শনিবার, ১১ মার্চ, ২০১৭ ০০:০০ টা

অন্যরকম গল্পে আলমগীর

শোবিজ প্রতিবেদক

অন্যরকম গল্পে আলমগীর

‘আলমগীরের মাঝে সব সময় নায়কোচিত বিষয় কাজ করে যেমন—তার বাচনভঙ্গি, পোশাক-আশাক, সর্বোপরি তার উচ্চতা যা সত্যিই দর্শকদের সহজেই আকৃষ্ট করে। আমি মনে করি এই প্রজন্মের নতুন নায়কদের তাকে অনুসরণ করা উচিত।’ চিত্রনায়ক আলমগীরকে নিয়ে এমনই দৃষ্টিভঙ্গি অভিনেত্রী কবরীর।

একেবারেই স্বতন্ত্র অভিনয় শৈলীর কারণে চলচ্চিত্রে একটি আলাদা অবস্থান তৈরি করতে পেরেছিলেন আলমগীর। যা আজও অটুট রয়েছে। গুণী এই চলচ্চিত্রাভিনেতা আগের মতো চলচ্চিত্রে নিয়মিত না হলেও গল্প এবং চরিত্র পছন্দ হলে অভিনয় করেন। আলমগীর বলেন, ‘স্ক্রিপ্টবিহীন কোনো ছবিতে আমি কাজ করি না। আমার কাছে বাঁধাই করা স্ক্রিপ্ট নিয়ে এলে তা পড়ে যদি আমার ভালোলাগে তবেই সেই ছবিতে অভিনয় করি।’

আলমগীর অভিনীত প্রথম চলচ্চিত্র ‘আমার জন্মভূমি’ [১৯৭২]।  ১৯৮৫ সালে তিনি ‘মা ও ছেলে’ ছবিতে অভিনয়ের জন্য প্রথম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন। এরপর ১৯৮৭, ১৯৮৯, ১৯৯০, ১৯৯১, ১৯৯২, ১৯৯৪, ২০১০ ও ২০১১ সালে একই সম্মানে ভূষিত হন। ১৯৮৬ সালে তিনি প্রথম ‘নিষ্পাপ’ ছবি নির্মাণের মধ্য দিয়ে পরিচালক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন। তার নির্দেশনায় নির্মিত সর্বশেষ ছবি হচ্ছে ‘নির্মম’। এ পর্যন্ত ছয়টি ছবি নির্মাণ করেছেন তিনি। তার দীর্ঘ চলচ্চিত্রের ক্যারিয়ারে সংগীতশিল্পী হিসেবেও চলচ্চিত্রে গান গেয়েছেন। ‘আগুনের আলো’ ছবিতে প্রথম প্লেব্যাক করেন। এরপর কার পাপে, ঝুমকা ও নির্দোষ ছবিতেও প্লেব্যাক করেন আলমগীর।

সম্প্রতি আবারও চলচ্চিত্র নির্মাণের ঘোষণা দিয়েছেন এই চলচ্চিত্রকার। তার এবারের চলচ্চিত্রের শিরোনাম ‘একটি সিনেমার গল্প’। তার কথায় কলকাতার সঙ্গে যৌথ প্রযোজনায় ছবিটি নির্মাণ হবে। দীর্ঘ বিরতি দিয়ে আবার নির্মাণে ফেরা প্রসঙ্গে আলমগীরের বক্তব্য—‘আমাদের সিনেমা এখনো একটি বৃত্তে বন্দী হয়ে আছে। যেমন ধনী-গরিবের দ্বন্দ্ব, পিতা-মাতার হত্যার প্রতিশোধ পরায়ণ হয়ে ওঠা ইত্যাদি। আসলে এই বৃত্ত ভাঙতেই হবে। না হলে দর্শকদের সিনেমাহলে ফেরানো যাবে না। আমার এই ছবি দিয়ে সেই রকমেরই একটি চেষ্টার শুরু হবে।’ অভিনয়ে অনিয়মিত কেন? এমন প্রশ্নে তার কথায়— ‘ভালো গল্প চাই। সম্প্রতি ‘ঢাকা অ্যাটাক’ শিরোনামের একটি ছবিতে কাজ করলাম। ভালো গল্প ও চরিত্র পেলে কেন অভিনয় করব না। আমাদের চলচ্চিত্রে কিছু সমস্যা হলো, আমি, রাজ্জাক ভাই, ফারুক আমরা যারা একসময় নায়ক ছিলাম, বয়সের কারণে আমরা তো এখন আর নায়ক নই; কিন্তু গল্পের নায়ক হওয়ার মতো ম্যাচিউরিটি আমাদের সবার আছে। আমাদের নিয়ে এমন নিরীক্ষামূলক ছবি এখন কে নির্মাণ করবেন? না আছে সে রকম পরিচালক, না আছে চিত্রনাট্যকার। অথচ পাশের দেশ ভারতে উত্তমকুমার, সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, অমিতাভ বচ্চনকে কেন্দ্র করে প্রচুর ছবি হয়েছে।’

চলচ্চিত্রে প্রাপ্তি কেমন? এ কথায় অনেকটা সিরিয়াস হয়ে ওঠেন এই অভিনেতা-নির্মাতা। ‘মানুষের হাততালি তো আছেই। আসলে সেই অর্থে একজন অভিনেতার কখনো প্রাপ্তি হয় না, প্রকৃত অভিনেতার মন থেকে কখনো তৃপ্তি আসে না। কারণ, অভিনয়ের আকাশ এক জনমে ভরাট করা যায় না। সেই দিক থেকে বলব আমার প্রাপ্তি বলে কিছু নেই। এক ধরনের পাগলামি ছিল। কী পেলাম বা পেলাম না, এসব নিয়ে কখনো ভাবিনি। অর্থটা কোনো দিন মুখ্য ছিল না আমার কাছে। মনের তাগিদে অভিনয় করতাম।’ কণ্ঠে কিছুটা ক্ষোভ ঝেড়ে এই সফল অভিনেতা বলেন, ‘জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে পার্শ্ব অভিনেতা বলে কিছু নেই। আসলে অভিনেতা তো অভিনেতাই। এটি হওয়া উচিত শ্রেষ্ঠ অভিনেতা প্রধান চরিত্রে, শ্রেষ্ঠ অভিনেতা পার্শ্ব চরিত্রে। হলিউডে এভাবেই পুরস্কার দেওয়া হয়। তাই পুরস্কারের নামগুলো সংশোধন করা উচিত।’

চলচ্চিত্রের দৈন্যদশা নিয়ে বলতে গিয়ে কিছুটা আবেগাপ্লুত হয়ে এই চলচ্চিত্রকার বলেন, আমাদের চলচ্চিত্রে অবক্ষয় শুরুর পেছনে পরিচালকদের দায় অনেক।

এটি মূলত ডিরেক্টরস মিডিয়া। পরিচালকের কথাই এখানে চূড়ান্ত। তবে পরিচালকরা যেদিন থেকে প্রযোজকদের বশ্যতা স্বীকার করে তাদের আনুগত্য মেনে নিয়েছেন, আমাদের চলচ্চিত্র যখন প্রডিউসারস মিডিয়ায় পরিণত হয়েছে সে দিন থেকেই অবক্ষয়ের শুরু। নির্মাতা আলমগীর বললেন, আমার মতে, চলচ্চিত্র পরিচালক হচ্ছেন ক্যাপ্টেন অফ দ্য শিপ। যখন দেখি, চলচ্চিত্র পরিচালকদের মন্দ হাল, তখন বড় কষ্ট হয়।

এই কষ্ট থেকেই আমি চলচ্চিত্রে অভিনয় আপাতত ছেড়ে দিয়েছি।

কণ্ঠে ক্ষোভ ঝরিয়ে তিনি বললেন, ‘এখন ঢালিউডে শেখানোর মতো মানুষের সংখ্যা কম। নতুন অভিনয় শিল্পীরা আসছে, তাদের মধ্যে শেখার আগ্রহ তৈরি করে দিতে হবে, ভিতর থেকে জাগিয়ে দিতে হবে। সেই মানুষগুলো কোথায়? দেখছি না তো। একজন অভিনেতাকে প্রচুর পড়াশোনা করতে হয়। তাকে অভিনয় তত্ত্ব জানতে হয়। না হলে প্রকৃত অভিনেতা হয়ে ওঠা কখনো সম্ভব নয়।

অভিযোগের সুরে এই চলচ্চিত্রকার  বললেন, অনেকেই কিছু না শিখে চলচ্চিত্র পরিচালনায় আসছেন। অভিনেতা-অভিনেত্রী বা অন্যান্য সেক্টরের কলাকুশলী হতে গেলে তো শিখে আসতে হবে। এত কষ্ট তারা কেন করতে যাবে? তারা বুঝে গেছে, সবচেয়ে সোজা কাজ হচ্ছে চলচ্চিত্র পরিচালনা করা। তাদের মতে, চলচ্চিত্র পরিচালকদের কাজ হলো শুধু অ্যাকশন-কাট বলা। নিজের অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, চলচ্চিত্রে অভিনয় করতে এলে কোনো কিছু পাওয়ার আশা না করে আসাই উত্তম। চলচ্চিত্রে এলে কেবল দিতেই হবে, তা ভেবেই চলচ্চিত্রে আসতে হবে। চলচ্চিত্র থেকে ফিরে পাওয়ার আশা না করাই ভালো।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর