সোমবার, ১৩ মার্চ, ২০২৩ ০০:০০ টা

নিজেকে নিজের মতো করে গুছিয়ে নিচ্ছি

নিজেকে নিজের মতো করে গুছিয়ে নিচ্ছি

মেঘে মেঘে বেলা বাড়ে, রোদ-বৃষ্টির খেলা হয়, হারজিৎ বড় কথা নয়, দিন শেষে কাজটিই ভালো-মন্দ পরিমাপের মুখ্য বিষয়।  ঢালিউডের নায়কোত্তম শাকিব খান চলচ্চিত্রের প্রতি অবারিত ডেডিকেশন দিয়ে আজ শীর্ষ নায়কের আসনটি নিজের করে নিয়েছেন। আগামীতে তিনি কী করতে যাচ্ছেন। তাঁর এমন পরিকল্পনার কথাই তুলে ধরেছেন - আলাউদ্দীন মাজিদ

 

কিছু গণমাধ্যম বলছে আপনি যুক্তরাষ্ট্রে, সত্যি কি তাই?

হা... হা... হা... না হেসে পারলাম না। কে কখন দিনকে রাত আর রাতকে দিন বানিয়ে ছাড়ে এসব বোঝাই মুশকিল। আমি তো আমার গুলশানের বাসায় আছি এখন। (মুঠোফোনে কথা)। তাহলে কি অনেকে এখন গুলশানকে যুক্তরাষ্ট্র ভাবতে শুরু করেছে... হা... হা... হা...।

 

বাসায় সময় কীভাবে কাটছে?

আসলে একটু বিশ্রামে থাকতে হচ্ছে, কারণ ওমানে যাওয়ার আগে ‘আগুন’ ছবির শুটিংয়ের সময় পায়ে ব্যথা পেয়েছিলাম। তখন চিকিৎসক বলেছিলেন বেশ কিছুদিন বিশ্রাম নিতে। কিন্তু গত ৪ তারিখে একটি অনুষ্ঠানে যোগ দিতে ওমানে যেতে হয়েছিল। এতে হাঁটাহাঁটি তো বেশি হলো, সঙ্গে স্টেজ পারফর্ম করতে হয়েছে। ফলে পায়ের ব্যথাটা আবার বেড়েছে। তাই এখন একটু বিশ্রামে আছি।

 

‘শের খান’সহ আপনার কয়েকটি ছবির কাজ পিছিয়েছে, এ বিষয়ে কী বলবেন?

অনেক ছবির কাজই নানা কারণে নানা সময় পিছিয়ে যায়। এটি সব ক্ষেত্রেই হয়। আসলে বেশির ভাগ সময় নির্মাতার সুবিধা-অসুবিধার জন্য এমনটি হয়ে থাকে। নির্মাতা তাঁর সুবিধামতো সময়ে কাজ শুরু করবেন বলে জানি এবং আশা করছি।

 

অনুদানেরসহ অনেক ছবিই এর মধ্যেই আপনার প্রযোজনায় শুরু হওয়ার কথা ছিল, কখন শুরু করছেন?

আমি আসলে আর একটু সময় নিয়ে কাজ শুরু করতে চাই। কারণ এখন নির্মাণের জন্য নির্মাণ করলেই হবে না। সিনেমার মতো করেই সিনেমা নির্মাণ করতে হবে। দেখুন, বলিউডের উদাহরণই যদি দিই, তাহলে বলতে হয় কয়েক বছর ধরেই হিন্দি ছবির খুব দুঃসময় চলছিল। কারণ সিনেমার মতো সিনেমা দর্শক পাচ্ছিল না বলে সেগুলো ব্যর্থ হয়েছে। যখনই ‘পাঠান’-এর মতো একটি হাই রেঞ্জের ছবি মুক্তি পেল তখনই তা বলিউডের ইতিহাস হয়ে গেল। হলিউডের কথাও যদি বলি তাহলে দেখুন করোনাকালের পর তাদের ছবিও মুখ থুবড়ে পড়েছিল। কিন্তু ‘নো টাইম টু ডাই’, ‘স্পাইডারম্যান’, ‘অ্যাভাটার’-এর মতো ছবি দিয়ে হলিউড আবার প্রাণ ফিরে পেয়েছে। অন্যদিকে ভারতের তামিল ছবির ক্ষেত্রেও আধুনিক নির্মাণশৈলীর কারণে ‘বাহুবলী’, ‘পুষ্পা’, ‘আরআরআর’সহ আরও কিছু ছবি ব্যবসায়িক রেকর্ড সৃষ্টি করেছে। তাই আমি চাই না কোনোভা্ন্ডেব একটি সিনেমা নির্মাণ করতে। কারণ পৃথিবী এখন এতই ওপেন হয়ে গেছে যে, দর্শককে কোনোভাবে কিছু একটা বানিয়ে দিলেই তারা যে সেটি সাদরে গ্রহণ করে নেবে এই ধারণা ভুল। তাই আমি এখন একটু সময় নিয়ে সব ক্ষেত্রে নিজেকে নিজের মতো করে গুছিয়ে নিচ্ছি।

 

আমি তো এখন শুধু নিজ দেশের জন্য সিনেমা নির্মাণ করতে চাই না।

আমি বরাবরই আমাদের সিনেমা নিয়ে বিশ্বদরবারে প্রতিনিধিত্ব করতে আর সুনাম বয়ে আনতে চাই। এর জন্য চাই নতুন ভেঞ্চার। আসলে এ জন্যই নির্মাণে একটু সময় নিচ্ছি। আমি বলতে চাই চলচ্চিত্র হচ্ছে স্বপ্ননগরী। চলচ্চিত্র মানুষকে স্বপ্ন দেখায়। সেই স্বপ্ন আমি সময় নিয়ে যথাযথভাবে পূরণ করতে চাই।

 

মাঝে মধ্যে একটু আলোর ঝলক দেখা গেলেও চলচ্চিত্রের সংকট কিন্তু কোনোভাবেই কাটছে না, সমাধান কোথায়?

আমি সব সময়ই আশাবাদী। আমার বিশ্বাস এই সংকট অচিরেই কেটে যাবে। রাত যত গভীর হয় সকাল তত নিকটে এগিয়ে আসে। চলচ্চিত্রের ক্ষেত্রে রাতের অন্ধকার অবশ্যই কেটে যাবে। এর জন্য দরকার চলচ্চিত্রের প্রত্যেকের কাজের প্রতি সততা ও ডেডিকেশন। একটা সময় ছিল চলচ্চিত্রের মানুষ তখন ভালো কাজ ছাড়া আর কিছুই বুঝত না। কিন্তু হঠাৎ করে অনেকে কাজ বাদ দিয়ে সমিতিনির্ভর হয়ে পড়ল। এফডিসি হয়ে গেল চলচ্চিত্র নয়, সমিতিনির্ভর একটি প্রতিষ্ঠান। কিছু অযোগ্য লোকের কাছে সিনেমার পরিবর্তে সমিতি হয়ে গেল ধ্যান-জ্ঞান। সমিতির নির্বাচন, পিকনিক, ইফতার পার্টি নিয়ে তাদের যেভাবে ব্যস্ত থাকতে দেখা যায় সিনেমা নিয়ে তত নয়। এতে করে চলচ্চিত্রের বারোটা বেজেই চলেছে। অন্যদিকে জরুরি ছিল এফডিসি থেকে সার্ভার সিস্টেমের মাধ্যমে ছবি প্রদর্শন করা, এফডিসিতে পোস্ট প্রোডাকশনের কাজের ব্যবস্থা করা। এমন আরও অনেক আধুনিক কাজের কোনো ব্যবস্থা নেই এই সংস্থায়। ফলে এফডিসি চলচ্চিত্রের উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে কীভাবে? এফডিসি এখন হয়ে গেছে পরিত্যক্ত পাটকলের মতো। এমন সব দুরবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে পারলেই চলচ্চিত্রের সংকট নিশ্চিত কেটে যাবে।

 

সম্প্রতি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী চলচ্চিত্রের উন্নয়নে কিছু উন্নত পরিকল্পনার কথা বলেছেন, এ বিষয়ে কী বলবেন?

আমাদের প্রধানমন্ত্রী সবসময়ই শিল্প-সংস্কৃতি আর চলচ্চিত্রবান্ধব। তিনি বরাবরই চলচ্চিত্রের উন্নয়নে নিরলস ভূমিকা রেখে যাচ্ছেন। আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর হাত ধরে বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের গোড়াপত্তন হয়েছিল। বাবার স্বপ্নের চলচ্চিত্র শিল্পকে পূর্ণতা দিতে ও সার্থক করতে প্রধানমন্ত্রীর ভূমিকা অনবদ্য প্রশংসার দাবি রাখে। এক্ষেত্রে আমি দৃঢ়ভাবে একটি কথা বলতে চাই, আর তা হলো প্রধানমন্ত্রী সব সেক্টরের উন্নয়নে শতভাগ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। তাঁর এই প্রচেষ্টাকে সফল করার দায়িত্ব যাদের ওপর, এর দায়ভার ন্যস্ত হয় তাঁদের। সবাই যদি সততা ও একাগ্রতা নিয়ে কাজ করে যায় তাহলে প্রধানমন্ত্রীর সব স্বপ্নই সার্থক হবে। বাংলাদেশ সত্যিকার অর্থে সোনার বাংলায় পরিণত হবে।

সর্বশেষ খবর