শুক্রবার, ২৬ মে, ২০২৩ ০০:০০ টা

এপার-ওপারজুড়ে জয়া

এপার-ওপারজুড়ে জয়া

দুই বাংলার সিনেমা দুনিয়ার অন্যতম তারকা অভিনেত্রী জয়া আহসান। এই দেবী তাঁর সৌন্দর্যে ও অভিনয়ে এখনো দ্যুতি ছড়াচ্ছেন। ওপার বাংলায় বেশ কয়েকটি সিনেমা রয়েছে তাঁর মুক্তির অপেক্ষায়। ২ জুন অর্ধাঙ্গিনী মুক্তি পাবে।  অভিনয় করেছেন বলিউডের ‘কড়ক সিং’। বিভিন্ন ইস্যুতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও তিনি সর্বদা সরব। এই দেবীকে নিয়ে লিখেছেন- পান্থ আফজাল

 

জয়া আহসান, এ নামটাই সম্পূর্ণ পরিচয়ের জন্য যথেষ্ট। যাঁর অনবদ্য অভিনয়ের ইন্দ্রজালে বিমোহিত সিনেমাপ্রেমীরা। কী এক সম্মোহনী শক্তিতে দর্শককে পর্দায় টানেন এই অপ্সরা! দুই বাংলার সিনে-দুনিয়ার এই মুহূর্তে বহুল আলোচিত তারকা তিনি। আকাশচুম্বী জনপ্রিয়তা নিয়ে তিনি মর্ত্যে এসে সাফল্যের পালক মেলে উড়ে বেড়াচ্ছেন। নানামাত্রিক চরিত্রে অভিনয়ে দর্শকের মুগ্ধতা কাড়ছেন প্রতিনিয়ত। আর বয়স? এই রহস্যময়ী বয়সটাও তো রহস্যময়! তাঁর সৌন্দর্যের গোপন রহস্যও সবার অজানা। একের পর এক বাঘা বাঘা ছবি এই মুহূর্তে রয়েছে জয়ার ঝুলিতে। ঢাকা-কলকাতা মিশন শেষে এই তুলনাহীনা পঙ্কজ ত্রিপাঠীদের সঙ্গে বলিউডের ছবি ‘কড়ক সিং’-এ অভিনয় করেছেন। আগামী মাসের ২ তারিখে তিনি ‘অর্ধাঙ্গিনী’ হয়ে ভক্তদের সামনে আসছেন। সম্প্রতি মস্কো ফিল্ম ফেস্টিভ্যালের ৪৫তম আসরের মূল প্রতিযোগিতা বিভাগে নির্বাচিত হয় জয়া অভিনীত নুরুল আলম আতিক পরিচালিত সিনেমা ‘পেয়ারার সুবাস’। এ ছাড়াও এই উৎসবে চলচ্চিত্রটির আন্তর্জাতিক প্রিমিয়ারও হয়। তাই বেশ ফুরফুরে মেজাজে আছেন জয়া। কিছুদিন আগে বোনের সঙ্গে জাপানে ঘুরতে গিয়েছিলেন জয়া। বেড়ানো শেষে এখনো তেমন করে শুটিংয়ে ব্যস্ত হননি তিনি। তাই এ সময় মুক্তি প্রতীক্ষিত সিনেমার প্রমোশনে সময় দিচ্ছেন তিনি। এদিকে বিভিন্ন ইস্যুতে নিজের সোশ্যাল হ্যান্ডেলে সর্বদা সরব থাকেন মানবিক জয়া। যেমনটি সম্প্রতি দেখা গেল ট্রেনের ধাক্কায় নির্মমভাবে মারা যাওয়া হস্তীশাবকের ক্ষেত্রে। সবাই জানে জয়া একজন প্রাণীপ্রেমী। নিজের বাসায় তো বটেই, বাইরেও তিনি বিভিন্ন প্রাণীর প্রতি ভালোবাসা প্রকাশ করেন। প্রাণীপ্রেমের জন্য পেয়েছেন সম্মাননাও। সেই জয়া যখন খবর পেলেন, রাজধানীতে দিনদুপুরে আস্ত একটি হস্তীশাবক ট্রেনের ধাক্কায় নির্মমভাবে মারা গেছে, তখন তাঁর হৃদয়ে বিষাদের বজ্রপাত হয়েছে। সেই ক্ষত এখনো তাঁকে পোড়াচ্ছে, ভাবাচ্ছে। বিষণ মনে বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভও ঝেড়েছেন তিনি।

জয়ার ক্যারিয়ার শুরু হয় ছোট পর্দা দিয়ে। বহু নাটক, টেলিফিল্মে অভিনয় করেছেন, হয়েছেন বহু বিজ্ঞাপনের মডেলও। জয়ার চলচ্চিত্রে অভিষেক হয় ২০০৪ সালে মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর ‘ব্যাচেলর’ দিয়ে। জয়া বরাবরই সময় নিয়ে সিনেমা করেছেন। যার ফলে তাঁর একটি সিনেমা থেকে অন্য সিনেমার মধ্যকার সময় বেশ লম্বা। ‘ব্যাচেলর’-এর পর ছয় বছর বিরতি দিয়ে দ্বিতীয় সিনেমা নুরুল আলম আতিকের ‘ডুবসাঁতার’ করেন। ২০১১ সালে এ দেশে মুক্তি পায় তানিম নূর পরিচালিত ‘ফিরে এসো বেহুলা’ এবং নাসির উদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু পরিচালিত ‘গেরিলা’। এ দুটি ছবির মাধ্যমে তিনি ব্যাপক প্রশংসিত হন। গেরিলা চলচ্চিত্রে তিনি বিলকিস বানু চরিত্রে অভিনয় করেন। ছবিটি তাঁকে এনে দেয় জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। এরপর ২০১২ সালে রেদওয়ান রনির ‘চোরাবালি’তে কলকাতার ইন্দ্রনীল সেনগুপ্তের সঙ্গে সাংবাদিক নবনী আফরোজ চরিত্রে অভিনয় করেন। কলকাতায় হন আলোচিত। আর অর্জন করেন দ্বিতীয়বারের মতো শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। ২০১৩ সালে তিনি কান চলচ্চিত্র উৎসবে নিমন্ত্রণ পান। একই বছর তিনি শাফি উদ্দিন শাফির ‘পূর্ণদৈর্ঘ্য প্রেমকাহিনী’ সিনেমায় শাকিব খানের বিপরীতে অভিনয় করেন। পান তৃতীয়বারের মতো জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। ২০১৫ সালে অনিমেষ আইচের ‘জিরো ডিগ্রি’তে মাহফুজের বিপরীতে অভিনয় করে জয়া অর্জনের ঝুলিতে পুরেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। একই বছর তিনি অভিনয় করেন ওপার বাংলার সৃজিত মুখার্জির ‘রাজকাহিনী’তে। এই সিনেমায় সাহসী চরিত্রে অভিনয় করে ভূয়সী প্রশংসিত হন। পরের বছর করেন এপারের ‘পূর্ণদৈর্ঘ্য প্রেমকাহিনী ২’ এবং কলকাতায় গোয়েন্দা চরিত্রভিত্তিক সিনেমা ‘ঈগলের চোখ’। ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে মুক্তি পায় তাঁর অভিনীত সাইফুল ইসলাম মান্নুর ‘পুত্র’। ছবিতে একজন অটিস্টিক শিশুর মায়ের ভূমিকায় অভিনয় করেন।

এরপর ২০১৮ সালে জয়া নিজেই সিনেমা প্রযোজনায় নামেন। তাঁর প্রযোজনায় নির্মিত প্রথম সিনেমা ‘দেবী’। হুমায়ূন আহমেদের বিখ্যাত সৃষ্টি রহস্যময় চরিত্র মিসির আলি সিরিজের গল্প নিয়ে নির্মিত হয় এটি। এ সিনেমায়ও জয়ার অভিনয় দর্শক-সমালোচকদের মুগ্ধ করে। পাশাপাশি সিনেমাটি ব্যবসায়িকভাবেও সফল হয়। এরই মধ্যে বিরসা দাশগুপ্তের ‘ক্রিসক্রস’ মুক্তি পায়। এগুলো ছাড়াও জয়া দুই বাংলায় ‘একটি বাঙালি ভূতের গপ্পো’, ‘ভালোবাসার শহর’ ও ‘খাঁচা’তে অভিনয় করেন। তবে তাঁর অভিনীত জনপ্রিয় সফল দুই সিনেমা হচ্ছে ‘বিসর্জন’ ও ‘বিজয়া’। কলকাতার নির্মাতা কৌশিক গাঙ্গুলীর এ দুটি সিনেমায় অভিনয় করে তিনি জিতে নেন দুই বাংলার দর্শকদের মন। এ ছাড়া ‘বিসর্জন’র জন্য ভারতের জি সিনে পুরস্কার ও ফিল্মফেয়ার পুরস্কার অর্জন করেন।

জয়ার ভারত মিশন শুরু হয় ‘আবর্ত’ দিয়ে। সেটা ২০১৩ সালের ঘটনা। ‘রবিবার’-এর পর ‘কণ্ঠ’ ছবিতে অভিনয় করে দারুণ প্রশংসা কুড়ান তিনি। দুই বাংলায় সম্মান, সম্মাননা, খ্যাতি, ভালোবাসা-কোনোটিই কম পাননি জয়া। খোদ ভারত থেকেই পেয়েছেন ‘তুমি অনন্যা ২০২০’ সম্মাননা। এদিকে পশ্চিমবঙ্গে করেছেন ‘বিনিসুতোয়’, ‘ভূত পরী’, ‘ওসিডি’, ‘কালান্তর’ ও ‘ঝরা পালক’। এ ছাড়া বাংলাদেশে মুক্তি পায় তাঁর ‘অলাতচক্র’, মাহমুদ দিদারের ‘বিউটি সার্কাস’। ‘বিউটি সার্কাস’ ছবিতে তাঁর অনবদ্য অভিনয় সবাইকে মুগ্ধ করে রাখে।

সম্প্রতি মস্কো ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে ‘পেয়ারার সুবাস’ প্রদর্শিত হলেও এ দেশে এখনো মুক্তি পায়নি এটি। অন্যদিকে আকরাম খানের ‘নকশীকাঁথার জমিন’ও রয়েছে মুক্তির অপেক্ষায়। এদিকে ইরান-বাংলাদেশ যৌথ প্রযোজনার সিনেমা ‘ফেরেশতে’র শুটিং অনেক আগেই শেষ হয়ে এখন মুক্তির অপেক্ষায়। তবে জানা গেল, এই সিনেমাটি এখন সব রকমের প্রস্তুতি শেষে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের চলচ্চিত্র উৎসবে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত রয়েছে। অস্কারে যাওয়ার জন্যও প্রস্তুত ছবিটি। সম্প্রতি ইরানের সব পোর্টালে শোভা পেয়েছে ‘ফেরেশতে’ সিনেমার সর্বশেষ আপডেট। ইরানের প্রায় ২০টি ওয়েব পোর্টাল বাংলাদেশের সুপারস্টার জয়ার নাম প্রথমেই লিখেছে। অচিরেই তাঁর প্রযোজনা সংস্থা সি-তে সিনেমা ও ফেসকার্ড প্রোডাকশন হাউস থেকে মেজবাউর রহমান সুমনের নির্মাণে নির্মিত হবে সরকারি অনুদানের সিনেমা ‘রইদ’। যার জন্য দর্শক প্রতীক্ষায় বসে রয়েছেন। কলকাতায় অনেক প্রজেক্ট হাতে রয়েছে জয়ার।

এই অভিনেত্রীর সব ছবিই দারুণ জনপ্রিয়। তাঁর জীবনটাও নান্দনিকতায় ভরপুর। যদি কাউকে বলা হয় সেরা কয়েকটি ছবির নাম বলতে, সে নিশ্চয়ই ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যাবেন হিসাব করে। যতই দিন যাচ্ছে, অভিনেত্রী জয়ার ঔজ্জ্বল্য তত বেড়েই চলছে। আর জয়ার নামের সঙ্গে নিত্যনতুন সাফল্যের পালক যুক্ত হচ্ছে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর