কৃষকদের বিজয়ের অন্তর্নিহিত কারণ পর্যবেক্ষিত হয়’—বিশ্লেষণ কর।

উত্তর : ক) ১৭৭১ খ্রিস্টাব্দে মজনু শাহ সারা উত্তর বাংলায় ইংরেজবিরোধী তৎপরতা শুরু করেন।

খ) বাংলার ফকির-সন্ন্যাসী আন্দোলন ছিল ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন। কারণ এ আন্দোলনের সূত্রপাত হয় আঠারো শতকের শেষার্ধে। মীর কাশিমের আহ্বানে সাড়া দিয়ে ফকির-সন্ন্যাসীরা ইংরেজদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে। এ ছাড়া ব্রিটিশরা সন্ন্যাসী ও ফকিরদের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করে। ফলে ক্ষুব্ধ ফকির-সন্ন্যাসীরা ইংরেজদের বিরুদ্ধে দীর্ঘ আন্দোলনে অবতীর্ণ হয়। তাই বলা যায়, ফকির-সন্ন্যাসী আন্দোলনই ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন।

গ) উদ্দীপকের আক্তার মোল্লা জোরপূর্বক নিজ পছন্দের ফসল চাষ করাতে গিয়ে কৃষকদের বিরাগভাজন হয়। পরবর্তী সময় সুজন নামের এক কৃষক এ ধরনের ফসল চাষের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে। তেমনি পাঠ্য বইয়ে নীল চাষের যে চিত্র আমরা দেখতে পাই তাতে দেখা যায় কৃষকরা তাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে নীল চাষ করছে। নীল চাষে কৃষকরা রাজি না হলে তাদের ওপর অত্যাচার চালানো হতো। পরবর্তী সময় কৃষকরা নীল চাষে অপারগতা প্রকাশ করে বিদ্রোহ করে। ইতিহাসে যা নীল বিদ্রোহ নামে পরিচিত। অতএব, উদ্দীপকটি নীল বিদ্রোহেরই প্রতিচ্ছবি। ১৭৭০ থেকে ১৭৮০ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে ইংরেজ আমলে বাংলাদেশে নীল চাষ শুরু হয়। কৃষকদের নীল চাষের জন্য অগ্রিম অর্থ গ্রহণে বাধ্য করা হতো। নীল চাষে কৃষকরা রাজি না হলে তাদের ওপর চরম অত্যাচার চালানো হতো। জিনিসপত্রের মূল্য বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে নীল চাষের খরচও বৃদ্ধি পায়। তা ছাড়া প্রথম দিকে বিনামূল্যে নীল বীজ পেলেও পরের দিকে তা-ও বন্ধ হয়ে যায়। উপযুক্ত বঞ্চনার হাত থেকে চাষিদের বাঁচার কোনো উপায় ছিল না। আইন ছিল তাদের নাগালের বাইরে। কারণ নীলকরেরা কিংবা তাদের স্বদেশি বন্ধুরা ম্যাজিস্ট্রেট পদে নিয়োগ পেতেন। ফলে নীলচাষিরা ১৮৫৯ খ্রিস্টাব্দে প্রচণ্ড বিদ্রোহে ফেটে পড়ে। কৃষকের এ আন্দোলনের ফলে ১৮৯২ খ্রিস্টাব্দে এ দেশে নীল চাষ চিরতরে বন্ধ হয়ে যায়।

ঘ) বাংলার কৃষকরা এ ধরনের একটি সংগ্রামে বিজয়ী হয়েছিল। কারণ উদ্দীপকে আমরা দেখতে পাই জমিদার আক্তার মোল্লা কৃষকদের দাবি মেনে নিতে বাধ্য হয়। তদ্রূপ ইংরেজরা নীল চাষ বন্ধ করতে বাধ্য হয়। কিন্তু এর পেছনে কিছু অন্তর্নিহিত কারণ ছিল। পাঠ্য বই অনুসরণে নীল বিদ্রোহে কৃষকদের বিজয়ের কারণ বিশ্লেষণ করা হলো : ১৮৫৯ খ্রিস্টাব্দে কৃষকরা নীল চাষের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে। গ্রামে কৃষক সংগঠিত ও ঐক্যবদ্ধ হতে থাকে। এসব বিদ্রোহের নেতৃত্ব দেয় নীলচাষিরা। স্থানীয় পর্যায়ের এ নেতৃত্বে বাংলায় কৃষক বিদ্রোহের আগুন জ্বলে ওঠে। কৃষকরা নীল চাষ না করার পক্ষে দৃঢ় অবস্থান নেয়। এমনকি তারা ইংরেজ ম্যাজিস্ট্রেটের উপদেশও অগ্রাহ্য করে। শিক্ষিত মধ্যবিত্ত শ্রেণি নীলচাষিদের প্রতি সহানুভূতিশীল মনোভাব প্রকাশ করতে থাকে। বিভিন্ন পত্রিকায় নীলকরদের অত্যাচারের কাহিনী ছাপা হতে থাকে। দীনবন্ধু মিত্রের লেখা ‘নীল দর্পণ’ নাটকের কাহিনী চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। শেষ পর্যন্ত ১৮৬১ খ্রিস্টাব্দে ব্রিটিশ সরকার নীল কমিশন গঠন করে। এ কমিশনের সুপারিশে নীল চাষকে কৃষকের ইচ্ছাধীন বলে ঘোষণা করা হয়। ফলে বাংলার কৃষকদের বিজয় অর্জিত হয়।

সর্বশেষ খবর