বৃহস্পতিবার, ৪ মে, ২০২৩ ০০:০০ টা

জয়া কাহিনি

পান্থ আফজাল

জয়া কাহিনি

জয়া আহসান। যার অনবদ্য অভিনয় দর্শককে সম্মোহনী শক্তিতে পর্দায় টানে। পর্দায় তার সরব উপস্থিতি মানেই চারদিকে পিনপতন নিস্তব্ধতা। যেন তিনি ভূসর্গে নেমে আসা কোনো এক দেবী, অপ্সরা। জয়া আহসান, এই নামটাই সম্পূর্ণ পরিচয়ের জন্য যথেষ্ট। দুই বাংলার সিনে-দুনিয়ার এই মুহূর্তে বহুল আলোচিত তারকা তিনি। যার জীবনটাই বহুল নান্দনিকতায় ভরপুর। আকাশচুম্বী জনপ্রিয়তা নিয়ে তিনি মর্ত্যে এসে সাফল্যের পালক মেলে উড়ে বেড়াচ্ছেন। আর নানামাত্রিক চরিত্রে অভিনয়ে দর্শকের মুগ্ধতা কাড়ছেন প্রতিনিয়ত। একের পর এক বাঘা বাঘা ছবি এই মুহূর্তে তাঁর জাদুর ঝুলিতে। ঢাকা-কলকাতা মিশন শেষে এই তুলনাহীন পঙ্কজ ত্রিপাঠীদের সঙ্গে বলিউডের ছবিতেও কাজ করছেন। সম্প্রতি মস্কো ফিল্ম ফেস্টিভ্যালের ৪৫তম আসরের মূল প্রতিযোগিতা বিভাগে নির্বাচিত হয় জয়া অভিনীত নুরুল আলম আতিক পরিচালিত সিনেমা ‘পেয়ারার সুবাস’। এ ছাড়াও এই উৎসবে চলচ্চিত্রটির আন্তর্জাতিক প্রিমিয়ারও হয়। তাই এখন বেশ ফুরফুরে মেজাজে আছেন জয়া। এবারই জয়া পরিবারের সঙ্গে এক অন্যরকম ঈদ কাটিয়েছেন। কারণ প্রায় ১২ বছর পর তার ছোট ভাই অদিত দেশে এসে পরিবারের সঙ্গে ঈদ উদযাপন করেছেন। যে কারণে ঈদের খুশি বেড়ে গিয়েছিল জয়ার। এর আগে বোনের সঙ্গে জাপানে ঘুরতে গিয়েছিলেন জয়া আহসান। দেশটির টোকিও, হিরোশিমা, অসাকা, হোকাইদো দ্বীপসহ বেশ কিছু শহরের সৌন্দর্য উপভোগ করেছেন। ঈদের পর এখনো শুটিংয়ে ব্যস্ত হননি জয়া। এমনিতে বাড়ির মানুষের সঙ্গেই সময় কাটাতে ভালোবাসেন জয়া। সেই হিসেবে পরিবারের সঙ্গেই দীর্ঘ সময় কাটে তার।

জয়ার ক্যারিয়ার শুরু হয় ছোট পর্দা দিয়ে। বহু নাটক, টেলিফিল্মে অভিনয় করেছেন, হয়েছেন বহু বিজ্ঞাপনের মডেলও। জয়ার চলচ্চিত্রে অভিষেক হয় ২০০৪ সালে মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর ‘ব্যাচেলর’ দিয়ে। জয়া বরাবরই সময় নিয়ে সিনেমা করেছেন। যার ফলে তার একটি সিনেমা থেকে অন্য সিনেমার মধ্যকার সময় বেশ লম্বা। ‘ব্যাচেলর’-এর পর ছয় বছর বিরতি দিয়ে দ্বিতীয় সিনেমা নুরুল আলম আতিকের ‘ডুবসাঁতার’ করেন। যদিও প্রথম দুটি সিনেমায় জয়া তার অভিনয় দক্ষতা ফুটিয়ে তুললেও সেভাবে জনপ্রিয়তা পাননি। ২০১১ সালে এদেশে মুক্তি পায় তানিম নূর পরিচালিত ‘ফিরে এসো বেহুলা’ এবং নাসির উদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু পরিচালিত ‘গেরিলা’। এ দুটি ছবির মাধ্যমে তিনি ব্যাপক প্রশংসিত হন। গেরিলা চলচ্চিত্রে তিনি বিলকিস বানু চরিত্রে অভিনয় করেন। ছবিটি তাকে এনে দেয় জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। এরপর ২০১২ সালে রেদওয়ান রনির ‘চোরাবালি’তে কলকাতার ইন্দ্রনীল সেনগুপ্তের সঙ্গে সাংবাদিক নবনী আফরোজ চরিত্রে অভিনয় করেন। কলকাতায় হন আলোচিত। আর অর্জন করেন দ্বিতীয়বারের মতো শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। ২০১৩ সালে তিনি কান চলচ্চিত্র উৎসবে নিমন্ত্রণ পান। একই বছরে তিনি শাফি উদ্দিন শাফির ‘পূর্ণদৈর্ঘ্য প্রেম কাহিনী’ সিনেমায় শাকিব খানের বিপরীতে অভিনয় করেন। পান তৃতীয়বারের মতো জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। ২০১৫ সালে অনিমেষ আইচের ‘জিরো ডিগ্রি’তে মাহফুজের বিপরীতে অভিনয় করে জয়া দর্শক প্রশংসা জমাতে না পারলেও অর্জন করেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। একই বছরে তিনি অভিনয় করেন ওপার বাংলার সৃজিত মুখার্জির ‘রাজকাহিনী’তে। দেশভাগের কাহিনি নিয়ে নির্মিত এই সিনেমায় সাহসী চরিত্রে অভিনয় করে ভূয়সী প্রশংসার পাশাপাশি কিছুটা সমালোচনার শিকারও হন। পরের বছর করেন এপারের ‘পূর্ণদৈর্ঘ্য প্রেম কাহিনী ২’ এবং কলকাতায় গোয়েন্দা চরিত্রভিত্তিক সিনেমা ‘ঈগলের চোখ’। ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে মুক্তি পায় তার অভিনীত সাইফুল ইসলাম মান্নুর ‘পুত্র’। ছবিতে একজন অটিস্টিক শিশুর মায়ের ভূমিকায় অভিনয় করেন। এরপর জয়া নিজেই সিনেমা প্রযোজনায় নামেন। সেটা ২০১৮ সালে। তার প্রযোজনায় নির্মিত প্রথম সিনেমা ‘দেবী’। হুমায়ূন আহমেদের বিখ্যাত সৃষ্টি রহস্যময় চরিত্র মিসির আলি সিরিজের গল্প নিয়ে নির্মিত হয় এটি। এ সিনেমায়ও জয়ার অভিনয় দর্শক-সমালোচকদের মুগ্ধ করে। পাশাপাশি সিনেমাটি ব্যবসায়িকভাবেও সফল হয়। এরই মধ্যে বিরসা দাশগুপ্তের নারীবাদী চলচ্চিত্র ‘ক্রিসক্রস’ মুক্তি পায়। এগুলো ছাড়াও জয়া দুই বাংলায় ‘একটি বাঙালি ভূতের গপ্পো’, ‘ভালোবাসার শহর’ ও ‘খাঁচা’তে অভিনয় করেন। তবে তার অভিনীত জনপ্রিয় সফল দুই সিনেমা হচ্ছে ‘বিসর্জন’ ও ‘বিজয়া’। কলকাতার নির্মাতা কৌশিক গাঙ্গুলীর এ দুটি সিনেমায় অভিনয় করে তিনি জিতে নেন দুই বাংলার দর্শকদের মন। এছাড়া ‘বিসর্জন’র জন্য ভারতের জি সিনে পুরস্কার ও ফিল্মফেয়ার পুরস্কার অর্জন করেন।

জয়ার ভারত মিশন শুরু হয় ‘আবর্ত’ দিয়ে। সেটা ২০১৩ সালের ঘটনা। ‘রবিবার’-এর পর ‘কণ্ঠ’ ছবিতে অভিনয় করে দারুণ প্রশংসা কুড়ান তিনি। দুই বাংলায় সম্মান, সম্মাননা, খ্যাতি, ভালোবাসা-কোনোটিই কম পাননি জয়া। খোদ ভারত থেকেই পেয়েছেন ‘তুমি অনন্যা ২০২০’ সম্মাননা। এদিকে পশ্চিমবঙ্গে করেছেন ‘বিনিসুতোয়’, ‘ভূত পরী’, ‘অর্ধাঙ্গিনী’, ‘ওসিডি’, ‘কালান্তর’ ও ‘ঝরা পালক’। ‘ঝরা পালক’ ছবিতে কবি জীবনানন্দ দাশের স্ত্রী লাবণ্য দাশের ভূমিকায় দেখা যায় জয়াকে। এছাড়া বাংলাদেশে মুক্তি পায় তার ‘অলাতচক্র’, মাহমুদ দিদারের ‘বিউটি সার্কাস’। ‘বিউটি সার্কাস’ ছবিতে তার অনবদ্য অভিনয় সবাইকে মুগ্ধ করে রাখে।

সম্প্রতি মস্কো ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে ‘পেয়ারার সুবাস’ প্রদর্শিত হলেও এদেশে এখনো মুক্তি পায়নি এটি। অন্যদিকে আকরাম খানের ‘নকশীকাঁথার জমিন’ও রয়েছে মুক্তির অপেক্ষায়। হাতে রয়েছে ‘ফেরেশতে’র মতো সিনেমা। হয়তো অচিরেই তার প্রযোজনা সংস্থা সি-তে সিনেমা ও ফেসকার্ড প্রডাকশন হাউজ থেকে মেজবাউর রহমান সুমনের নির্মাণে নির্মিত হবে সরকারি অনুদানের সিনেমা ‘রইদ’। যার জন্য দর্শক প্রতীক্ষায় বসে রয়েছেন। কলকাতায় অনেকগুলো প্রজেক্ট হাতে রয়েছে জয়ার।

এই অভিনেত্রীর সব ছবিই দারুণ জনপ্রিয়। তবে যদি কাউকে বলা হয় সেরা কয়েকটি ছবির নাম বলতে, সে নিশ্চয়ই ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যাবেন হিসাব করে। আর রহস্যময়ী জয়ার বয়সটা তো রহস্যময়! তার সৌন্দর্যের গোপন রহস্যও সবার অজানা। যতই দিন যাচ্ছে, শিল্পী জয়ার ঔজ্জ্বল্য তত বেড়েই চলছে। আর জয়ার  নামের সঙ্গে নিত্যনতুন সাফল্যের পালক যুক্ত হচ্ছে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর