মঙ্গলবার, ৩১ মে, ২০২২ ০০:০০ টা

সুখ আমার সঙ্গে বিট্রে করেনি

শাবনূর

সুখ আমার সঙ্গে বিট্রে করেনি

ঢাকাই চলচ্চিত্রের জনপ্রিয় নায়িকা শাবনূর। দেড় যুগেরও বেশি সময় ধরে দর্শকপ্রিয়তা নিয়ে নিয়মিত অভিনয় করে গেছেন। চলচ্চিত্র জগৎকে উপহার দিয়েছেন মানসম্মত অভিনয়সমৃদ্ধ প্রচুর ছবি। অস্ট্রেলিয়ার নাগরিক হিসেবে সে দেশেও অবস্থান করেন তিনি। ২০২০ সালের জানুয়ারিতে অস্ট্রেলিয়া যাওয়ার পর আর দেশে ফিরতে পারেননি তিনি। শিগগিরই তিনি দেশে ফিরতে চান এমন কথা জানানো এবং তাঁর নানা কথা তুলে ধরেছেন - আলাউদ্দীন মাজিদ

 

শিগগিরই দেশে ফিরতে চাই

যতই বিদেশে থাকি না কেন মনটা কিন্তু দেশের মাটিতেই পড়ে থাকে। এ অবস্থা শুধু আমার নয়, সব বাংলাদেশিরই। নিজ দেশের সব মানুষের মতো আমারও একটিই পরিচয়, আমি বাঙালি। বাংলাদেশকে আমি ভালোবাসি। দেশকে নিয়ে গর্ব করি। হয়তো জীবন-জীবিকার প্রয়োজনে অনেকের মতো আমাকেও বিদেশে থাকতে হচ্ছে। আমি দেশকে যেমন ভালোবাসি তেমনি আমার প্রাণের চলচ্চিত্র জগৎকেও অনেক ভালোবাসি। সবার মতো আমারও কমন কথা হলো- ‘চলচ্চিত্র জগৎ আজ আমাকে নাম, খ্যাতি, যশ সবই দিয়েছে, চলচ্চিত্রের কারণেই আজ আমি সবার কাছে ‘অভিনেত্রী শাবনূর’ হতে পেরেছি। তাই শিগগিরই দেশে ফিরে আবারও চলচ্চিত্রের কল্যাণে আত্মনিয়োগ করতে চাই।

 

আবার অভিনয়ে ফিরব

অভিনয়ে ফিরতে আরও কিছুদিন সময় চাই। ফেরার জন্য চেষ্টা চলছে। ফিরতে হলে আমাকে আগে ফিট হতে হবে। সে চেষ্টাই করছি। ওজন কমানো খুব কঠিন একটা কাজ। হঠাৎ করে ওজন কমানো সম্ভব নয়। ফিট হওয়ার জন্য আরও সময় প্রয়োজন। চলতি বছরই আবার নিয়মিতভাবে অভিনয় করার ইচ্ছা আছে। আবার ছবিতে অভিনয় করব। কারণ আমরা ব্যক্তিগতভাবে সবাই খুবই দুঃখী। আমি চাই মানুষদের বিনোদন দিতে। আমি এখনো কাজ করতে চাই। আমাকে নিয়ে যদি তেমন গল্পের ছবি বানাতে চান, আমার মতো করে গল্প বলতে চান, তাহলে অবশ্যই আমি সেসব ছবিতে অভিনয় করব।

 

একটি ছবির কাজ অসমাপ্ত রয়েছে

মোস্তাফিজুর রহমান মানিক ভাইয়ের ‘এত প্রেম এত মায়া’ ছবিতে আমি আর ববিতা ম্যাডাম একসঙ্গে কাজ করেছি। তাও বেশ কিছুদিন হয়ে গেল। একটি বিদেশি ছবির ছায়া অবলম্বনে চমৎকার গল্পে ছবিটি নির্মাণ করেছেন মানিক। এ ছবির জন্য টাইটেল সংয়েও কণ্ঠ দিয়েছি আমি। এতে আমার আরও কিছু কাজ বাকি আছে। শিগগিরই তা শেষ করে দেব।

 

অভিনয়কে খুব মিস করি

অভিনয়কে খুব মিস করি। অভিনয়ের জন্য একটা সময় দেশ-বিদেশের নানা জায়গায় ছুটে বেড়াতাম। তাই আমার তো এখন ঘরে বসে থাকতে ভালো লাগে না। সবার সঙ্গেই মিশছি। হুট করেই কারও বাসায় গিয়ে চমকে দিচ্ছি। তাদের সঙ্গে আড্ডা দিচ্ছি। প্রায় অনুষ্ঠানেই উপস্থিত হওয়ার চেষ্টা করছি। আর ঘরসংসার তো আছেই। আমার বাচ্চাটা খুব দুরন্ত। বাচ্চা আর সংসার সামাল দিচ্ছি। এই তো এভাবেই সময় কেটে যাচ্ছে।

 

চলচ্চিত্র নির্মাণে আসব

বর্তমানে চলচ্চিত্রের সময়টা আবারও ভালোর দিকে যাচ্ছে। সম্প্রতি ঈদে কয়েকটি ছবি ভালো ব্যবসা করেছে বলে শুনেছি। আমার বিশ্বাস শিল্পের প্রতি আন্তরিক ও চলচ্চিত্রের সবাই ঐক্যবদ্ধ হলে ছবির ব্যবসা আবারও ঘুরবে। চলচ্চিত্র আরও ভালো অবস্থানে যাবে। তখন অনেকেই আবার চলচ্চিত্র নির্মাণে ফিরবে। ছবি পরিচালনা করার ইচ্ছার কথা আগেই জানিয়েছিলাম। তাও করব। শুধু সব গুছিয়ে নিতে একটু সময় দরকার। আর কিছু নয়।

 

জীবনটা নিজের মতো করেই সাজাতে হয়

দীর্ঘ প্রায় দেড় যুগের ক্যারিয়ারে যত ঝড়-ঝাপটা আমার ওপর এসেছে, যত স্ক্যান্ডাল আমাকে ফেস করতে হয়েছে, পৃথিবীর অন্য কোনো শিল্পীকে বোধ করি অতটা করতে হয়নি। আমার প্রথম ছবির প্রযোজক আজিজ মোহাম্মদ ভাই, নায়ক সালমান শাহ, নায়ক রিয়াজ, ফেরদৌস, এক বিদেশি নাগরিককে আমার সঙ্গে জড়িয়ে মিথ্যে সম্পর্কের গুঞ্জন, সালমানের হত্যা/আত্মহত্যার জন্য অভিযুক্ত হওয়া, একাধিকবার এফডিসির বিভিন্ন সমিতি কর্তৃক ব্যান হওয়া, উফ্! কী ফেস করতে হয়নি আমাকে, একই সঙ্গে পারিবারিক নানা টানাপড়েনে অতিষ্ঠ ছিল আমার জীবন। বিশেষ করে স্বামীর সঙ্গে আমার ডিভোর্স, অন্য যে কেউ হলে বোধ হয় পাগল হয়ে যেত, সমস্যা ভুলে থাকার জন্য মাদকের আশ্রয় নিত বা আত্মহত্যা করত। আমি কিন্তু সব নেগেটিভকে মনের জোরে পাশ কাটিয়ে জীবনটাকে পজিটিভবলি গড়ে তুলতে পেরেছি বলে সুখ আমার সঙ্গে বিট্রে করতে পারেনি। আসলে জীবনটা নিজের মতো করেই সাজাতে হয়।

 

আর সংসারি হতে চাই না

আমার আর সংসারি হওয়ার কোনো ইচ্ছে নেই। বিয়ের পর স্বামীর সঙ্গে বনিবনা না হওয়া যে কোনো নারীর জন্য ভয়ংকর অভিজ্ঞতা। এ কারণেই বাধ্য হয়েই স্বামীকে ডিভোর্স দিতে হয়েছে আমার। অনেকে মনে করেন, একবার কারও প্রতারণার শিকার হলে আর কোনো পুরুষ মানুষকে বিশ্বাস বা বিয়ে করা যায় না। এটি ভুল ধারণা। ভালো মন্দ পৃথিবীর সব কিছুতেই আছে। তাই বলে ভালো মানুষ যে আর পাওয়া যাবে না তা কিন্তু নয়। আমার আর বিয়ের ইচ্ছে না থাকার কারণ হচ্ছে একমাত্র পুত্র আইজানকে প্রতিষ্ঠা করা। সত্যিকারের মানুষ হিসেবে গড়ে তোলা। শ্রদ্ধেয় ববিতা আপুও কিন্তু একমাত্র সন্তান অনিককে গড়ে তোলার জন্য প্রচণ্ড সেক্রিফাইস করেছেন এবং তার ভালো ফলও পেয়েছেন। আমিও তাই করতে চাই। আমার যদি সন্তান না থাকত তাহলে হয়তো ভালোমনের একজন মানুষকে জীবনসঙ্গী হিসেবে খুঁজে নিতাম। আজকের আমার জন্মদিনে সবার দোয়া চাই আমার ও আমার সন্তান আইজানের জন্য। ওকে যেন মানুষের মতো মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে পারি, আমরা দুজনই যেন প্রকৃত সুখী হয়ে জীবনের শেষ দিনগুলো মহাসুখে কাটাতে পারি।

সর্বশেষ খবর