রবিবার, ২১ মে, ২০২৩ ০০:০০ টা
মাতৃত্বের লড়াইয়ে রানির দাপুটে অভিনয়

ওটিটি কাঁপানো মিসেস চ্যাটার্জি ভার্সেস নরওয়ে

শোবিজ ডেস্ক

ওটিটি কাঁপানো মিসেস চ্যাটার্জি ভার্সেস নরওয়ে

বাস্তব ঘটনা নিয়ে তৈরি হয়েছে ‘মিসেস চ্যাটার্জি ভার্সেস নরওয়ে’ সিনেমাটি। অসীমা ছিব্বর পরিচালিত এই ছবি সাগরিকা ভট্টাচার্যের জীবন নিয়ে। ২০১২ সালে বিরাটির সাগরিকা, নরওয়ে সরকারের বিরুদ্ধে নিজের সন্তানের হেফাজত নিয়ে আইনি লড়াই হেডলাইন হয়েছিল। সাগরিকার লেখা বইকে ভিত্তি করে মাতৃত্বের এই লড়াই নিয়েই তৈরি হয় ‘মিসেস চ্যাটার্জি ভার্সেস নরওয়ে’। সাগরিকা এখানে দেবিকা এবং সে চরিত্রেই রানি। অনির্বাণ ভট্টাচার্য রানির স্বামী অনিরুদ্ধ চ্যাটার্জির চরিত্রে। ছবির শুরুতেই দেখা যায়, নরওয়ের চাইল্ড ওয়েলফেয়ার সংস্থা দেবিকা ও অনিরুদ্ধর সন্তান শুভ এবং সুচিকে তুলে নিয়ে যায়। হলুদ ঢাকাই শাড়ি পরে প্রায় খালি পায়ে রানির দৌড় নরওয়ের রাস্তায়। মূল কথা হলো- ভারতীয় অভিবাসী দেবিকা চট্টোপাধ্যায়ের গল্প বলা হয়েছে এই ছবিতে। যে নিজের শিশুদের কাস্টডি পাওয়ার জন্য নরওয়ে সরকারের সঙ্গে লড়াই করতেও দ্বিধা করেনি। ২০১২ সালে সাগরিকা চক্রবর্তীর সঙ্গে ঘটা ঘটনা নিয়েই তৈরি হয়েছে মিসেস চ্যাটার্জি ভার্সেস নরওয়ে। ভারতীয় এক মহিলা কীভাবে সব বাধা পেরিয়ে নিজের সন্তানদের কাস্টডি পাওয়ার চেষ্টা করেছিলেন, সেটিই ফুটিয়ে তোলা হয়েছে সেলুলয়েডের পর্দায়। সাগরিকার ঘটনা ভারত এবং নরওয়ের সম্পর্কের ওপর প্রভাব ফেলেছিল। সিনেমায় সাগরিকার চরিত্রে অভিনয় করেছেন রানি মুখার্জি। তবে সাগরিকা নামটি ব্যবহার করা হয়নি ছবিতে। পরিবর্তে দেবিকা নাম ব্যবহার করা হয়েছে। চিত্রনাট্য অনুযায়ী দেবিকা নরওয়েতে থাকলেও নিজের মধ্যে থাকা ভারতীয়কে মরে যেতে দিতে চায় না। নরওয়ের ঠান্ডা আবহাওয়ায়ও সে শাড়ি পরতে ভালোবাসে। নিজের হাতে সন্তানদের খাইয়ে দিতে পছন্দ করে। দেবিকার স্বামী দ্রুত নরওয়ের ভাষা এবং আচার-আচরণ শিখে ফেলে। কিন্তু ভারতীয় হিসেবেই নিজের পরিচিতি দিতে পছন্দ করে দেবিকা। বাংলায় কথা বলতে শুরু করে। ভারতীয় সংস্কৃতিকে বিদায় না জানানোর ফলে নরওয়ের চাইল্ডকেয়ার সার্ভিসের কিছু দুর্নীতিগ্রস্ত অফিসারের নজর পড়ে তার ওপর। হাত দিয়ে খাবার খাওয়া, বাচ্চাকে খাবার খাওয়ানো বা সন্তানের সঙ্গে ঘুমানোর মতো অভ্যাসগুলোকে বদভ্যাস বলে চিহ্নিত করে তারা। একপর্যায়ে বাচ্চাদের দেবিকার কাছ থেকে দূরে সরিয়ে নেওয়া হয়। ফস্টার কেয়ারে চলে যায় তার সন্তানরা। এরপর দেবিকা নিজেকে সামলাতে পারে না। যেভাবেই হোক সন্তানদের ফিরে পাওয়ার চেষ্টা করে সে। ভুল হয় এখানেই। একেবারে খড়গহস্ত হয়ে ওঠে দেবিকা। আর এ ব্যবহারেই আরও বড় সমস্যার সৃষ্টি হয়। দেবিকা নিজের সন্তানদের ফিরে পাওয়ার জন্য অপহরণ করারও চেষ্টা করে। এরপর নরওয়ের প্রশাসন তার বিরুদ্ধে আরও কড়া হয়। এরপরও লড়াই থামায় না দেবিকা। ভারত এবং নরওয়ের বিভিন্ন আদালতে শিশুদের কাস্টডি ফিরে পাওয়ার জন্য লড়াই করতে থাকে সে। একপর্যায়ে তাকে মানসিকভাবে অসুস্থ বলে ঘোষণা করা হয়। ভারতের চিত্র সমালোচকদের মতে, পরিচালক এবং চিত্রনাট্যকার দর্শককে প্রথমেই বুঝিয়ে দিলেন এই ছবির মেজাজ উঁচু তারে বাঁধা। আর পাঁচটা বাঙালি পরিবারের মতোই দেবিকা নতুন বাড়ি আর বাচ্চা সামলাতে হিমশিম, অন্যদিকে অনিরুদ্ধ ব্যস্ত তার অফিসের কাজ নিয়ে। এরই মধ্যে চাইল্ড ওয়েলফেয়ার অফিসারদের রেগুলার ভিজিট। তাদের চোখে, অনেক কিছুই বিচ্যুতি মনে হয়। বাচ্চাকে নিজের হাতে খাওয়ানো, কপালে কালো টিপ এঁকে দেওয়া, বাচ্চাদের মা-বাবার সঙ্গে শোয়া কিংবা অনিরুদ্ধ সংসারের কাজে একেবারেই সাহায্য না করা। বাঙালি সংস্কৃতিতে এসব স্বাভাবিক। স্বামী ঘরের কাজ করে না বেশির ভাগ বাড়িতেই। সেই ইমোশনালি হাইপার দেবিকার ওপর বেশিই শাসন করে অনিরুদ্ধ। একটা দৃশ্য আছে, যেখানে অনিরুদ্ধ চড় মারে দেবিকাকে, পাল্টা দেবিকাও হাত তোলে বরের ওপর। হল ফেটে পড়ে হাততালিতে। বোঝা যায় কিছুতেই হাল ছেড়ে দেওয়ার পাত্রী নয় দেবিকা। পুরো ছবিটাই এক মায়ের আর্তি, তাঁর যন্ত্রণার কথা বলে। অন্য দিকগুলো হালকাভাবে ছুঁয়ে যাওয়া হয়েছে ‘মিসেস চ্যাটার্জি ভার্সেস নরওয়ে’ প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত রানি মুখার্জির ছবি।  একজন মা যখন অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াই করে তখন সিনেমায় আর কোনো কিছু গুরুত্ব পায় না। রানি এই চরিত্রে তাঁর সর্বস্ব দিয়ে অভিনয় করেছেন। তাঁর জন্যই এই ছবি দেখা যায়।

সর্বশেষ খবর