শনিবার, ১ জুন, ২০১৯ ০০:০০ টা
মেজবাহ্-উল-হক, লন্ডন থেকে

মাঠেই কাটবে টাইগারদের ঈদ

মাঠেই কাটবে টাইগারদের ঈদ

ফাইল ছবিতে মাশরাফির ঈদ। কিন্তু দেশে নয়, এবার লন্ডনে কাটবে টাইগার দলপতির ঈদ

লন্ডনের ওভাল স্টেডিয়ামে বাংলাদেশের প্রথম ম্যাচ দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে, ২ জুন। একই মাঠে পরের ম্যাচ। ৫ জুন নিউজিল্যান্ডের মুখোমুখি হবে টাইগাররা। প্রথম দুটি ম্যাচ নিয়ে খানিকটা বেশি উজ্জীবিত বাংলাদেশ। কেননা এই ম্যাচের মধ্যে অন্তত একটাতে জিতবে হবে। সেমিফাইনালে খেলার আশা করলে জয়ের বিকল্প নেই।

বাংলাদেশ দল চাইছে প্রথম ম্যাচেই জয় তুলে নিতে। প্রথম ম্যাচে জয় মানসিকভাবে চাঙ্গা রাখে। পুরো টুর্নামেন্টে ভালো খেলতে সহায়তা করে। তবে কোনো কারণে দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে না জিততে পারলে তখন নিউজিল্যান্ডই টার্গেট। নিউজিল্যান্ড আমাদের প্রিয় প্রতিপক্ষ। তাদেরকে অনেকবার হারানোর মধুর স্মৃতি আছে।

মজার বিষয় হচ্ছে, বাংলাদেশ যেদিন নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে খেলতে মাঠে নামবে সেদিন সম্ভবত ঈদের দিন। মুসলমানদের সবচেয়ে বড়ু ধর্মীয় উৎসব ঈদুল ফিতর। এমন বিশেষ দিনটি ওভালের মাঠেই কাটবে টাইগারদের। এ নিয়ে ক্রিকেটারদের মধ্যে কোনো আক্ষেপ নেই। বরং ঈদুল ফিতরের দিনে ম্যাচ আছে বলে কেউ ভীষণ এক্সসাইটেড। জিতে বিশেষ দিনটিকে বিশেষভাবে সেলিব্রেশন করার চিন্তাও করছেন ক্রিকেটাররা। ভারতের বিরুদ্ধে ম্যাচের আগের দিন বিশ্বকাপ চলাকালীন ঈদ কেমন কাটবে তা নিয়ে কার্ডিফে কথা হয় মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত ও সাব্বির রহমানের সঙ্গে।

বাংলাদেশ প্রতিদিনকে মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত বলেন, ‘আগে কখন এমনভাবে দেশের বাইরে ঈদ কাটাইনি। এবার তো ঈদের দিন আমাদের খেলতেও হবে। সত্যি বলতে এই ফিলিংস অন্যরকম। ভাষায় প্রকাশ করা যাবে। আগে ঈদের বন্ধুদের সঙ্গে ঘুরতাম, আর এবার মাঠে দেশের জন্য খেলব। সব মিলে বিষয়টা নিয়ে ভাবতে ভালোই লাগছে।’

ঈদের দিনে বিশ্বকাপের ম্যাচ খেলাটাকে কেউ কেউ সৌভাগ্যের বিষয় বলেও মনে করছেন। কারণ এমন সুযোগ কয়জনের ভাগ্যে জোটে। এমনিতে বিশ্বকাপের মতো টুর্নামেন্টে অংশ নেওয়াটাই বিশাল ব্যাপার। সেখানে কাকতালীয়ভাবে এমন ঘটনা ঘটতে যাচ্ছে যে, মুসলমানদের সবচেয়ে আনন্দের খেলতে হবে। তাই এবারের ঈদটা ক্রিকেটারদের কাছে মাইলফলক হয়ে থাকবে।

সাব্বির রহমান বলেন, ‘এটা স্পেশাল ঈদ হবে। ওই দিন নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে খেলা থাকবে। ওদের হারিয়েই আমরা ঈদের উৎসব উদযাপন করতে চাই। তবে ঈদের দিন খেলা নিয়ে আমার অন্যরকম অনভূতি হচ্ছে।’

ইংল্যান্ডে এখন চলছে গ্রীষ্ম কাল। দিন অনেক লম্বা। এই ১৮-১৯ ঘণ্টার রোজাও রাখছেন বাংলাদেশ দলের বেশ কয়েকজন ক্রিকেটার। লম্বা সময় রোজা রেখেই তারা ক্রিকেটের অনুশীলন করছেন। তবে কোনো ক্রিকেটার রোজা রাখবেন কি রাখবেন না এটা তার নিজস্ব ব্যাপার, এ নিয়ে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের কোনো নির্দেশনা নেই। যারা রোজা রাখছেন তারা যেন কষ্ট না পান এ জন্য অধিনায়ক মাশরাফিও আপ্রাণ চেষ্টা করছেন তাদের আপ্যায়নের জন্য। সাহরিতে যাতে তারা ঠিক মতো খাবার খেতে পায় সে জন্য আগেই অর্ডার দিয়ে খাবার রুমে নিয়ে এসে রাখছেন। ইফতারেও থাকছে ভালো আয়োজন। টাইগারদের রোজা রাখা সম্পর্কে ক্যাপ্টেন মাশরাফির বক্তব্য, ‘ইংল্যান্ডে এই সময় রোজা রাখা এমনই কঠিন। অনুশীলনের মতো কঠোর পরিশ্রম করে রোজা রাখা তো আরও কঠিন। তারপরও যদি কেউ সব কিছু ঠিকঠাক মতো করতে পারে আমার আপত্তি  নেই। আমি শুধু সবাইকে একটা কথাই বলেছি, আমরা এখন দেশের জন্য খেলছি। সব সময় শতভাগ দিয়েই চেষ্টা করতে হবে।’

যারা রোজা রেখে অনুশীলন করছেন, খেলছেন, তাদের ঈদ নিয়ে অনুভূতিই যেন অন্যরকম। নিয়মিত রোজা রাখছেন এমন একজন ক্রিকেটার ঈদের কথা বলতে গিয়ে বেশ উচ্ছ্বসিত হয়ে উঠলেন, ‘সত্যি ভাবতেই অবাক লাগছে! ঈদে আমাদের খেলতে হবে। এটা খুবই সৌভাগ্যের বিষয়। খুবই আনন্দের বিষয়। দেশে সবাই যেদিন আনন্দ করবে, সারা পৃথিবীর মুসলমানরা আনন্দ করবে, আর আমরা এখানে চেষ্টা করব দেশের মানুষের আনন্দের মাত্রা বাড়িয়ে দিতে পারি নিউজিল্যান্ডকে হারিয়ে। তবে এখনো তো নির্ধারিত হয়নি, খেলা আসলে ঈদের দিন হবে কিনা। তবে হলে আমাদের অনেক ভালো লাগছে। ঈদের দিন বিশ্বকাপ খেলার একটা বিরল অভিজ্ঞতা হবে। এটা আসলে ভাবতেই ভালো লাগছে।’

বাংলাদেশের বিশ্বকাপ দলে ১৫ সদস্যের মধ্যে কেবল মাত্র সৌম্য সরকার ও লিটন কুমার দাস ছাড়া সবাই মুসলমান। অবশ্য এখন ঈদের আনন্দটা এতটাই সার্বজনীন হয়ে গেছে যে জাতি ধর্ম ভেদাভেদ নেই, যেন সবারই জন্যই আনন্দের। তাই ঈদের দিনটা বিশেষভাবে সেলিব্রেশন করার জন্য মুখিয়ে রয়েছেন ক্রিকেটাররা। ভারতের বিরুদ্ধে প্রস্তুতি ম্যাচের আগের দিন সকালে কার্ডিফের সোফিয়া গার্ডেনে অনুশীলনে তখন ব্যস্ত ছিলেন বাংলাদেশ দলের ক্রিকেটাররা। ভীষণ মনোযোগ দিয়ে শিষ্যদের অনুশীলন পর্যবেক্ষণ করছেন কোচ স্টিভ রোডস। সেখানেই টাইগারদের গুরু স্টিভ রোডসের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল বাংলাদেশিদের প্রধান উৎসব তো ঈদ, যদি ঈদে ক্রিকেটারদের খেলতে হয়, তারা কি শতভাগ উজাড়ু করে দিতে পারবেন! রোডস প্রথমে ঈদের বিষয় বুঝতেই পারলেন না! দ্বিতীয়বারের চেষ্টা বোঝানো সম্ভব হলো। টাইগার কোচ জানালেন, ‘এখানে যারা খেলছে সবাই পেশাদার ক্রিকেটার। আর পেশাদারদের সব কিছুর জন্যই প্রস্তুত থাকতে হয়। আমার মনে হয় না, কারও মনে কোনো প্রভাব পড়ুবে। তবে ঈদের দিন খেলা হলে, জিতে সবাই সেলিব্রেশন করতে পারে। তাতে বরং আনন্দের মাত্রা আরও বাড়ুবে।’

সাব্বির রহমান বলেন, ‘এটা স্পেশাল ঈদ হবে। ওই দিন নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে খেলা থাকবে। ওদের হারিয়েই আমরা ঈদের উৎসব উদযাপন করতে চাই। তবে ঈদের দিন খেলা নিয়ে আমার অন্যরকম অনভূতি হচ্ছে।’ ইংল্যান্ডে এখন চলছে গ্রীষ্ম কাল। দিন অনেক লম্বা। এই ১৮-১৯ ঘণ্টার রোজাও রাখছেন বাংলাদেশ দলের বেশ কয়েকজন ক্রিকেটার। লম্বা সময় রোজা রেখেই তারা ক্রিকেটের অনুশীলন করছেন।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর