মঙ্গলবার, ১৭ জানুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা
বিশেষ সাক্ষাৎকার : রোজিনা

হলে ছবি দেখার মজা সিনেপ্লেক্সে নেই

হলে ছবি দেখার মজা সিনেপ্লেক্সে নেই

ঢাকাই সিনেমার জনপ্রিয় অভিনেত্রী রোজিনা। ১৬ বছর বয়স থেকে অভিনয় শুরু করেন। ১৯৭৬ থেকে শুরু করে ২০২২ সাল পর্যন্ত তিন শতাধিক সিনেমায় অভিনয় করেছেন তিনি।  ‘ফিরে দেখা’র মাধ্যমে ক্যারিয়ারে প্রথমবারের মতো সিনেমা পরিচালনাও করেছেন তিনি। দীর্ঘ ক্যারিয়ার, ব্যক্তিগত বিষয় ও সমসাময়িক ব্যস্ততা নিয়ে তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন - পান্থ আফজাল

 

ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে আপনি বিশেষ অতিথি হিসেবে ছিলেন। কেমন লেগেছে পুরো আয়োজনটি?

হুমম... উদ্বোধনী আয়োজনে ছিলাম আমি। সেখানে ফাখরুল আরেফীন খানের ‘জ্যাঁ কুয়ে ১৯৭১’ সিনেমাটি দেখানো হয়েছে। আমি দেখেছি সিনেমাটি। আমি সেন্সর বোর্ডের মেম্বার। সেই হিসেবে আগেও দেখা হয়েছে সিনেমাটি। অন্য সিনেমাগুলোও দেখেছি। নভেম্বর থেকে ডিসেম্বরের ১৫ তারিখ পর্যন্ত আমি ১৩০-১৪০টির মতো সিনেমা দেখেছি। চারটি করে দেখা হতো। হয়তো পূর্ণদৈর্ঘ্য তিনটা, স্বল্পদৈর্ঘ্য একটা করে। এরপর ডিসেম্বরের ১৭ তারিখ লন্ডনে চলে গিয়েছিলাম। আর এই আয়োজনের কোনটা রেখে কোনটার কথা বলি। সবই ভালো সিনেমা। তবে আমাদের বর্তমান জেনারেশনের অনেকেই সিনেমা বানাচ্ছে। ডকুমেন্টারি বানাচ্ছে। সবাই খুবই ভালো বানাচ্ছে। ফেস্টিভ্যালেও দিয়েছে। দর্শকরা দেখবেন এসে। আমি মনে করি, ফেস্টিভ্যালে দেওয়া মানেই ভালো গল্পের ভালো সিনেমা। আমার কাছে কিন্তু সব সিনেমাই ভালো লেগেছে।

 

কিন্তু একই দিন তো চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতিরও বনভোজন ছিল। সেখানে না গিয়ে এই উৎসবে গেলেন, উৎসবটি কেন বেশি গুরুত্ব পেল?

আমার কাছে দুটোই সমান গুরুত্বের। সেটি শিল্পী সমিতির একটা পিকনিক আর অন্যটা চলচ্চিত্র উৎসব। শিল্পী সমিতির পিকনিকটার অবশ্যই গুরুত্ব আছে। তবে উৎসবটাকে কেন এত প্রাধান্য দিচ্ছি তার কারণ চলচ্চিত্র উৎসব কিন্তু প্রতিদিন হবে না। প্রতিদিন কিন্তু বিদেশ থেকে যারা এসেছেন তাদের সঙ্গে দেখা হবে না। যার জন্য আমি উৎসবটাকে বেশি গুরুত্ব দিয়েছি। আর আমাদের শিল্পী সমিতি! এরা তো সবাই আমাদের নিজেদেরই লোক। তবে হ্যাঁ, শিল্পী সমিতির সবাই মিলে এই পিকনিকে অনেকেই ছিলেন। সবাই মিলে একদিন আনন্দ, গেলে হয়তো সবার সঙ্গে দেখা হতো। এতজনের সঙ্গে হয়তো দেখা হতো না। একটা সময় তো দেখা হবেই। দুজন-চারজন করে। আবার অন্যভাবে চিন্তা করলে, এই উৎসবটায়ও তো আমি বারবার আসতে পারতাম না। তাই না? আবার এত বড় উৎসবে বাইরের দেশের মানুষ জানুক যে, বাংলাদেশের চলচ্চিত্র ইন্ডাস্ট্রি থেকে অন্তত কেউ এসেছে। তাই উৎসবটি বেশি গুরুত্ব পেয়েছে আমার কাছে।

 

এখন তো বাইরের দেশেও বাংলাদেশি সিনেমা সমাদৃত হচ্ছে, দেশের হলে হলে দর্শক ভিড়ছে- এটাকে কতটা আশাব্যঞ্জক মনে হচ্ছে?

আমি এ ব্যাপারটি নিয়ে অনেক আশাবাদী। এখন আমাদের চলচ্চিত্র যে অবস্থানে সেটি ভালো বিষয়। আসলে হলগুলোকে বাঁচাতে হবে। হলগুলো না বাঁচালে তো চলচ্চিত্র হবে না। চলচ্চিত্র বানালে আপনি কোথায় চালাবেন? সেটি ভাবার বিষয়। হ্যাঁ, সিনেপ্লেক্স আছে। তবে হলের মতো মজা কিন্তু নেই সিনেপ্লেক্সে দেখার। পুরো বিশ্ব কিন্তু হল ভেঙে সিনেপ্লেক্স করছে। তবুও পুরো বাঙালি চায় খোলামেলা বসে সিনেমা দেখার পরিবেশ। আর মফস্বলে যারা থাকে তারা ছোট জায়গায় বসে সিনেমা দেখলেও তাকে বড় মনে করে। তবে হ্যাঁ, সিনেমা হল থাকলে ভালো লাগে। আর যে সিনেমাগুলো বাইরে থেকে আমদানি হচ্ছে সেগুলোও চলা উচিত। বাইরেও চলা উচিত আমাদের সিনেমা। যেন দুই দেশের শিল্প-সংস্কৃতি বিনিময় হয়। সব দেশের শিল্পী, টেকনিশিয়ান যেন এক কাতারে এসে মিলে যায়। একই যেন মনে হয়।

 

আপনি সিনেমা নির্মাণ করেছেন। বানিয়েছেন মুক্তিযুদ্ধের সিনেমা ‘ফিরে দেখা’। এটা কী অবস্থায় রয়েছে? কবে রিলিজ দেবেন?

সরকারি অনুদানপ্রাপ্ত ‘ফিরে দেখা’র কাজ শেষ করে এরই মধ্যে আনকাট সেন্সর ছাড়পত্র পেয়েছে। ৩ মার্চ সিনেমাটি মুক্তি দেওয়ার পরিকল্পনা করেছি। ফেব্রুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে প্রচারণার কাজ করব। এত তাড়াতাড়ি পাবলিসিটির কাজ না করে দুই সপ্তাহ আগে থেকে করলে মানুষ জানবে। আর আমি আশাবাদী সিনেমাটি নিয়ে। যে গল্প নিয়ে সিনেমাটি বানিয়েছি, সেখানে স্বয়ংসম্পূর্ণভাবে ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করেছি। আমার দর্শক তো আছেই, এখনকার সময়ের অনেকেই ইউটিউবে আমাদের সেসব সিনেমা দেখে, চেনে, জানে- এটা আমার জন্য অনেক বড় পাওয়া। আমি বলব, যারা আমার সিনেমা দেখেছেন তারা পরিবার নিয়ে ‘ফিরে দেখা’ দেখতে পারবেন। সবাই সিনেমাটি দেখবেন। 

 

নিজের নির্মাণে অভিনয়ও করেছেন...

অনেক দিন পর পর্দায় হাজির হচ্ছি। আমি নিজে অভিনয় করেছি, ইলিয়াস কাঞ্চনও আছেন। নিরব, স্পর্শিয়াসহ অনেক শিল্পী রয়েছেন সিনেমাটিতে। আপনারা যদি হলে গিয়ে সিনেমাটি দেখেন তাহলে পরবর্তী সিনেমা বানাতে উৎসাহ পাব।

 

দীর্ঘদিন পর রোজিনা-কাঞ্চন জুটিকে পর্দায় দর্শকরা গ্রহণ করবে?

সবাই তো চিনে রোজিনা-কাঞ্চনকে। আল্লাহর রহমতে এখনো আমাদের সিনেমা যারা দেখেছেন অনেকেই বেঁচে আছেন। তাদের পরবর্তী প্রজন্মের অনেকেই আমাদের সিনেমা দেখেছেন। আমার মনে হয় না যে, কাঞ্চন-রোজিনাকে দর্শকরা চিনতে পারবে না! আমার মনে হয়, আমাদের জুটি দর্শকরা সানন্দেই গ্রহণ করবে। 

 

শুনেছি নতুন আরেকটি সিনেমার কাজ শুরু করতে যাচ্ছেন। সেটির আপডেট কী?

স্ক্রিপ্ট শেষ করেছি। এটি লিখেছেন ছটকু আহমেদ। গল্পের নাম দিয়েছি ‘এখনই সময়’। মূলত এটি যৌতুকবিরোধী একটি গল্প। তবে আগে ‘ফিরে দেখা’ মুক্তি পাক, তারপর এটা নিয়ে কাজ করব। 

 

জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত শিল্পীদের নিয়ে দ্বিধাবিভক্ত শোবিজ। নাটকের-সিনেমার শিল্পীদের মধ্যে এ কাদা ছোড়াছুড়িকে কীভাবে দেখছেন?

এটা তো চলচ্চিত্রের পুরস্কার! এটা কাকে দেওয়া হচ্ছে, চলচ্চিত্রে অভিনয় করা মানুষকেই তো দেওয়া হচ্ছে। নাটক কিংবা চলচ্চিত্র মূল বিষয় তো অভিনয়, শুধু নামটা ভিন্ন। তাই এটা নিয়ে কথা বলা উচিত নয়। কে কী বলছে তা তাদের ব্যক্তিগত বিষয়।  ডলি জহুর আপা ও ইলিয়াস কাঞ্চন আজীবন সম্মাননা পাচ্ছেন আমি তাঁদের অভিনন্দন জানাই। জুড়ি বোর্ডকে ধন্যবাদ জানাই, তারা ভালো সিদ্ধান্ত নিয়েছে। 

 

একটি মসজিদ নির্মাণ করেছেন। শুনেছি এরপর চক্ষু হাসপাতাল করবেন। অগ্রগতি কতদূর?

নিজের জন্মস্থান রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলায় মসজিদটি করেছি। এটি তুরস্কের নকশায় নির্মিত। এ মসজিদটির নামকরণ করা হয়েছে আমার মায়ের নামে (দশ গম্বুজ খাদিজা জামে মসজিদ)। আর হ্যাঁ, এর পাশেই একটি চক্ষু হাসপাতাল করার চিন্তা আছে। শিগগিরই সেটির কাজ ধরতে চাই। কারণ, মরে গেলে কিছু তো থাকবে না।  মানুষের জন্য কিছু করে গেলে সেটিই থেকে যাবে। তাই মানুষের জন্য কিছু করে যেতে চাই। 

সর্বশেষ খবর