শুক্রবার, ২৫ অক্টোবর, ২০১৯ ০০:০০ টা
চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নির্বাচন

আজ মুখোমুখি মিশা-মৌসুমী-জায়েদ-কোবরা

আলাউদ্দীন মাজিদ

আজ মুখোমুখি মিশা-মৌসুমী-জায়েদ-কোবরা

বহুল আলোচিত বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির দ্বিবার্ষিক নির্বাচন আজ। ২০১৯-২১ মেয়াদের এই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এবার মাত্র ১টি প্যানেল নির্বাচনে অংশ নিয়েছে। এটি হচ্ছে মিশা-জায়েদ প্যানেল। সভাপতি পদে লড়াই করছেন চিত্রনায়িকা মৌসুমী ও খলনায়ক মিশা সওদাগর। সহ-সভাপতির দুটি পদে প্রার্থী হয়েছেন মনোয়ার হোসেন ডিপজল, রুবেল ও নানা শাহ। সাধারণ সম্পাদক পদে জায়েদ খানের প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী ইলিয়াস কোবরা। সহ-সাধারণ সম্পাদক পদে লড়ছেন আরমান ও সাংকো পাঞ্জা। সাংগঠনিক সম্পাদক পদে অভিনেতা সুব্রত, দফতর ও প্রচার সম্পাদক পদে জ্যাকি আলমগীর এবং কোষাধ্যক্ষ পদে অভিনেতা ফরহাদের কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী নেই। অর্থাৎ সুব্রত, জ্যাকি আলমগীর এবং ফরহাদ বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক পদে লড়ছেন নূর মোহাম্মদ খালেদ ও ইমন। সংস্কৃতি ও ক্রীড়া সম্পাদক পদে লড়ছেন জাকির হোসেন ও ডন। কার্যকরী পরিষদ সদস্যের ১১টি পদের জন্য প্রার্থী হয়েছেন ১৪ জন। তারা হলেন- অঞ্জনা সুলতানা, রোজিনা, অরুণা বিশ্বাস, আলীরাজ, আফজাল শরীফ, বাপ্পারাজ, রঞ্জিতা, আসিফ ইকবাল, আলেকজান্ডার বো, জেসমিন, জয় চৌধুরী, নাসরিন, মারুফ আকিব ও শামীম খান (চিকন আলী)। এফডিসিতে এই ভোট গ্রহণ করা হবে। সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত ভোট গ্রহণ চলবে। মধ্যে অবশ্য জুমার নামাজের জন্য বেলা ১টা থেকে এক ঘণ্টা বিরতি থাকবে। এবার মোট ভোটারের সংখ্যা ৪৪৯ জন। প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন অভিনেতা ইলিয়াস কাঞ্চন। অন্যদিকে চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির এই নির্বাচনকে ঘিরে উত্তপ্ত ছিল এফডিসি। ২০১৭ সালের ৫ মে চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সর্বশেষ নির্বাচন হয়। নির্বাচনে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে মিশা-জায়েদ প্যানেল পাস করে। কমিটি গঠনের কিছুদিন পর ওমর সানী-অমিত হাসান প্যানেল থেকে বিজয়ী কার্যকরী পরিষদের সদস্য মৌসুমী ও নানা শাহ পদত্যাগ করলে কমিটির দুটি পদ শূন্য হয়। পরবর্তীকালে সমিতির কার্যনির্বাহী সংসদের মিটিংয়ে পাস করার মধ্য দিয়ে ওই দুটি পদে নিপুণ ও নিরবকে নেওয়া হয়। এবারের নির্বাচনে গতবারের বিজয়ী রিয়াজ, ফেরদৌস, পূর্ণিমা, পপি, নিপুণ, নিরব, সাইমন সাদিক নেই। ফেরদৌস বলেন, ‘আমি বলেছিলাম নির্বাচন ১৮ অক্টোবর থেকে কয়েকদিন পিছিয়ে দিতে। কিন্তু সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ ১২-১৩ জন মিলে পিছালেন না। পরে ঠিকই কিন্তু পিছিয়ে ২৫ অক্টোবর করা হয়েছে। অথচ নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা পুরো ২১ সদস্যের কমিটির বাইরে করতে পারেন না তারা।’ রিয়াজ বলেন, যে অশ্লীলতার কারণে সিনেমা ছেড়ে শিল্পীদের জন্য কাজ করতে সমিতিতে এসেছিলাম, এখানে এসে সেই একই রকম দূষিত পরিবেশ  দেখতে পাচ্ছি।’ পপি বলেন, ‘কেউ কেউ প্যানেল প্রস্তুত করেই নিজের মতো করে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করে দিয়েছেন। অন্যদের প্যানেল গোছানোর সময়ই দেওয়া হয়নি। এবারের নির্বাচনে অনেক শিল্পী ভোটাধিকার হারিয়ে সহযোগী সদস্য হয়েছেন। এ কারণে তারা ভোট প্রয়োগ করতে পারবেন না বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। গঠনতন্ত্র তোয়াক্কা না করেই নতুন সদস্য নেওয়ার অভিযোগ তুলেছেন তারা বিদায়ী কমিটির দিকে। অন্যদিকে অভিযোগের বিষয়টি অস্বীকার করেছেন বিদায়ী শিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদক জায়েদ খান। জানা গেছে, গত নির্বাচনে শিল্পী সমিতির মোট ভোটার সংখ্যা ছিল ৬২৪ জন। মিশা সওদাগর-জায়েদ খান প্যানেল বিজয়ী হওয়ার পর এ তালিকা থেকে ১৮১ জন ভোটারের ভোটাধিকার খর্ব করে কেবল সহযোগী সদস্য করা হয়েছে। যারা এবার ভোট দেওয়ার অধিকার পাবেন না। অন্যদিকে নতুন করে ২০ জন শিল্পীকে করা হয়েছে নতুন ভোটার। বাদ পড়া অনেক ভোটার বলছেন গঠনতন্ত্রের ধারা অনুযায়ী আমাদের বাদ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু নতুন করে যারা ভোটার হয়েছেন তারা আমাদের চেয়ে বেশি সিনেমায় কাজ করেননি। কিন্তু আমাদের সিনেমার তালিকা দেখলে বোঝা যাবে কারা শিল্পী আর কারা শিল্পী নয়।

গত ৪ অক্টোবর বিএফডিসির জহির রায়হান কালার ল্যাব মিলনায়তনে দুই বছরের সভা একসঙ্গে আয়োজন করা হয়। এই সভা নিয়েও ওঠে বিতর্ক। এখানে দুই বছরের আয়-ব্যয়সহ বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নানা কার্যক্রম তুলে ধরা হলেও সে আয়-ব্যয় নিয়ে কমিটির গত মেয়াদের সহ-সভাপতি অভিনেতা রিয়াজকে কথা বলার সুযোগ দেওয়া হয়নি। চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির বর্তমান কমিটির  মেয়াদ শেষ হয়েছে গত ২৪ মে। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী নির্বাচন হওয়ার কথা ছিল আগস্ট মাসে। সমিতির গঠনতন্ত্রের ৮ নম্বর অনুচ্ছেদের (চ)-এ আছে, ‘পূর্ববর্তী কার্যকরী পরিষদের মেয়াদান্তে অতিরিক্ত ৯০ দিনের মধ্যে অবশ্যই নির্বাচন হইতে হইবে।’ সে হিসাবে ২৪ আগস্টের মধ্যে ২০১৯-২০-এর নির্বাচন হওয়ার কথা থাকলেও সমিতির বিদায়ী সাধারণ সম্পাদক জায়েদ খান বলেন, ‘গঠনতন্ত্র অনুযায়ী আগস্টের মধ্যেই নির্বাচন হওয়ার কথা। কিন্তু আগস্ট শোকের মাস। তাই এক মাস পিছিয়ে সেপ্টেম্বর মাসে নির্বাচন হতে পারে।’ এদিকে সর্বশেষ এফডিসিতে নির্বাচনে স্বতন্ত্র সভাপতি প্রার্থী অভিনেত্রী মৌসুমীকে অপমান করার মতো ঘটনাও ঘটেছে। এসব ঘটনায় নির্বাচনী আমেজ-উৎসব এখন আতঙ্কে পরিণত হয়েছে বলে উদ্বেগের সঙ্গে জানাচ্ছেন সাধারণ শিল্পীরা। এই তর্ক-বিতর্ক চললেও সুষ্ঠু-সুন্দর পরিবেশে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আশা করছে সবাই। আসবে নতুন নেতৃত্ব- এমন প্রত্যাশা প্রার্থী-ভোটার এবং চলচ্চিত্রকারদের।

সর্বশেষ খবর