শুক্রবার, ১০ জুলাই, ২০২০ ০০:০০ টা

গানের জগতে আবদুল আলীম পরিবার

গানের জগতে আবদুল আলীম পরিবার

বাঁ থেকে আজগর আলীম, নূরজাহান আলীম ও জহির আলীম

বাংলাদেশের লোকসংগীতের প্রাণপুরুষ, লোকসংগীতের মুকুটহীন সম্রাট, মরমি শিল্পী আবদুল আলীম। সারা বিশ্বে বাবার গান ফেরি করে বেড়াচ্ছেন তার তিন সন্তান জহির আলীম, আজগর আলীম ও নূরজাহান আলীম। গুণী এই পরিবারকে নিয়ে লিখেছেন- আলী আফতাব

 

বাবার গাওয়া জনপ্রিয় গানগুলোর মোহনীয় সুরের ইন্দ্রজালে এখনো দর্শক-শ্রোতাদের মোহাবিষ্ট করে রাখেন তার সুযোগ্য পুত্র-কন্যারা। সংগীতবোদ্ধাদের কথায় পুত্র-কন্যারাই পারবেন বাবার গানগুলো সবার মধ্যে ছড়িয়ে দিয়ে অমর করে রাখতে। আবদুল আলীমের বড় ছেলে জহির আলীম বাংলাদেশ বেতার ও টেলিভিশনের একজন তালিকাভুক্ত কণ্ঠশিল্পী এবং দেশের একমাত্র সংগীত প্রতিষ্ঠান সরকারি সংগীত কলেজের লোকসংগীত বিভাগের শিক্ষক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। মূলত তিনি তার বাবার গাওয়া গানগুলো গেয়েই দেশ-বিদেশে বিপুল জনপ্রিয়তা পেয়েছেন। এ পর্যন্ত পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে আমাদের লোকসংগীতকে পৌঁছে দিয়েছেন তিনি। বাবাকে নিয়ে তিনি বলেন, ‘আবদুল আলীম আমার বাবা-তার চেয়েও বড় তিনি কিংবদন্তির একজন লোকসংগীত শিল্পী এবং জাতীয় সম্পদ। তার সবকিছুই আমরা উন্মুক্ত করে দিয়েছি। এরই মধ্যে বাবার কিছু গান নতুনভাবে করার প্রস্তুতি নিচ্ছি। কিন্তু করোনার কারণে এখন কাজগুলো বন্ধ আছে। এছাড়া আবদুল আলীম ফাউন্ডেশন থেকে বাবার গানগুলো সারা দেশে ছড়িয়ে দেওয়ার একটি বিশেষ পরিকল্পনা আছে আমাদের।’ আবদুল আলীমের অরেক পুত্র আজগর আলীম। গানের পাশাপাশি খুব ভালো তবলা বাজান তিনি। আগে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে বড় ভাইয়ের সঙ্গে তবলায় সহযোগিতা করেন তিনি। বাবাকে নিয়ে বলতে গিয়ে আজগর আলীম বলেন, ‘আবদুল আলীম যখন গাইতেন বাংলাদেশের মাঠের মানুষ, নদীর মানুষ, শ্রমজীবী মানুষ, নিম্নবিত্ত, মধ্যবিত্ত সব কান পেতে শুনতেন। তার কণ্ঠ, সুর ভেসে বেড়াত বাংলার আকাশে-বাতাসে। আবদুল আলীম বাংলাদেশকে সুর দিয়ে মাতিয়ে রেখেছিলেন। সেই সময় কোনো একটি রেস্টুরেন্টে, হাটে, মাঠে, ঘাটে, জনপদে গিয়ে যদি বলতেন, এই আবদুল আলীমের ছেলে জহির, এই আবদুল আলীমের ছেলে আজগর, জানি না তখনকার দিনে কি হতো। বহির্বিশ্বে আমরা যাকে নিয়ে অহংকার করতে পারি, যার গান আমাদের রুট, আমাদের মা-মাটি-দেশের কাছাকাছি নিয়ে যায়, তিনি শিল্পী আবদুল আলীম।’

এই মহান গুণী শিল্পীর সুযোগ্য পুত্রদ্বয় ও কন্যা বাবার গানকে অমর করে রাখতে যে নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন তাতে আমরা অত্যন্ত আনন্দিত ও গর্বিত। আবদুল আলীমের বিখ্যাত গানের মধ্যে অন্যতম হলো- ‘হলুদিয়া পাখি’, ‘সোনারই বরণ পাখিটি ছাড়িল কে’, ‘পরের জায়গা পরের জমিন ঘর বানাইয়া আমি রই’, ‘দুল দুল দুলুনি, রাঙা মাথার চিরুনি’, ‘চিরদিন পুষলাম এক অচিন পাখি’, ‘দয়া করে এসো দয়াল, এসো এই অধীনের হৃদ মাঝারে,’ ‘মনে বড় আশা ছিল যাব মদিনায়’, ‘আল্লাহু আল্লাহু তুমি জাল্লে জালালুহু’ ইত্যাদি। সেই মাটির সুর, যে সুর হেলেদোলে গলায় এসে মনে নামায় শান্তির ছায়া। বাংলা গানের পরশমণি লোকসংগীত। আর সেই লোকসংগীতের কিংবদন্তি গায়ক শ্রদ্ধেয় আবদুল আলীম। এই পল্লীসাধক আবদুল আলীমের সুযোগ্য কন্যা সুমধুর কণ্ঠশিল্পী নূরজাহান আলীম তার বাবার গান নতুন আঙ্গিকে প্রকাশ করছেন। বাড়িতে সবাই টুনি নামে ডাকলেও তার আসল নাম নূরজাহান আলীম।  ছোটবেলায় নাচ করতেন টুনি। তবে যে পরিবারে সারাক্ষণই গান বাজনা চলতে থাকে, সেখানে গান না করে অন্যকিছুতে মন বসানো সত্যি বেশ কঠিন। ছোট্ট টুনি তাই বড়দের দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে বাবা আবদুল আলীমের মতো গান গাওয়া শুরু করেন। একসময় সেই গানই তার একমাত্র শখ ও কাজে পরিণত হয়। সেই ছোট্ট টুনি এখন সংগীতশিল্পী। তারা চার বোন আর তিন ভাই। ভাইবোনদের মধ্যে তিনি ষষ্ঠ। শুধু বাবার অর্জিত যশে নয়, নিজের একটা পরিচয় তো থাকা চাই-ই। এজন্য দীর্ঘ সময় ধরে গান করলেও এতদিন ছিলেন আড়ালে। ছোটবেলায় শুরু করা সাধনা এখনো ধরে রেখেছেন। নিজেকে তিলে তিলে গড়ে তুলেছেন একজন শিল্পী হিসেবে। বাবার গান শুনতে শুনতে বড় হয়েছেন তিনি। অংশ নিয়েছেন বিটিভির প্রতিযোগিতামূলক অনুষ্ঠান নতুন কুঁড়িতে। বাংলাদেশ বেতারেও গান করেছেন শিশুশিল্পী হিসেবে। তবে শুধু শুনে বা দেখে তো আর পরিপূর্ণ শিল্পী হওয়া যায় না। তাই সংগীতে তালিম নিয়েছেন ছায়ানটে। সেখানে অনুপ বড়ুয়ার কাছে গান শিখতেন। এছাড়া পারিবারিকভাবেও গানের চর্চা তো অব্যাহত আছেই। সব মিলিয়ে এই শিখে গান গাওয়ার বিষয়টিকে তিনি বেশি গুরুত্ব দেন। তার মতে, গান শেখার কোনো শেষ নেই। যতদিন গান করব ততদিনই এই শেখার প্রক্রিয়া চলতে থাকবে। নূরজাহান ভালো গান করতে চান। সস্তা জনপ্রিয়তার পেছনে ছোটার কোনো ইচ্ছা নেই। এ বিষয়ে তার মত, এক দিনের জন্য শিল্পী হতে আসিনি। বাবার নামটি আরও উঁচুতে নিয়ে যেতে চাই। এটা তো আমাদেরই দায়িত্ব। তাই যতদিন বেঁচে থাকব গান করে যাব। নূরজাহান আলীম বাবার গান নিয়ে একটি অ্যালবাম তৈরি করেছিলেন, নাম ‘যারে ছেড়ে’। এরই মধ্যে বাবার নতুন আরও একটি গান প্রকাশের চিন্তা করছেন তিনি। বাবা ও তার গান নিয়ে আরও পরিকল্পনা আছে কণ্ঠশিল্পী নূরজাহানের।

সর্বশেষ খবর