বুধবার, ১৮ জানুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা
বিশেষ সাক্ষাৎকার : শ্রীলেখা মিত্র

পুরোপুরি সিঙ্গেল তবে ন্যাড়া একবারই বেলতলায় যায়

ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে অংশ নিতে রবিবার সন্ধ্যায় ঢাকায় এসেছেন ওপার বাংলার অভিনেত্রী শ্রীলেখা মিত্র। তাঁর পরিচালনায় নির্মিত স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘এবং ছাদ’র প্রদর্শনী হয়েছে সোমবার। পাঁচ দিনের ঢাকা সফর, ব্যক্তিগত বিষয় ও সমসাময়িক ব্যস্ততা নিয়ে তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন- পান্থ আফজাল

পুরোপুরি সিঙ্গেল তবে ন্যাড়া একবারই বেলতলায় যায়

নির্মাতা হিসেবে অভিষেক হলো অভিনন্দন আপনাকে!

ধন্যবাদ। ছবিটি কি দেখেছেন? সেকেন্ড ছবিটা কিন্তু আমার। কী রকম লেগেছে সত্যি করে বলেন। অ্যাক্টর হিসেবে অন্যের ডিরেকশনে, অন্যের স্ক্রিপ্টে কাজ করেছি। এবার ক্যামেরার পেছনে প্রথমবার কাজ করা। প্রথম স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘এবং ছাদ’ নিয়ে ঢাকায় এসেছি। নিজের লেখা, নিজের ভাবনা। আসলে পুরস্কার পাওয়া বা না পাওয়াটা বড় বিষয় নয়। পরিচালক হিসেবে সবে হাঁটতে শিখলাম, এটা আমার কাছে বিশাল প্রাপ্তি। আমার সিনেমাটি নির্বাচিত করার জন্য ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের আয়োজকদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। আমার অভিনীত আরেকটি ছবি কিন্তু ২১ তারিখে প্রদর্শিত হবে। সবাই দেখবেন। নির্মাতা বা অভিনেত্রী হিসেবে নয়, ভালোবাসার টানে এসেছি বাংলাদেশে।

 

এতদিন অভিনয় করেছেন, এবার নির্মাণে কোনটাকে বেশি চ্যালেঞ্জিং মনে হচ্ছে?

অ্যাকটিং ও ডিরেকশন কখনো এক আবার কখনো আলাদা। যেহেতু অভিনয়টা করি সেহেতু ক্যামেরার পেছনে একজন অভিনেতার কী কী দরকার, অভিনেতাকে কীভাবে বুঝিয়ে দিলে তার পক্ষে অভিনয় করাটা সহজ হয়- সেটা কিন্তু আমার সবই জানা। সে জন্য আমি খুব ইনজয় করছি। ডিরেক্টর হিসেবে এই জার্নিটা খুবই আনন্দের। আর অফকোর্স ডিরেকশন দেওয়াটা খুবই চ্যালেঞ্জিং বিষয়। আবার অভিনয়টাও কিন্তু চ্যালেঞ্জিং... হাহাহা। আসলে যে কোনো কাজই চ্যালেঞ্জিং। সেটা মন দিয়ে করাটাই ইম্পোর্টেন্ট।

 

এই ছবির প্রযোজকও আপনি...

প্রথম ছবিটা নিজের টাকায় বানিয়েছি। নিজের টাকায় বানানো এই ছবিটি দেখে যদি প্রযোজকদের আমার কাজের প্রতি বিশ্বাস ও আস্থা জন্মায়, তারা যদি এখন লগ্নি করেন, তাহলে আমি পরের প্রজেক্ট বানাব। নিজের টাকায় আর ছবি বানাব না।

 

তাহলে শ্রীলেখা মিত্রকে নিয়মিত ডিরেকশনে দেখা যাবে...

টাকা পেলেই আমি ডিরেকশন দেব। আমাকে টাকাটা পাইয়ে দিন... হাহাহা।

 

আপনার বানানো সিনেমাটি কলকাতা ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল সিলেক্ট করেনি এটা নিয়ে আক্ষেপ কতখানি?

দুঃখ তো আছেই। কলকাতার মানুষ আমার সিনেমাটি দেখতে পারল না। আসলে নিজের শহরে ছবিটি সিলেক্ট হবে না, এমন ধারণা আগেই ছিল। তৃণমূল সরকারের যে ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল মানে মমতা ব্যানার্জির যে ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল এই ছবিটি সিলেক্ট করেনি। তাই ঢাকায় নিজের ছবি নিয়ে আসা। আমার ঢাকার বন্ধুরা তো দেখতে পারছেন, তাতেই খুশি। যদিও আমি কলকাতার মেয়ে। জন্মস্থানও বাংলাদেশ নয়, কলকাতা। তবে আমি নিজে কিন্তু মনে-প্রাণে এখানকার মানুষ। বাবার বাড়ি বাংলাদেশে। আমার পূর্বপুরুষের বসত ছিল মাদারীপুরের ঘটমাঝি গ্রামে। বাবার মুখ থেকে এ দেশের অনেক কথা শুনেছি। তাই এখানে এসে সর্বদা মনে হয়, ঢাকার লোকজন হয়তো আমাকে একটু বেশিই ভালোবাসেন।

 

তার মানে কলকাতা ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে চলচ্চিত্রের সঠিক মূল্যায়ন হয় না?

কিছুটা তো রয়েছেই।  সেখানে যাঁরা চলচ্চিত্র মূল্যায়ন করেন তাঁদের চলচ্চিত্র মূল্যায়ন করার ক্ষমতার ওপর আমার যথেষ্ট প্রশ্ন রয়েছে। তাঁদের মূল্যায়ন করার মতো যোগ্যতা আছে কি না সেটাও প্রশ্নসাপেক্ষ।

 

পশ্চিমবঙ্গে নিজেকে বঞ্চিত  বোধ করেন?

এটা তো বলাই বাহুল্য। আজকাল শিল্পী কম, সেলিব্রিটি বেশি হয়েছে। শিল্পী হতে গেলে তো অনেক কিছু হতে হয়। একটা ভালো মন ও সততা থাকতে হয়। ভালো মানুষ না হলে কিন্তু বড় পর্দায় দেখাতে পারব না।

 

শ্রীলেখার যে কোনো কথা, কাজ মানেই ভাইরাল সর্বদা আলোচনা-সমালোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকেন যা রটে সবই কি সত্যি?

এই বিষয় নিয়ে আমার কিছু কথা রয়েছে। আসলে এ দেশের বেশ কিছু ভুয়া নিউজপোর্টাল আমাকে নিয়ে বিভিন্ন ধরনের চটকদার শিরোনামে নিউজ করে। আমি অনুরোধ করব, আপনারা এ ধরনের নিউজ করবেন না। আমার ১৭ বছরের একটি মেয়ে আছে। আপত্তিকর শিরোনাম দিয়ে আমাকে নিয়ে নিউজ করবেন না আশা করি। বাংলাদেশ আমার বাবার দেশ, এই দেশকে নিয়ে কেউ খারাপ কথা বলুক এটা আমি চাই না।

 

বিয়ে করছেন কবে?

ন্যাড়া একবারই বেলতলায় গেছে!

 

অথচ কম বয়সী ছেলেদের সঙ্গে শ্রীলেখার প্রেমের গুঞ্জন শোনা যায়...

খবরে আসে, শ্রীলেখা ৩০ বছরের ছেলেদের সঙ্গে প্রেম করে, এগুলো পুরোপুরি ভুল কথা। আমি পুরোপুরি সিঙ্গেল। বেশ ভালো আছি। অনেক বয়স হয়েছে। আমার মেয়ের এখন বয়ফ্রেন্ড হওয়ার কথা। এসব আমি (প্রেম) করি না, বিশ্বাস কর (হাসি)।

 

তাহলেপ্রেমে-রোমান্সে আছেন বলছেন কেন?

প্রেমে আছি বলতে, ওই যে আমার জীবে আমার প্রেম। স্বামী বিবেকানন্দ বলেছেন, জীবে প্রেম করে যেই জন, সেই জন সেবিছে ঈশ্বর। যার জন্য ধর্ম নিয়ে রাজনীতি, যেটা আমাদের দেশেও আছে, তার বিরুদ্ধে কথা বলি। একটা মুভমেন্টও শুরু করেছি, হ্যাশট্যাগ মাই রিলিজিয়ন অব লাভ। সুতরাং আমার ধর্মই তো প্রেম।

 

এপারের কাজ দেখা হয় কি? এখানকার কোনো শিল্পীর ভক্ত?

বাংলাদেশি সিনেমা, নাটক, সিরিজ নিয়মিত দেখা হয়। এখন বাংলাদেশে যে কাজগুলো হচ্ছে, সেগুলো অসাধারণ! অনেক কাজ কলকাতার কাজকে ফেল করে দিয়েছে। আর আমি হুমায়ূন আহমেদের চরম ভক্ত। তাঁর লেখা প্রচুর বই পড়েছি। মাঝে হুমায়ূনপুত্র নুহাশ হুমায়ূনের একটা কাজ দেখেছি। ‘পেট কাটা ষ’-ভালো লেগেছে। আর চঞ্চল চৌধুরীর অভিনয় তো ভালো লাগে। আরেকজন ভদ্রলোক আছেন, মোশাররফ করিম; হি ইজ অসাম। অসম্ভব ভালো। এর বাইরে অনেকের নাটক-সিনেমা তো দেখি।

 

বাংলাদেশের ছবিতে অভিনয় করছেন কবে?

পরিচালকের নাম ও ছবির নাম বলতে পারছি না এ মুহূর্তে। তবে ফেরদৌস থাকবেন সম্ভবত। ফেব্রুয়ারিতে এ ছবির শুটিং হবে। আর একটা বিষয় বলে রাখি যা ফেরদৌস কখনো বলে না। বাসু চ্যাটার্জির ‘হঠাৎ বৃষ্টি’র নায়ক ফেরদৌস নামটি কিন্তু আমার দেওয়া। বাসু চ্যাটার্জিকে কিন্তু ফেরদৌস নামটা আমি রিকমান্ড করেছিলাম। তা ফেরদৌস কিন্তু আজ পর্যন্ত কোনো ইন্টারভিউতে বলেনি।

 

ওটিটিতে কবে দেখা যাবে?

খুব শিগগিরই পাবেন। ভালো কাজের প্রস্তাব পেলে অবশ্যই হবে।

 

এখানকার কোন খাবারটি বেশি ভালো লেগেছে?

বাংলাদেশের সব খাবার ভালো। কিন্তু নিজেকে অনেক কষ্টে সংযত করছি। আমার সাইজ দেখে তো বুঝতেই পারছেন। আমি কেমন মোটাসোঁটা। বাংলাদেশের খাবার এত মজার যে, খাবারের টেস্ট নিতে গেলে ওই খাওয়া থামবেই না। আমি লোভী মানুষ।

সর্বশেষ খবর