রবিবার, ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা
সাক্ষাৎকার : বাপ্পারাজ

মাস্তান পার্টি এসে চলচ্চিত্রের বারোটা বাজিয়ে দিয়ে গেছে

মাস্তান পার্টি এসে চলচ্চিত্রের বারোটা বাজিয়ে দিয়ে গেছে

দর্শকপ্রিয় অভিনেতা বাপ্পারাজ। ১৯৮৬ সালে বাবা নায়করাজ রাজ্জাকের পরিচালনায় ‘চাঁপাডাঙ্গার বউ’ ছবিতে অভিনয়ের মধ্য দিয়ে চলচ্চিত্রে আগমন ঘটে তার।  দীর্ঘদিন চলচ্চিত্রে অভিনয় থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে রেখেছেন। জনপ্রিয় এ অভিনেতার বর্তমান অবস্থান এবং চলচ্চিত্রের অন্যান্য বিষয়ে তার বলা কথা তুলে ধরেছেন- আলাউদ্দীন মাজিদ

 

দীর্ঘদিন ধরে অভিনয় থেকে দূরে থাকার কারণ-

অভিনয় থেকে দূরে আছি সেটা ঠিক নয়। আমি যে ধরনের চরিত্রে কাজ করতে চাই, সে রকম চরিত্র আমাদের সিনেমার গল্পে তৈরি হচ্ছে না বলেই কাজ করা হচ্ছে না। তাছাড়া আমাদের নির্মাতারা একান্নবর্তীভাবে কিংবা সংখ্যাগরিষ্ঠ শিল্পীদের কথা ভেবে এখন আর গল্প তৈরি করেন না। যাকে দরকার তাকে পেলেই হলো, বাকি শিল্পীদের নিয়ে ভাবার সময় এখন আর নেই তাদের কাছে। সে জন্যই হয়তো আমার এখন আর নিয়মিত কাজ করা হয়ে ওঠে না। আর বাবা-চাচার চরিত্র করার মতো বয়সও এখন হয়নি।

 

চলচ্চিত্রের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে ভাবনা-

আমাদের চলচ্চিত্র বর্তমানে যে অবস্থায় এসে দাঁড়িয়েছে এর জন্য আমরা নিজেরাই দায়ী। ছবির গুণগতমান, হলের পরিবেশ একটা মুখ্য বিষয় হলেও আমার মনে হয় আমাদের চলচ্চিত্র নিজেদের সৃষ্টি করা গৎবাঁধা নিয়মের মধ্যেই বন্দি। শুরু থেকে যেভাবে চলছে, এখনো ঠিক তাই। যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আমরা চলতে পারছি না। আবার অনেক ছবিতে প্রযুক্তির অপারগ ব্যবহার দর্শক মহলে হাসির খোরাক বানিয়ে দিচ্ছে। খুবই খারাপ অবস্থা। শিল্পীর সবচেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে বিনয়, সেই বিনয়টাই কমে গেছে। শিল্পীরা কিন্তু মাস্তান হন না, শিল্পীরা হন বিনয়ী। মাস্তান পার্টি এসে চলচ্চিত্রের বারোটা বাজিয়ে দিয়ে গেছে। বড় বড় চাল ব্যবসায়ী, বালু ব্যবসায়ী এসে গেছে দলবল নিয়ে চলচ্চিত্রে। কে কাকে কয়টা মামলা দেবে এসবই চলছে। মামলা করে যদি শিল্পীদের সমস্যা সমাধান করতে হয়, তাহলে সমিতি কেন? সবাইকে দেখি এখন কথায় কথায় থানা পুলিশ, আইন আদালত করতে। এফডিসির ভিতরে কিছু হলে আমরাই তো সমাধান করতে পারি। এসবের জন্য থানা পুলিশ, আদালতের দরকার হয় নাকি?

 

নতুন যারা চলচ্চিত্রে কাজ করতে চায় তাদের জন্য পরামর্শ-

নতুনরা এসে কাজ করে নিজেদের অবস্থান তৈরি করবে এটাই তো স্বাভাবিক। কিন্তু আমাদের চলচ্চিত্রের বর্তমান সময়টা খুবই খারাপ যাচ্ছে। নতুনদের দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে ছবি নির্মাণ করার মতো নির্মাতা নেই বললেই চলে। তাছাড়া নির্মাতারা পুরনো শিল্পীদেরই এখন ঠিকভাবে চলচ্চিত্রে ব্যবহার করতে পারছেন না। সেক্ষেত্রে নতুনদের জন্য কী করবেন তারা। আমি মনে করি, আমাদের ইন্ডাস্ট্রির বর্তমান সময়টা নতুনদের অনুকূলে নেই।

 

শিল্পীর সবচেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে বিনয়, সেই বিনয়টাই কমে গেছে। শিল্পীরা কিন্তু মাস্তান হন না, শিল্পীরা হন বিনয়ী।  মাস্তান পার্টি এসে চলচ্চিত্রের বারোটা বাজিয়ে দিয়ে গেছে।

 

আপনার অভিনীত বেশির ভাগ চলচ্চিত্রে বিয়োগান্ত চরিত্র, কেন-

না, এটা একদমই ঠিক নয়। যদি ১০০টা ছবি করে থাকি, তার মধ্যে হয়তো ১০টা ছবিতে আমাকে এমন চরিত্রে দর্শক দেখতে পেত। কিন্তু ওই ১০টা ছবিই এত জনপ্রিয় হয়ে গেছে যে তারা এই চরিত্রের বাইরে আর আমাকে কল্পনা করতে পারছে না। তার জন্যই সবার মাঝে আমাকে নিয়ে এমন প্রশ্ন ঘুরপাক খায়। কিন্তু আমি সর্বদাই চরিত্রের ব্যালান্স করেই কাজ করেছি।

 

বাবা নায়করাজ রাজ্জাককে নিয়ে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা-

এ ইন্ডাস্ট্রির পেছনে বাবার অনেক অবদান রয়েছে। একজন নায়করাজ রাজ্জাক ইন্ডাস্ট্রিতে আর আসবে কিনা জানি না। বাবার অনেক স্বপ্ন ছিল। সব কিছু ঠিকঠাক গুছিয়ে বাবাকে নিয়ে ভবিষ্যতে কিছু কাজ করতে চাই।

 

কোনো অপ্রাপ্তি-

না। আল্লাহর রহমতে আমার জীবনে কোনো অপ্রাপ্তি নেই। কারণ আমার চলাফেরা খুবই সাধারণ। চাহিদা খুবই স্বল্প। টাকা-ধন-সম্পত্তির কোনো ধরনের লোভ নেই। একজন মানুষ তার যা আছে তাই নিয়ে সন্তুষ্ট থাকলে আর কোনো অপ্রাপ্তি থাকার কথা নয়। আমার বেলায়ও ঠিক তাই। আমার আমিতে আমি তৃপ্ত।

 

অবসর কাটে কীভাবে-

সময় তার নিয়মে চলে যায়। সর্বদা কাজের মধ্য দিয়েই চলতে হয়। এর মাঝেও কিছু সময় বের করে ছবি দেখা, ছোট ভাইয়ের বাচ্চাদের সঙ্গে সময় দেওয়া, পরিবারকে সময় দেওয়ার পাশাপাশি ব্যবসা-বাণিজ্য মিলিয়ে অবসর কেটে যায়।

 

ফের চলচ্চিত্র নির্মাণের কোনো পরিকল্পনা আছে কি?

চলচ্চিত্র নির্মাণের ইচ্ছা সব সময় আমার মাঝে কাজ করে। সময়, পরিস্থিতি, ব্যবসা-সব কিছু অনুকূলে নিয়ে আবারও চলচ্চিত্র নির্মাণ করব।

সর্বশেষ খবর