শুক্রবার, ৪ সেপ্টেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা
করোনা আতঙ্ক

নাটকে শিল্পী-কলাকুশলীর স্বল্পতা

আলী আফতাব

নাটকে শিল্পী-কলাকুশলীর স্বল্পতা

যে সময় করোনার আক্রান্তের সংখ্যা ছিল কম ওই সময় বন্ধ ছিল সব ধরনের শুটিং। আর এখন করোনা আক্রান্ত ও মৃত্যুর মিছিলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়ে চলেছে মানুষের অসচেতনতা। খুলে দেওয়া হয়েছে সব ধরনের শুটিং। টানা আট মাস বন্ধ থাকার পর গত ঈদে নির্মিত হয়েছে বিভিন্ন টেলিভিশনের জন্য বেশ কিছু নাটক। নাটকের শুটিং শুরু হয়েছে কিন্তু প্রাণ ফিরে পাচ্ছে না শুটিংগুলো। শর্তসাপেক্ষ শুটিং শুরু হওয়ার পর থেকেই আমূল পরিবর্তন এসেছে নাটকের সেটে। আগের মতো শুটিংবাড়িগুলোতে হইচই তো নেই-ই; বরং করোনা আতঙ্কে কমছে শিল্পী ও কলাকুশলীর সংখ্যা। ন্যূনতম কর্মী দিয়ে নির্মাণ হচ্ছে সেট। লাইট কিংবা সাউন্ডের টেকনিশিয়ানদেরও একই দশা। করোনা ঝুঁকি মাথায় রেখে বেশির ভাগ অভিনয়শিল্পী নিজের মেকআপ নিজেই করছেন। ফলে কমে গেছে মেকআপ আর্টিস্টের সংখ্যাও। আগে একেকটি নাটকের সেটে কমপক্ষে চারজন মেকআপ আর্টিস্ট থাকলেও এখন রাখা হচ্ছে একজন। এ প্রসঙ্গে কথা বলতে গিয়ে মেকআপ আর্টিস্ট উজ্জ্বল বলেন, ‘অনেক দিন পর গত ঈদে নাটকে মেকআপের কাজ শুরু করেছি। কিন্তু সংখ্যায় অনেক কম। অনেক কষ্টে দিন কাটিয়েছি গত মাসগুলো। এখন কাজ শুরু হয়েছে ঠিক কিন্তু কাজ পাচ্ছি কত। আগে নাটকের একটি সেটে চার থেকে পাঁচজন মেকআপ আর্টিস্ট কাজ করত, কিন্তু এখন করছে কম।’ অপরদিকে অভিনয়শিল্পীদের মধ্যেও আগের মতো নেই উচ্ছ্বাস বা আড্ডার আমেজ। কেউ কেউ শট শেষ করেই গাড়িতে বসে থাকছেন। সহকর্মীদের সঙ্গে কুশলবিনিময় হচ্ছে দূরত্ব বজায় রেখেই। এমনকি খাবার, পানির বোতল, চা-কফি ও থালাবাটিও সঙ্গে করে নিয়ে আসছেন অভিনেতা-অভিনেত্রীরা। ছোট পর্দার জনপ্রিয় অভিনেত্রী অর্ষা রহমান বলেন, ‘অদ্ভুত এক সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। সাধারণত শুটিংবাড়িতে হইচই লেগেই থাকে। এখন বেশির ভাগ সময়ই নীরব হয়ে থাকে। সত্যিই এমন পরিস্থিতির সঙ্গে আমরা অভ্যস্ত নই। ঘর থেকে বের হলেই ঝুঁকি। তবু একজন শিল্পীর দায়বদ্ধতার জায়গা থেকে কাজ করছি। ঈদের আগে থেকেই শুটিং শুরু করেছিলাম। এখনো করছি।’ অর্ষা আরও বলেন, ‘সেটে সবাই স্বাস্থ্যবিধি মেনেই কাজ করার চেষ্টা করছেন। তবে সব ক্ষেত্রে মেনে চলা সম্ভবও নয়। বেশির ভাগ কলাকুশলী বিষয়টি সঠিকভাবে মানতেও চান না। তবুও শুটিং শুরু হওয়ার আগে সেটে নিয়মিত জীবাণুনাশক ¯েপ্র করা হয়।’ শুটিংয়ে লোকসংখ্যা কমে যাওয়ার বিষয়েও কথা বলেন এই অভিনেত্রী। তিনি বলেন, এমনিতেই আমাদের নাটকে শিল্পী সংখ্যা কম। তার মধ্যে করোনার কারণে সমিতি থেকে শিল্পী সংখ্যা কমাতে বলা হয়েছে। সেভাবেই কাজ করা হচ্ছে। সব কিছুর আগে তো জীবন। টিভি নাটকের প্রিয়মুখ অপূর্ব বলেন, শুটিংটা আমাদের ঘরবাড়ি। কিন্তু এখন সবার মধ্যে একটা আতঙ্ক বিরাজ করছে। কখন কাজ শেষ করবে আর কখন বাড়ি ফিরবে। এ ছাড়া করোনার কারণে ছোট করে আনা হয়েছে শুটিং ইউনিটগুলো। এর ফলে অনেকেই ইচ্ছা করলেও বেশি কাজ করতে পারছে না। অপূর্বর কথার সঙ্গে একমত পোষণ করেছেন মেহজাবিন। তিনি বলেন, আমাদের জীবনের অনেকটা সময় কাটিয়ে দিয়েছি এই শুটিং হাউসগুলোতে। সকাল থেকে রাত কাজ করেছি নানা শুটিং হাউসে। কিন্তু এখন কেমন জানি প্রাণহীন মনে হয়। খুব কম মানুষের সঙ্গে দেখা হয় এখন। প্রয়োজনের অতিরিক্ত কথাও বলতে নারাজ এখন। তারপরও জীবন এগিয়ে চলে জীবনের নিয়মে। ছোট পর্দার আরেক জনপ্রিয় অভিনেতা সাজু খাদেমের কণ্ঠেও একই সুর। তিনি বলেন, ‘শুধু শুটিংবাড়ির স্বাস্থ্যসচেতনতা কেন, সারা দেশের মানুষের মধ্যে কতটুকু স্বাস্থ্যসচেতনতা রয়েছে, তা নিয়ে প্রশ্ন করা উচিত। এত এত মানুষ, কেউ নিয়ম মানবে, কেউ মানবে না। ফলে ঝুঁকি থেকেই যায়। তবে পেশাদারিত্বের জায়গা থেকেই শুটিং করছি। সবাই যার যার জায়গা থেকে স্বাস্থ্যবিধি মেনেই কাজে আসছে। আমরাও সেটে ঢোকার আগেই ¯েপ্র করে নিচ্ছি। ওয়াশরুম আলাদা আলাদা ব্যবহার করার চেষ্টা করছি। সবার মধ্যেই নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রাখছি। তবে সবার মধ্যেই দ্রুত কাজ শেষ করার একটা তাড়া রয়েছে। এটা আগে ছিল না। এবার ঈদে সর্বাধিক নাটকে অভিনয় করেছেন মীর সাব্বির। তিনি বলেন, প্রথম দিকে কাজ না করার সিদ্ধান্ত নিলেও পরে কাজে ফিরেছি।

কাজ না করে আর কতদিন? তবে সেটের নিরাপত্তা নিয়ে আমি সন্তষ্ট। পরিচালক থেকে শুরু করে সবাই সতর্কতা অবলম্বন করেই কাজ করছেন। আমরাও যে যার জায়গা থেকে নিরাপদ থাকতে ও রাখতে চেষ্টা করছি। তানজিন তিশা বলেন, আমরা অভিনয়ের মানুষ অভিনয় ছাড়া থাকতে পারি না। তবে করোনার ওই সময়টাতে আমিও অন্যদের মতো ঘরেই ছিলাম। এখন কাজ শুরু হয়েছে, আমিও চেষ্টা করছি সচেতন থেকে কাজ করার। কিন্তু শুটিংয়ে আগের মতো প্রাণ খুঁজে পাচ্ছি না। একদম প্রয়োজন ছাড়া শুটিং ইউনিটে থাকছে না তেমন কেউ।’ ‘প্রিয় প্রতিবেশী’ নামের একটি ধারাবাহিকে শুটিং করছেন অভিনেতা ফারুক আহমেদ। প্রথমে মানিকগঞ্জে শুটিং করলেও বর্তমানে নাটকটির শুটিং হচ্ছে উত্তরার একটি শুটিংবাড়িতে। করোনাকালে শুটিংয়ের অভিজ্ঞতা নিয়ে অভিযোগের সুরে এ অভিনেতা বলেন, শুটিং সেট লাইটম্যান সহকারী, প্রোডাকশন বয়, ক্যামেরা সহকারীরা খুব বেশি সচেতন নন। এই মহামারী সম্পর্কে তাদের ধারণা না থাকায় তারা শুটিং সেটে মাস্ক খুলেই আড্ডা দিচ্ছেন। এমনকি মুখে মাস্কও রাখতে চাইছেন না। কিছু বললে তাৎক্ষণিক শোনেন, কিন্তু পরে আবার ভুলে যান। এখন তাদের জন্য শুটিং করতে ভয় লাগছে। কারণ, তারা এখানেই এতটা সতর্ক, তাহলে বাইরে কীভাবে চলেন?

এদিকে উত্তরার বিভিন্ন শুটিংবাড়িতে ‘চিটিং মাস্টার’, ‘প্রিয় প্রতিবেশী’, ‘সময়ের গল্প’ ও ‘তোলপাড়’সহ বেশ কয়েকটি ধারাবাহিক নাটকের শুটিং শুরু হয়েছে। এ ছাড়া বেশ কয়েকটি এক পর্বের নাটকের কাজ হয়েছে গত সাত দিনে।

এসব নাটকে অভিনয় করছেন আনিসুর রহমান মিলন, ডা. এজাজ, মনিরা মিঠু, ফারুখ আহমেদ,  মৌসুমী হামিদ, মাজনুন মিজান আবদুল্লাহ রানা, চৈতি, রাশেদ মামুন,  মিলন ভট্ট ও নুসরাত জাহানসহ আরও অনেকে।

সর্বশেষ খবর