বৃহস্পতিবার, ১১ মে, ২০২৩ ০০:০০ টা
সাক্ষাৎকার :- ফারজানা ছবি

শিল্পীকে অভিনয়গুণে টিকে থাকতে হয়

শিল্পীকে অভিনয়গুণে টিকে থাকতে হয়

টিভি নাটকের জনপ্রিয় অভিনেত্রী ফারজানা ছবি। সম্প্রতি ওয়েব ফিল্ম ও চলচ্চিত্রে বৈচিত্র্যময় ও চ্যালেঞ্জিং চরিত্রে অভিনয় করে মুগ্ধ করেছেন দর্শকদের। ৭৬তম কান-এর বাণিজ্যিক শাখা মার্শে দ্যু ফিল্মে এবার প্রিমিয়ার হতে যাচ্ছে ফারজানা ছবি অভিনীত সিনেমা ‘মা’। এ প্রসঙ্গ ও সাম্প্রতিক বিভিন্ন বিষয়ে তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন- পান্থ আফজাল

 

কেমন আছেন? পরিবারকে নিয়ে বিদেশ ভ্রমণ কেমন হলো?

ভালো আছি। কিছুদিন আগে সবাই মিলে ঘুরতে গিয়েছিলাম থাইল্যান্ড ও সিঙ্গাপুরে। অনেক সুন্দর সময় কাটিয়েছি। থাইল্যান্ড থেকে ব্যাংককে গিয়ে পুরনো ঘ্রাণমাখা শহর আয়ুত্তায়িয়া ঘুরে দেখলাম। দেখলাম প্রাচীন সব বুদ্ধিস্ট টেম্পেল। এ অভিজ্ঞতা অনবদ্য-অনিন্দ্য সুন্দর ছিল। ব্যাংকক থেকে ফুকেটে গিয়ে সুন্দর কিছু স্থানে ঘুরেছি। সিঙ্গাপুরে সেন্টোসা আইল্যান্ড, ইউনিভার্সেল স্টুডিও, মাদাম টুসো জাদুঘরসহ আরও অনেক জায়গায় গিয়েছি। যেন এ এক কল্পনার রাজ্য। এখন মুহূর্তগুলো দেখছি আর মনে হচ্ছে, জীবন আমার হাতের মুঠোয় ধরা সকালের সেই সোনালি রোদটার মতোই ঝলমলে সুন্দর। আহা কী মধুর এই বেঁচে থাকা!

 

কান উৎসবের মার্শে দ্যু ফিল্মে প্রিমিয়ার হচ্ছে ‘মা’। কেমন লাগছে বিষয়টি ভেবে?

বিষয়টি আমাদের জন্য অত্যন্ত আনন্দের ও গর্বের। আমাদের দেশের ছবি এমন একটি বড় আয়োজনের সহযাত্রী হচ্ছে, তা ভাবতেই একটা অদ্ভুত ভালো লাগা কাজ করছে। অরণ্য আনোয়ার নির্মিত এই ‘মা’ ছবির মাধ্যমে বাংলাদেশ বিশ্বের বিভিন্ন ভাষাভাষি মানুষের কাছে পরিচিত হবে- এ আনন্দ অসীম প্রাপ্তির। অরণ্যের সঙ্গে আগেও অনেক কাজ করেছি। তবে চলচ্চিত্র হিসেবে তাঁর সঙ্গে এটিই আমার প্রথম কাজ। আমরা কিন্তু অনেক কমটেমপোরারি কাজ করি। তবে মা এটি থেকে ভিন্ন। এটিতে রয়েছে একটি ইতিহাস, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি, বিরোধ, মুক্তিযুদ্ধ, প্রেম, মমতা, হিংস্রতা ও ঘৃণার অনবদ্য এক মিশ্রণ। ছবিটির গল্প মুক্তিযুদ্ধের সময়ের। পুরো সিনেমার জার্নি অনেক স্মৃতিময়।

 

মা-এ আপনার অভিনীত চরিত্রটি কেমন?

এতে একজন বৌদ্ধধর্মাবলম্বী নারীর চরিত্রে অভিনয় করেছি। আমার নাম থাকে নীরা, যার সন্তানের মৃত্যু হয় ভুল চিকিৎসায়। মুক্তিযুদ্ধের সময় আমার স্বামীও মারা যায় যুদ্ধে। এই গল্পটি দিয়ে মূলত ‘মা’ সিনেমাটির শুরু। আসলে প্রতিটি চরিত্রই আমার সমান গুরুত্ব বহন করে। আমি সব সময় যে ধরনের গল্প ও চরিত্রে অভিনয়ের চেষ্টা করি, এটি সে রকমই একটি কাজ। এই ছবিতে পরিচালক থেকে শুরু করে সবাই আন্তরিক হয়েই কাজ করেছেন। আমি এতে অভিনয়ের সুযোগ পেয়ে কৃতজ্ঞ পরিচালকের কাছে। আশা করছি, ছবিটি সবার ভালো লাগবে।

 

দেশের প্রেক্ষাগৃহে ‘মা’ আসছে কবে?

এই তো ১৯ মে। আশা রাখছি, সব দর্শক হলে গিয়ে সিনেমাটি দেখবেন।

 

রাফির ‘ফ্রাইডে’তে আপনার অভিনীত রাহেলা চরিত্রটিও দর্শকদের মুগ্ধ করেছে...

এটি সত্যিই আমার জন্য একটি বড় পাওয়া। এই রাহেলা চরিত্রটির মধ্যে তিনটি বয়সের লেয়ার ছিল। প্রথমে আমাকে দেখানো হয়েছে ২০-২১ বছর বয়সে, এরপর ৩২-৩৩ এবং সর্বশেষ ৪৬-৪৭ বয়সের। তবে যে তিন বয়স ধারণ করেছি বাস্তবে সেগুলোর কোনো সময়েরই আমি নই। আবার পরিণত বয়সে দেখানো হয়েছে আমার বড় দুটি কন্যাসন্তান। আমি খুবই কৃতজ্ঞ যে, পরিচালক আমার ওপর যথেষ্ট আস্থা রেখেছিলেন এই চরিত্রটি করার জন্য। এই ফিল্মটি সত্য ঘটনা অবলম্বনে। এটা তাই আমার জন্য চ্যালেঞ্জের ছিল। তেমনি একটি দায়িত্বের জায়গাও ছিল। আমিও চেয়েছি পুরো চরিত্রটির সঠিক জাস্টিফাই করতে। তাই অনেক বেশি সিনসিয়ার ছিলাম চরিত্রটি নিয়ে। অনেক কমপ্লিকেডেট দৃশ্য ছিল। তবে আমি সব কিছু মিলিয়ে ফুল এফোর্ট দেওয়ার চেষ্টা করেছি। আমি সব সময়ই চেষ্টা করি যে কোনো কাজ যত্ন দিয়ে করতে। তা ফ্রাইডেতেও করেছি।

 

নতুন কী কাজ আসবে?

কয়েকটি সিনেমা সামনে আসবে। এরমধ্যে রাশিদ পলাশের ময়ূরাক্ষী ও অঞ্জন আইচের কানামাছি রয়েছে। কয়েকটি ওয়েবের কাজও করেছি। আসলে আমি গতানুগতিক কাজ করতে চাইনি। সব সময় চেয়েছি ভিন্নধর্মী ও চ্যালেঞ্জিং গল্পে বৈচিত্র্যময় চরিত্র করতে। যেগুলো আমাকে অভিনয়শিল্পী হিসেবে সমৃদ্ধ করবে। আগের কাজগুলোও এভাবে করার চেষ্টা করেছি। তাই যে কাজই করি না কেন, আমার কাছে দর্শকদের একটা এক্সপেকটেশন তৈরি হয়েছে। সর্বদা চাই ভালো কাজ করতে।

 

দীর্ঘ সময় ধরে এখনো সমানতালে অভিনয় করছেন। এই টিকে থাকার রহস্য কী?

শিল্পীকে তাঁর অভিনয়গুণে টিকে থাকতে হয়। এখানে কাজ ছাড়া বেশি দিন টিকে থাকা যায় না। শিল্পী তাঁর কাজ দিয়ে নির্মাতাদের আস্থা তৈরি করবেন। তখন সবাই তাঁকে দিয়ে কাজ করানোর জন্য আগ্রহী হয়ে উঠবে। এ ছাড়া বৈচিত্র্যময় চরিত্র দিয়ে দর্শকদের মনে জায়গা করে নিতে হয়। আর থাকতে হয় কাজের প্রতি স্বচ্ছতা, সততা আর নিষ্ঠা। তবে এখন নির্মাণের বৈচিত্র্যতার মতো ট্র্যাডিশনাল অ্যাক্টিংয়ের বাইরে অভিনয়েও নতুনত্ব থাকা উচিত। 

 

ভিউয়ের প্রতিযোগিতা প্রসঙ্গে কী বলবেন?

সবাই ভিউ দেখে। ভিউয়ের ওপর সব কিছু পরিমাপ করা ঠিক নয়। অনেক সস্তা কাজের ভিউ বেশি হয়। আবার অনেক মানসম্পন্ন কাজের ভিউ কম হয়। তবে এখন ডিজিটাল প্ল্যাটফরম আসার কারণে সব কাজের মূল্যায়ন হচ্ছে। ওটিটিতে ঠিকঠাক বাজেট পাওয়া যায়।

 

ছেলে অনির্বাণও কি মায়ের পথে হাঁটবে?

আমার মতোই আমার হাজব্যান্ডের অনেক আগ্রহ অনির্বাণ অভিনয় করুক, মায়ের মতোই শিল্পী হোক।

সর্বশেষ খবর