মঙ্গলবার, ৬ জুন, ২০২৩ ০০:০০ টা

অরিজিৎ সিংয়ের সাদামাটা জীবন

সাইফ ইমন

অরিজিৎ সিংয়ের সাদামাটা জীবন

উপমহাদেশের বর্তমানে সবচেয়ে চাহিদাসম্পন্ন গায়ক অরিজিৎ সিং। চলচ্চিত্রে তাঁর গান থাকা মানেই ভক্তদের জন্য বিশেষ কিছু। জীবনে খ্যাতি, অর্থ, সম্মান সবকিছু অর্জন করেছেন। তারপরও মাটির মানুষ অরিজিৎ সিং। দামি গাড়ি থাকতেও ব্যবহার করেন সাধারণ ট্রান্সপোর্ট। ভারতের মুম্বাই শহরের আলিশান ফ্ল্যাট রেখে পড়ে থাকেন মফস্বলের ছোট্ট শহর মুর্শিদাবাদের জিয়াগঞ্জে...

বর্তমান সময়ে সবচেয়ে জনপ্রিয় প্লে-ব্যাক গায়ক অরিজিৎ সিং। বলিউডের গানের জগতের বাদশাহ বলা হয় তাঁকে। তাঁর গানে মুগ্ধ গোটা উপমহাদেশ। জীবনে খ্যাতি, অর্থ, সম্মান সবকিছুই অর্জন করেছেন। তাঁর মোট সম্পত্তির পরিমাণ ৭ মিলিয়ন ডলারেরও ওপরে। বাড়ি আমাদের দেশের রাজশাহীর পদ্মার ওপারেই। মুর্শিদাবাদের জিয়াগঞ্জে। কাজের টানে তাঁকে প্রায়ই থাকতে হয় মুম্বাইয়ে নিজের ফ্ল্যাটে। বিলাসবহুল সেই ফ্ল্যাটে কি নেই! আধুনিক জীবনযাপনের সবকিছুই রয়েছে সেখানে। কিন্তু কাজের ফাঁকে সুযোগ পেলেই অরিজিৎ সিং ছুটেন জিয়াগঞ্জেই। অথচ এটি আধুনিক সুযোগ-সুবিধাবঞ্চিত মফস্বলের ছোট এক শহর। সেখানকার বাসিন্দারা সাদামাটা জীবনযাপনে অভ্যস্ত। অরিজিৎ সিংও তাই। উপমহাদেশের গানের জগতে বর্তমানে সবচেয়ে চাহিদা এই সাদামাটা মানুষটার। বাংলা হোক কিংবা হিন্দি- অরিজিতের গান না থাকলে যেন পূর্ণতা পায় না। বলিউডে অরিজিতের প্রথম গান ‘মার্ডার-টু’ ছবির ‘ফির মহব্বত’। যদিও সে সময় সেভাবে জনপ্রিয়তা পাননি তিনি। তবে ‘আশিকী-টু’ ছবিতে গান গেয়ে ভক্তদের মনে পাকাপাকিভাবে নিজের জায়গা বানিয়ে ফেলেন গায়ক।

 

টিকিটের দাম কয়েক হাজার টাকা

অরিজিতের কনসার্টের টিকিটের দাম কয়েক হাজার টাকা। তাঁকে একবার সামনে থেকে দেখার জন্য অপেক্ষায় বসে থাকেন ভক্তরা। শুধু অরিজিৎ সিংয়ের কনসার্টে আসার জন্য ভারতের বিভিন্ন স্থান থেকে দলবেঁধে ফেসবুকে গ্রুপ খুলে অংশগ্রহণ করেন ভক্তরা। প্রিয় গায়ককে সামনে থেকে শোনার জন্য এ যেন এক বিশাল আয়োজন। কিন্তু ব্যক্তি জীবনে কোনোরকম জাঁকজমক নয়, একেবারে সাদামাটা জীবনযাপন পছন্দ করেন সবার প্রিয় অরিজিৎ। আর তাঁর এই স্বভাবের কারণেই তিনি ভক্তদের একেবারে মনের মণিকাঠায় জায়গা করে নিয়েছেন।

 

সাদামাটা জীবন

বর্তমানে অরিজিৎ একেবারে জনপ্রিয়তার শিখরে পৌঁছে গেলেও তাঁর সাধারণ জীবনযাপন করা সত্যি মুগ্ধ করে ভক্তদের। আদি বাড়িতে গিয়ে সাইকেল নিয়ে ঘুরে বেড়ান এই জনপ্রিয় গায়ক। ছেলেকে স্কুল থেকে আনতে গিয়ে অন্য অভিভাবকদের সঙ্গে গেটের বাইরে দাঁড়িয়ে থাকেন তিনি। দামি কোনো গাড়িও নেই তাঁর। আশপাশে ঘুরতে দেখা যায় না কোনো বডিগার্ডকে। ভক্তরা দাবি করেন একেবারে নিখাদ মনের হওয়ায়ই এত সাধারণ থেকেও অসাধারণ অরিজিৎ সিং। তাঁর মধ্যে নেই অহংকারের ছিটেফোঁটা। কিছুদিন আগেই অরিজিতের ছেলের স্কুলে যাওয়ার পথে কত রকম ভিডিও দেখা গেছে নানা মাধ্যমে। স্কুটি চালিয়ে যখন যাচ্ছিলেন, সেখানে সাধারণ গৃহিণীরা তাঁকে বলছেন, ‘কী গো ভালো আছ?’ আর অরিজিৎ নিজেও উত্তর দিচ্ছেন সাবলীলভাবে। নিজেই আগ বাড়িয়ে কথা বলছেন হেসে হেসে। কী দারুণ সেই দৃশ্য!  এত আকাশচুম্বী জনপ্রিয়তার পরও কীভাবে এতটা সাধারণ থাকা যায় তা নিয়ে বিস্ময়ের শেষ নেই ভক্তদের। এত সাধারণ কীভাবে থাকেন তিনি? সেই প্রশ্ন অনেকেই করেছেন তাঁকে। প্রশ্নের উত্তর এবার নিজেই দিলেন এই তারকা। গায়কের সাফ কথা, ‘আমি এভাবেই ভালো আছি। আগামীতেও এমন থাকতে চাই। সত্যি বলতে, এই সাদামাটা জীবনটাই আমি উপভোগ করি।’ মুর্শিদাবাদে মাঝে মধ্যেই পথেঘাটে হেঁটে ঘুরে বেড়াতে দেখা যায় অরিজিৎকে। এ প্রসঙ্গ নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘বাড়ির সামনেই যেতে হয় মাঝে মধ্যে, সে কারণেই পায়ে হেঁটে যাতায়াত করি। এতে আমার কোনো সমস্যা হয় না।’ শুধু হেঁটে নয়, পাবলিক ট্রান্সপোর্ট ব্যবহার করেন এই সংগীত জাদুকর। বিলাসবহুল গাড়ি বা হেলিকপ্টারে নয় বরং ট্রেনে চেপে আর পাঁচজন মধ্যবিত্তের মতোই উত্তরবঙ্গে যাওয়া-আসা করেন অরিজিৎ। তার কারণ, তিনি অরিজিৎ সিং। শ্রোতাদের কাছের সেই ‘মাটির মানুষ’।

 

এক নজরে

♦ অরিজিৎ ক্লাসিক্যাল সংগীতের তালিম নিয়েছেন গুরু রাজেন্দ্রপ্রসাদ হাজারির কাছে, তবলা শিখেছেন ধীরেন্দ্রপ্রসাদ হাজারির কাছে, আর লোকসংগীত শিখেছেন বীরেন্দ্রপ্রসাদ হাজারির কাছে।

♦ গানের পাশাপাশি সাইকেল চালানো, ফটোগ্রাফি, আর বাংলা গল্প-উপন্যাসের প্রতি যথেষ্ট আগ্রহ রয়েছে অরিজিতের।

♦ গুলাম আলি, মেহেদি হাসান, আর জগজিৎ সিং অরিজিতের প্রিয় গায়ক।

♦ সংগীত জীবনের প্রথমদিকে প্রীতম, শঙ্কর-এহসান-লয়, বিশাল-শেখর, মিঠুনের মতো সংগীত পরিচালকের সহকারী হিসেবে কাজ করেছেন অরিজিৎ।

♦ ২০১৪ সালে নিজের ছোটবেলার বান্ধবী কোয়েল রায়কে বিয়ে করেন অরিজিৎ। এটি ছিল তাঁর দ্বিতীয় বিবাহ।

♦ বেশ কিছু টেলিভিশন শো-এর জন্যও গান গেয়েছেন অরিজিৎ। সেগুলোর মধ্যে ‘দাদাগিরি’ বা ‘তোমায় আমায় মিল’-এর মতো বাংলা টিভি সিরিজও রয়েছে।

সর্বশেষ খবর