সোমবার, ২০ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা
সাক্ষাৎকার : অনন্ত জলিল

আর কখনই ছবি প্রযোজনা করব না

আর কখনই ছবি প্রযোজনা করব না

অনন্ত জলিল, বড় পর্দার এ সময়ের ক্রেজ। আসছে ঈদে সিনেমা হলে আসছেন ‘কিল হিম’ ছবিটি নিয়ে।  ছবিতে তাঁর চরিত্র এবং চলচ্চিত্রের অন্যান্য বিষয় নিয়ে সাক্ষাৎকার নিয়েছেন - আলাউদ্দীন মাজিদ

 

শুরুতেই আপনার এখনকার ব্যস্ততা সম্পর্কে জানতে চাই-

বলতে পারেন অনেক ব্যস্ত, একদিকে সিনেমা আর অন্যদিকে ব্যবসার কাজে সময় দিতে হচ্ছে। মানে কাজ আর কাজ নিয়েই বরাবরের মতো এখনো আমি মহাব্যস্ত।

 

‘কিল হিম’ ছবিতে এখন অভিনয় করছেন, ছবিতে দর্শক নতুন কী পেতে যাচ্ছে?

ছবিটি বলতে পারেন পুরোই টুইস্টে ভরা। ছবির সব চরিত্রই মূলত ভিলেন, এমনকি আমি আর বর্ষা মানে এ ছবির নায়ক-নায়িকা দুজনও ভিলেন, বর্ষা আমাকে ভিলেনে পরিণত করে। ভিলেনে ভরা এ ছবির প্রতিটি দৃশ্য দর্শক মহাউৎকণ্ঠার সঙ্গে দেখবে। কারণ ছবির শেষ দৃশ্য পর্যন্ত বোঝতে পারা যাবে না আসলে পরের দৃশ্যে কী হবে। এক কথায় সাসপেন্সের ছবি বলা যায় এটিকে।

 

তাহলে বাণিজ্যিক ছবির নিয়মিত ফর্মুলা প্রেম আর গান থাকছে না?

অবশ্যই থাকছে, এ ছবির দুটি গান শুট করতে শিগগিরই কাশ্মীরে যাব। প্রেম, রোমান্টিক গান, ফাইট থেকে শুরু করে নির্মল আনন্দ ও বিনোদনের সব উপকরণ থাকছে ছবিতে।

 

আপনি সব সময় নিজের প্রযোজনার ছবিতে অভিনয় করেছেন, এবার বাইরের ছবি, এতে পার্থক্য কতটা?

পার্থক্য তো অনেক আছে। যেমন একটি বিষয়ের কথা বলি, আগে নিজের ছবিতে এক শিফটে কাজ করতাম। আর এখন বাইরের এ ছবিতে সকাল ৯টা থেকে রাত ৩-৪টা পর্যন্ত কাজ করে যাচ্ছি। কারণ ছবির প্রযোজক চাইছেন ঈদে ছবিটি মুক্তির জন্য দ্রুত কাজ শেষ করতে। সে হিসেবে নির্মাতাকে সহায়তা করা আমার দায়িত্ব।

 

নিজে আবার কখন ছবি প্রযোজনায় আসছেন?

না, আর কখনই ছবি প্রযোজনায় আসব না। নিজে আর ছবি নির্মাণ করব না। বাইরের নির্মাতাদের ছবিতেই অভিনয় করব।

 

ছবি প্রযোজনা থেকে সরে আসার কারণ কী?

আসলে আমি চলচ্চিত্র শিল্পকে কিছু দিতে চাই। বাইরের প্রোডাকশন হাউসগুলো আমাকে নিয়ে অনেক আগে থেকেই কাজ করার আগ্রহ দেখিয়ে আসছিল। তখন কিন্তু করিনি। এখন দেখছি আমি যদি বাইরের ছবিতে কাজ করি তাহলে চলচ্চিত্রের সঙ্গে যুক্ত সবার উপকার হবে। দর্শক আমার ছবি দেখতে চায় বলে বছরে যদি বাইরের চারটি ছবিতেও কাজ করি তাহলে চলচ্চিত্রের সবার রুটি-রুজির পথ সুগম করবে।

 

চলচ্চিত্রের বর্তমান ব্যবসায়িক অবস্থা কেমন বলে মনে করছেন?

এ প্রশ্নের জবাব দিতে গেলে বলতে হয় গত ঈদুল আজহায় আমার ‘দিন : দ্য ডে’ ছবিটি মুক্তির পর লাখ লাখ দর্শক সিনেমাহলমুখী হয়েছিলেন। আর তাই ওই সময় মুক্তি পাওয়া অন্য ছবিগুলোও আকাশছোঁয়া সফলতা পায়। আমার ছবির কারণেই যে ওই সময় মুক্তিপ্রাপ্ত অন্য ছবি সফল হয় তার প্রমাণ ঈদুল আজহার পর মুক্তি পাওয়া এ পর্যন্ত আর কোনো ছবি তেমনভাবে সফল হয়নি। তাই আমি মনে করি ঈদে আমার অভিনীত ‘কিল হিম’ ছবিটি মুক্তি পেলে বিপুল দর্শক আবারও সিনেমা হলে আসবে এবং অন্য ছবিগুলোও সফল হবে।

 

ভালো ছবি নির্মাণের ধারা কীভাবে ধরে রাখা যায়?

দর্শক দেখতে চায় এমন গল্পের ছবি নির্মাণ করতে হবে। ছবির গল্পে সমসাময়িক চিত্র, উন্নত নির্মাণ, সুস্থ বিনোদনের পাশাপাশি সমৃদ্ধ বাণী থাকলে সেই ছবি যে অবশ্যই দর্শক দেখতে সিনেমা হলে ফিরে আসে তার প্রমাণ একাধিকবার পাওয়া গেছে। এই কনসেপ্ট নিয়েই ভালো ছবি নির্মাণের ধারা বজায় রাখতে হবে।

 

ভালো গল্প বলতে আসলে কী বোঝাতে চাইছেন?

ভালো গল্প মানে মৌলিক গল্প হতে হবে। গল্পে দেশ, সমাজ, পরিবার, থ্রিলার, অ্যাকশন, রোমান্স থেকে শুরু করে ফুল প্যাকেজের ব্যবস্থা থাকতে হবে। শুধু অ্যাকশন বা রোমান্স দিয়ে ছবি বানিয়ে লাভ নেই। এখনকার ছবির গল্প হতে হবে যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে নতুন প্রজন্মকে ঘিরে। একদিকে নতুন প্রজন্মের চাহিদাকে প্রাধান্য দিতে হবে অন্যদিকে নতুন প্রজন্ম যাতে দেশ, পরিবার আর সমাজের জন্য ক্রিয়েটিভ কিছু করার উৎসাহ পায় তা ছবিতে তুলে ধরতে হবে। তাহলে বর্তমান পজিটিভ বাংলাদেশের আগামীটা আরও সুখ ও সমৃদ্ধির হবে। যেমন- ছবিতে যদি দেখানো হয় ছবির ইয়ং নায়ক তার মা-বাবার কথা শুনছেন, দেশ, পরিবার ও সমাজের জন্য কল্যাণকর কাজ করছেন এবং এর সুফলও তিনি পাচ্ছেন, তাহলে বর্তমান প্রজন্ম ছবির গল্পের নায়কের কাজে প্রভাবিত হয়ে নিজেও সৃষ্টিশীল কাজের প্রতি উদ্বুদ্ধ হবে। তাই ছবির গল্প তৈরিতে এ বিষয়টির পাশাপাশি দর্শক কী চায় তা সঠিকভাবে তুলে আনতে এক্সপেরিমেন্ট অত্যন্ত জরুরি।

 

ভালো ছবি নির্মাণে নির্মাতার দায়বোধ কতখানি?

অবশ্যই শতভাগ দায়বোধ নির্মাতার। কারণ তিনি হলেন ক্যাপ্টেন অব দ্য শিপ। একটি দর্শকগ্রহণযোগ্য ছবি নির্মাণে একদিকে যেমন ক্রিয়েটিভিটি দরকার তেমনি অভিজ্ঞতাও প্রয়োজন। আমি পরিষ্কারভাবে বলতে চাই ছবি নির্মাণে ক্রিয়েটিভিটির যেমন বিকল্প নেই তেমনি অভিজ্ঞতাকেও ইগনোর করার সুযোগ নেই। দেশের প্রধান গণমাধ্যম চলচ্চিত্র শিল্পের উন্নয়নে একজন নির্মাতার দায়বোধ শতভাগ থাকতে হবে বলে আমি মনে করি।

সর্বশেষ খবর