শুক্রবার, ৩১ মার্চ, ২০২৩ ০০:০০ টা
সাক্ষাৎকার : কাজী হায়াৎ

তরুণ মেধাবী নির্মাতাদের মূলধারায় আসা দরকার

খ্যাতিমান অভিনেতা ও নির্মাতা এবং চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির সভাপতি কাজী হায়াৎ। বর্তমান সময়ে চলচ্চিত্রের অবস্থা এবং চলচ্চিত্রসংক্রান্ত অন্যান্য বিষয়ে কথা বলেছেন তিনি। তাঁর বলা কথা তুলে ধরেছেন- আলাউদ্দীন মাজিদ

তরুণ মেধাবী নির্মাতাদের মূলধারায় আসা দরকার

বর্তমানে দেশীয় চলচ্চিত্রের অবস্থা কোন পর্যায়ে আছে?

দেশীয় চলচ্চিত্রের উন্নতির আর কোনো সম্ভাবনা দেখছি না। বলতে গেলে এ নিয়ে আমি এক প্রকার হতাশ।

 

এই হতাশা কেন?

কারণ সেন্সর বোর্ডের সদস্য হয়ে এই সময়ে যে ছবিগুলো দেখছি তাতে বেশির ভাগের গল্পই নিম্নমানের। প্রাচীন আমলের। নির্মাণশৈলী, অভিনয়সহ  কোনো বিষয়ই আমার কাছে তেমন মানসম্মত মনে হচ্ছে না। তাই বলতে পারি এভাবে চলতে থাকলে দেশীয় চলচ্চিত্রের উন্নতি হবে কী করে।

 

কিন্তু গত ঈদুল আজহায় মুক্তি পাওয়া ‘পরাণ’ ও ‘হাওয়া’ চলচ্চিত্র দুটি দেশ-বিদেশে আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল-

হ্যাঁ, এক্ষেত্রে বলতে পারি আমাদের চলচ্চিত্রের একদিকের উন্নতি হচ্ছে, আর তা হলো শিল্প-মানসম্মত চলচ্চিত্র। এসব চলচ্চিত্র নির্মাণ করছেন মেধাবী লোকজন। মেধাবীরা যদি মূলধারার চলচ্চিত্রে আসতেন, এখানে কাজ করতেন তাহলে আমার ধারণা আমাদের চলচ্চিত্রশিল্পের সামগ্রিক উন্নয়ন হতো। এক্ষেত্রে আমাদের মূলধারা মেধাশূন্য হয়ে গেছে বলব না। যারা মেধাবী আছেন তাদের হাতে চলচ্চিত্রটি নেই।

 

কেন নেই?

না থাকার কারণ হলো চলচ্চিত্রে যারা নতুন লগ্নি করতে আসছেন মানে প্রযোজক তাদের সঙ্গে গল্প, বাজেটসহ নানা বিষয়ে সিনিয়র মেধাবী নির্মাতাদের বনিবনা হয় না। তারা চান ১০-২০ লাখ টাকায় একটি ছবি নির্মাণ করতে। যা অসম্ভব।

 

এ অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসার পথ কী?

না, কোনো পথ আমি দেখছি না। তবে যদি সিনেমা হলের উন্নয়ন হয়, সংখ্যা বাড়ে তাহলে লগ্নিকারকরা বিনিয়োগ ফেরত পাওয়ার নিশ্চয়তা পেয়ে চলচ্চিত্র নির্মাণে বেশি টাকা লগ্নি করতে সাহস পাবেন।

 

চলচ্চিত্র নাকি সিনেমা হল সংকটের কারণে চলচ্চিত্র জগৎ স্থবির এখন?

এক্ষেত্রে সেই প্রবাদের কথাই মনে পড়ছে, তা হলো ডিম আগে নাকি মুরগি আগে। আসলে চলচ্চিত্রের উন্নয়নে চলচ্চিত্র নির্মাণ ও সিনেমা হলের সংখ্যা দুটি একই সঙ্গে প্যারালালভাবে বাড়াতে হবে। না হলে এই স্থবিরতা কখনোই কাটবে না।

 

সিনেমা হল বাঁচাতে সিনেমা হল মালিকরা উপমহাদেশীয় চলচ্চিত্র আমদানির পক্ষে, আপনি কী বলেন?

সিনেমা হল মালিকদের দৃষ্টিকোণ থেকে এ প্রস্তাব খারাপ বলে মনে করি না। যেহেতু আমরা নানা প্রতিকূলতায় মানসম্মত ও পর্যাপ্ত পরিমাণে ছবি তাদের দিতে পারছি না। তাই তাদের ব্যবসা বাঁচাতে তাদের যে কোনো উদ্যোগ নিতেই হবে বলে আমার অভিমত।

 

এতে দেশীয় চলচ্চিত্রের ক্ষতি হবে না?

এটি আসলে বিদেশি ছবি আসার পর পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করেই বলা যাবে। এর আগে কোনো মন্তব্য করা কঠিন।

 

অভিনেতা-নাট্যজন মামুনুর রশীদ বলেছেন বিনোদনে রুচির দুর্ভিক্ষ দেখা দিয়েছে, আসলে কি তাই?

রুচির অবক্ষয় হয়েছে মানুষের, এ কথা সত্যি। কারণ মানুষ প্রতিনিয়ত রুচি বদলাতে বদলাতে খারাপের দিকেই যাচ্ছে। এটি সমগ্র বিশ্বেই হচ্ছে। দুটি দেশের যুদ্ধ আমাদের বিশ্বযুদ্ধের দিকে এগিয়ে নিচ্ছে। এর ফলে যে নানা সংকট তৈরি হচ্ছে তা থেকে কিন্তু বিশ্ব সংস্কৃতিও বাদ যাচ্ছে না। এতে মানবিকতা, স্বাধীনতা, রুচিবোধ সবকিছুই বাধাগ্রস্ত হচ্ছে এবং অবক্ষয় বাড়ছে। তাই মামুনুর রশীদের বক্তব্যকে আমি সমর্থন করছি।

 

পরিচালক সমিতির সভাপতি হিসেবে কর্মহীন নির্মাতাদের জন্য কী ব্যবস্থা নিচ্ছেন?

তাদের জন্য কাজের ব্যবস্থার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল আই স্বল্প বিনিয়োগে বেশ কিছু মূলধারার চলচ্চিত্র নির্মাণ করবে। এতে আপাতত অনেক নির্মাতার বেকারত্ব ঘুচবে। বাকি আরও পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছি।

 

আপনার নতুন নির্মাণ কী আসছে?

আপাতত ‘গ্রিনকার্ড’ ছবিটির নির্মাণকাজ শেষ করছি। এরপর নতুন নির্মাণের কাজে হাত দেব। আসলে আমি মৃত্যুর পূর্বমুহূর্ত পর্যন্ত চলচ্চিত্র নির্মাণ করে যেতে চাই। কারণ চলচ্চিত্র ছাড়া আমি থাকতে পারব না। চলচ্চিত্র যেমন আমার নেশা থেকে পেশায় পরিণত হয়েছে তেমনি আমাদের চলচ্চিত্রশিল্পের উন্নয়নের জন্য আমাকে কাজ করে যেতেই হবে।  তাই যত দিন বাঁচি চলচ্চিত্র নিয়েই বাঁচব।

 

সর্বশেষ খবর