মঙ্গলবার, ২০ ডিসেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা
সাক্ষাৎকার : পার্নো মিত্র

বাঙালি খাবার আমার খুবই পছন্দের

বাঙালি খাবার আমার খুবই পছন্দের

কলকাতার জনপ্রিয় অভিনেত্রী পার্নো মিত্র। এ দেশের ‘ডুব’ ও ‘বিলডাকিনী’ নামে দুটি সিনেমায় অভিনয় করেছেন। অন্যদিকে ঢাকায় ‘সুনেত্রা সুন্দরম’ সিনেমা করার কথা থাকলেও  সেটির শুটিং বিভিন্ন শর্তে আটকে আছে। এই অভিনেত্রীর সঙ্গে সমসাময়িক  ব্যস্ততা নিয়ে কথা বলেছেন - পান্থ আফজাল

 

‘সুনেত্রা সুন্দরম’ সিনেমার শুটিং করতে ঢাকায় আসার কথা থাকলেও আসেননি। না আসার কারণ কী ছিল?

অক্টোবরে ঢাকায় আসার কথা ছিল। তবে ভিসা জটিলতার কারণে আসতে পারিনি। অন্যদিকে সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছিল। আমিসহ ১৫ শিল্পী-কলাকুশলীকে শুটিংয়ের অনুমতি দিয়েছিল বাংলাদেশের তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়। তবে শর্ত ছিল যে, ২৫ অক্টোবরের মধ্যে ঢাকায় এসে শুটিং করে যেতে হবে। তা সম্ভব হয়নি। তাই সেটি এখন হচ্ছে না।

 

কবে নাগাদ শুটিং হতে পারে?

বিষয়টি প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান এখনো আমাকে জানায়নি। তবে সামনের বছরে শুটিং হওয়ার সম্ভাবনা আছে বলে জেনেছি।

 

আরিফিন শুভর সঙ্গে কাজ করার কথা ছিল। তার খবর কী?

শুভর সঙ্গে একটা সিনেমা হওয়ার কথা ছিল। সেটি হয়নি। কিন্তু আমাদের মধ্যে ভালো একটা বন্ধুত্ব হয়ে গেছে। আমি খুব আশাবাদী আরিফিন শুভর সঙ্গে শিগগিরই আমার একটা কাজ হবে।

 

বাংলাদেশে ‘বিলডাকিনী’ অভিনীত দ্বিতীয় সিনেমা। সবমিলিয়ে অভিজ্ঞতা কেমন ছিল?

হুমম... প্রথম সিনেমা ‘ডুব’-এর পরিচালক ছিলেন মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। তখন একরকম বাংলাদেশ দেখেছিলাম। কারণ, শহুরে গল্পে কাজ করেছিলাম। আর ফজলুল তুহিনের ‘বিলডাকিনী’র ব্যাপারটা ভিন্ন, সুন্দর একটি গ্রামে শুটিং করেছি তখন। সেখানকার মানুষগুলো খুবই ভালো। খুবই আতিথেয়তাপরায়ণ। আমাদের সহযোগিতা তো করেছেই, পাশাপাশি খুব আদরও করেছেন। রাতে আত্রাই নদীতে বেশির ভাগ শুট হয়েছে। শুটিং আশপাশের বাড়ির মানুষগুলোই আমাদের যত্ন করেছেন, খেয়াল রেখেছেন। বহু জায়গায় শুটিং করেছি, কিন্তু এমন ভালোবাসা কোথাও পাইনি। তবে শুটিংয়ের তাড়াহুড়ায় গ্রাম ঘুরে দেখার সময়ই পাইনি। এরপর ঢাকায় এলে কিছু চমৎকার স্থান ঘুরে দেখার ইচ্ছা রয়েছে।

 

শুনেছি বাঙালি খাবার খুবই পছন্দ আপনার?

খুব! বাঙালি খাবার আমার খুবই পছন্দের। বাংলাদেশে যে কবার গিয়েছি, সুস্বাদু অনেক কিছুই খেয়েছি। ইলিশ, পাঙ্গাশ, আইড় ও ছোট মাছ থেকে শুরু করে হাঁসের মাংস পর্যন্ত খেয়েছি। রান্না খুবই ভালো মজাদার ছিল। বিলডাকিনীর শুটিংয়ের সময় আত্রাইয়ের এক ভক্ত খুব ভোরে সেখানকার খেজুর গাছে উঠে সরেস রস এনে খাইয়েছিলেন আমাকে।  

 

দুই বাংলার জনপ্রিয় অভিনেতা মোশাররফ করিমকে সহশিল্পী হিসেবে পেয়েছেন। তাঁর সঙ্গে প্রথমবার কাজ করেছেন, কেমন ছিল সব?

তাঁর সঙ্গে আগে কাজ না করলেও তাঁর কিছু কাজ দেখেছি। অনেক নাটক দেখেছি। ফারুকী ভাইয়ের ‘টেলিভিশন’ সিনেমাটাও দেখা। অসাধারণ! তিনি খুবই ব্রিলিয়ান্ট অ্যাক্টর! দারুণ মানুষও। যখন শুনেছি বিলডাকিনীতে তিনি অভিনয় করছেন, আমি খুবই এক্সাইটেড ছিলাম। শুটিং সেটে এসে বুঝেছি, তিনি ভীষণ হেল্পফুল। অ্যাক্টিংটা দারুণ বুঝেন। এপার বাংলায় তাঁর অনেক ভক্ত রয়েছে। আমি কিন্তু তাঁর অভিনয়ের পুরনো ভক্ত। বিলডাকিনী সিনেমায় বেশ কিছু দৃশ্য তাঁর সঙ্গে। তাঁর আর আমার বোঝাপড়া ভালো ছিল। আর একজনের কথা বলতেই হবে। তিনি জর্জ ভাই। তাঁর সঙ্গে অনেক দৃশ্য করেছি। তিনি সত্যিই দারুণ অভিনয় করেন।

 

‘বিলডাকিনী’ সিনেমায় অন্তঃসত্ত্বা হনুফার চরিত্রে অভিনয় করেছেন। গল্পের হনুফার জীবন-সংগ্রাম নিয়ে একটু বলুন...

হনুফা চরিত্রটি নানাভাবে পরিবর্তন হয়। নানা ধরনের স্ট্রাগল করে জীবনে। সে একবার প্রেগন্যান্ট হয়। বাচ্চাটাকে কেউ রাখতে দিতে চায় না, কিন্তু সে রাখতে চায়। এই নিয়ে দ্বন্দ্ব। বলতে পারেন একটা মেয়ের লড়াইয়ের গল্প। একটা মেয়ের সমাজে নিজের জায়গা করে নেওয়ার গল্প।

 

এমন ধরনের চরিত্র পূর্বেও কি করা হয়েছে?

প্রতিটি গল্পই তো আলাদা। চরিত্রও আলাদা। সেভাবে হয়তো করা হয়েছে। মেয়েদের তো স্ট্রাগলের নানা দিক আছে, হনুফার চরিত্রও একটা দিক।

 

ওপারের শিল্পীরা ইলিশ, জামদানি, টাঙ্গাইলের শাড়ি নিয়ে যান...

হ্যাঁ, তা ঠিক। যাঁরা এ দেশে অভিনয় করতে এসেছিলেন তাঁদের কাছ থেকে শুনেছি। এ দেশের রুপালি ইলিশ, ঢাকাই জামদানি, টাঙ্গাইলের শাড়িসহ বিভিন্ন মুখরোচক খাবারও রয়েছে। আমিও কিছু জিনিস নিয়েছিলাম শুটিং করতে এসে। বিলডাকিনীর শুটিং করার সময় খেজুর রস থেকে বানানো পাটালি, ঝোলাগুড় ব্যাগে ভরে দিয়ে দিয়েছিল। মধুও ছিল।

 

এ দেশের টিভি নাটক-চলচ্চিত্র কি দেখা হয়েছে?

দেখেছি। ওটিটি ও ইউটিউবের কারণে আমরা সেখানে বসেই এ দেশের অনেক শিল্পীর ভালো ভালো কাজ দেখতে পাই। আমাদের এখানে তো মোশাররফ, চঞ্চল, খুশি খুবই জনপ্রিয়। জয়া, বাঁধন, মিথিলারাও তো অনেক কাজ করছেন। সিনেমা ‘টেলিভিশন’ দেখেছি। তাকদীর, মহানগর দেখেছি। শুনেছি আরও বেশ কিছু ওয়েবে এ দেশের তারকারা দারুণ করছে। দেখব এক এক করে।

 

এ দেশের চ্যানেল ওপারের মানুষ দেখতে পায় না। কিন্তু এ  দেশে আপনাদের চ্যানেলের রয়েছে অবাধ বিচরণ। বিষয়টা কি ভাববার সময় হয়নি?

অনেক আগে থেকেই সবার দাবি ছিল যেন দুই দেশের সংস্কৃতি বিনিময় সমানে সমান হয়। সেটি সিনেমার ক্ষেত্রে যতটা সহজ হয়েছে, নাটকের ক্ষেত্রে জটিলতা থাকছেই। তবে ওটিটির কারণে কিন্তু এখন সারা বিশ্বের বিনোদন দুনিয়া এককাতারে চলে এসেছে। তাই যে দেশ যাই করুক না কেন, যে নাটক, সিনেমা, ওয়েব সিরিজ বানাক-তা কিন্তু একসময় মানুষ দেখবেই। আটকে রাখার কোনো সুযোগ নাই।

 

দুই বাংলায়ই আপনি বেশ জনপ্রিয়। কাজ পছন্দের বিষয়টা কীভাবে নির্ধারণ করেন?

আসলে মন দিয়ে কাজটাই করতে চাই সর্বদা। কাজের ব্যাপারেও খুব চুজি। খুব পছন্দ না হলে কাজ করি না। এ কারণেই বোধহয় মানুষ পছন্দ করেন।

 

অভিনেত্রীই কি হতে চেয়েছিলেন?

একদম! ছোটবেলা থেকেই চেয়েছি অভিনেত্রী হতে। সেটাই চেষ্টা করে যাচ্ছি এখনো।  জানি না পারব কি না। তবে কিছু মানুষ পছন্দ করেন এটাই ভালো লাগার বিষয়।

সর্বশেষ খবর