নন্দিত নাট্যব্যক্তিত্ব তারিক আনাম খান। মঞ্চ, টেলিভিশন ও চলচ্চিত্রের একজন দাপুটে অভিনেতা এবং নাট্যনির্দেশক। অভিনয় জগতে পথচলা দীর্ঘদিনের। তিনি একজন মুক্তিযোদ্ধাও। তাঁর সঙ্গে অভিনয় জীবনের জানা-অজানা বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন- পান্থ আফজাল
কেমন আছেন? নতুন একটি সিনেমায় সম্প্রতি অভিনয় করছেন। শুটিং কি শুরু করেছেন?
জি ভালো আছি। হ্যাঁ, শুটিং করছি। সপ্তাহখানেক আগে রাজধানীর উত্তরায় শুটিং শুরু হয়। নাম ‘ছায়াবাজি’। এটির নির্মাতা সৈয়দ শাকিল। আরটিভি প্রযোজিত সিনেমাটির গল্প লিখেছেন আহমেদ শাহাবুদ্দিন।
আপনার সঙ্গে অপু বিশ্বাসও রয়েছেন...
প্রথমবার একসঙ্গে কাজ করলাম। সাইকো থ্রিলার ঘরানার সিনেমাটি অবশ্য ওটিটির জন্য নির্মিত হচ্ছে।
গল্পে আপনাদের দুজনের চরিত্রটি কোন ধরনের?
এই চলচ্চিত্রে আমি একজন মনোরোগ চিকিৎসক। আর অপু বিশ্বাস আমার রোগী অর্থাৎ তিনি মানসিক রোগীর চরিত্রে অভিনয় করেছেন। গল্পটি সুন্দর।
আপনার নাট্যকেন্দ্র থেকে নতুন নাটক ‘পুণ্যাহ’ মঞ্চস্থ হয়েছে...
হ্যাঁ, এটি নতুন নাটক। ‘পুণ্যাহ’ রচনা করেছেন বদরুজ্জামান আলমগীর। নির্দেশনা দিয়েছেন ইউসুফ হাসান অর্ক। নাট্যদলের প্রায় ২৫ জন শিল্পী এতে অভিনয় করছেন। এরমধ্যে বেশ কয়েকটি প্রদর্শনীও হয়েছে।
হুমায়ুন ফরীদির সঙ্গে মজার কিছু স্মৃতি শেয়ার করবেন কি?
অবশ্যই। হুমায়ুন ফরীদির সঙ্গে তো প্রতিটি মুহূর্তই মজার। তাঁর সঙ্গে প্রতিদিন দেখা হতো। ফরীদির সঙ্গে ক্রিয়েটিভ আলোচনা ছিল খুবই ইন্টারেস্টিং। তাঁর কথায় ছিল মুগ্ধতা। এমনও হয়েছে সে এক ঘণ্টা ধরে জোকস বলছে কেউ বিরক্ত হয়নি, সবাই হেসেই যাচ্ছিল। তাঁর কথায় সময় কীভাবে যে চলে গেছে কেউ টেরই পেত না। আমার নাট্যকেন্দ্র করার পেছনে তাঁর বড় ভূমিকা ছিল। অদ্ভুত স্বভাবের ছিল সে। সে সবসময় আউট অব দ্য ফ্রেম থাকতে চাইত। আমরা তিন-চার বছর একসঙ্গে অনেক আড্ডা দিয়েছি। ও ওর ইচ্ছামতো চলত। ভালো লাগলে চাকরি করত, না লাগলে ছেড়ে দিয়ে চলে আসত। ছবি দেখা, আবৃত্তি করা, আড্ডা দেওয়া, জোকস করা তাঁর খুবই পছন্দ ছিল। ফিল্মে সে লেট করে যেত, লেট করে আসত। ভালো লাগলে করেছে, না লাগলে করেনি। আমি মনে করি, ফিল্মে হুমায়ুন ফরীদি টোটালি নিজেকে ওয়েস্টেড করেছে। ও মোটামুটিভাবে নিজেকে কমার্শিয়ালাইজড বেশি করেছে।
নিমা রহমানের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি হয়েছিল কীভাবে?
তাঁকে আগে থেকেই চিনতাম। ন্যাশনাল স্কুল অব ড্রামা থেকে পাস করে আসার পর নিমার মামা মুস্তফা মনোয়ারের সঙ্গে কাজ করতাম। তখন নিমাও পাপেটে ভয়েস দিত। তখন থেকে চিনি।
হুমায়ুন আহমেদের প্রথমদিককার কয়েকটি নাটকে অভিনয় করেছিলেন...
হুমম... তবে ‘কোথাও কেউ নেই’ ধারাবাহিকে কাজ করতে গিয়ে একটু মনোমালিন্য হয়। তাঁর শেষ কাজ ‘ঘেটুপুত্র কমলা’র জমিদার চরিত্রেও কাজ করেছি। তিনি অসাধারণ ছিলেন লেখায়।
চ্যালেঞ্জিং ও বৈচিত্র্যময় চরিত্রে সর্বদা কাজ করছেন। অভিনয়ের কোনো সূত্র বিশ্বাস করেন?
অভিনয়ের কিছু কনসেপ্ট বিশ্বাস করি। মানুষের টেনডেনসি হলো স্বাভাবিক মানুষকে দেখা। আমি যে কয়টা চরিত্র করেছি, চিন্তা করেছি তা যেন মানুষের জীবনের সঙ্গে মেলে, দেখে, বিশ্বাস করে। গ্রহণযোগ্য অভিনয়ই সবার করা উচিত। আই অলওয়েজ লার্ন। এটা খুবই ইমপোর্টেন্ট। ফরীদি, আসাদ, বাচ্চু ভাই, আলী যাকের, সারা যাকের, আসাদুজ্জামান নূর, আবুল হায়াত- এদের সঙ্গে মিশে কিন্তু আমি অনেক ঋদ্ধ হয়েছি; অনেক কিছু শিখেছি। সবারই শেখার অ্যাটিচিউড রাখাটা কিন্তু খুবই জরুরি। মানুষ আসলে একটি কূপমণ্ডূক জায়গার মধ্যে মানে একটি হাঁড়ির মধ্যে বন্দী হয়ে আছে। এটিকে ভাঙতে হবে।
এবারও বেশ কিছু কাজ করেছেন...
আমাদের তো কাজ করার সুযোগ কম। তবুও নির্মাতারা নতুন নতুন চরিত্রে যে আমাকে নিয়ে ভাবেন, তা সত্যিই আনন্দের। যেটুকু করি, ঠিকঠাকমতো করতে চাই। কাজগুলো করে তৃপ্তির জায়গা থাকে। তবে অতৃপ্তির জায়গাটা বেশি থাকে।
‘মাইক’ চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন। অভিজ্ঞতা কেমন?
কাজটি শেষ করেছি। এই সিনেমাটি ভালোই হবে মনে হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ নিয়ে সিনেমাটি। আসলে নতুন কোনো কাজ ভালো মনে হলে করি, না হলে করি না।
সিনেমা হল জেগে উঠেছে। এই ইন্ডাস্ট্রি নিয়ে কতটা আশাবাদী?
শুনে ভালোই লাগছে। ভালো কিছু সিনেমা দেখতে দর্শক হলে ফিরছে। এটা ইতিবাচক। আমি আশাবাদী সবসময়। এখন তো নতুন অনেক নির্মাতা ভালো ভালো কাজ করছেন। নতুন কনসেপ্ট নিয়ে সিনেমা-ওয়েব ফিল্ম তৈরি করছেন। এটা সুখের বিষয়। চাই দেশ ভালো থাকুক। সাম্প্রদায়িকতামুক্ত দেশ হোক।
আপনি কি গ্যাজেটবান্ধব?
হান্ডেড পারসেন্ট! তবে আমি এখনো হাতে লিখি। আমি লিখতেই পারি না বিশ্বাস করেন। ট্যাবে মাঝেমধ্যে লিখি, মেলও করি। তবে না হলে আর কি! বাংলাদেশের টিভি নাটক নিয়ে জাতীয় পত্রিকার জন্যও লিখেছি। আমি কিন্তু হাতে লিখে তা দিয়ে এসেছি; একটা মজার ব্যাপার আছে। আমার মস্তিষ্ক আর কলমের আগার মধ্যে সংযোগ না হলে কিছুই লিখতে পারি না।