জনপ্রিয় নজরুলসংগীত শিল্পী এবং স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের কণ্ঠযোদ্ধা শাহীন সামাদ। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে সাংস্কৃতিক দলের সঙ্গে গান গেয়ে ঘুরে বেড়িয়েছেন এক শরণার্থী ক্যাম্প থেকে আরেক ক্যাম্পে। মুক্তিযুদ্ধের সময় স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে তাঁর গাওয়া গান মুক্তিসেনাদের প্রেরণা জুগিয়েছিল। এই প্রখ্যাত শিল্পীর সঙ্গে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলাপনে- পান্থ আফজাল
কেমন কাটছে দিনকাল?
আছি ভালো। একা মানুষ আমি, যেভাবে কাটে আর কী! এর মধ্যে কাছের মানুষদের সঙ্গে চলে আড্ডা। এভাবেই সময় চলে যাচ্ছে।
‘জেমস অব নজরুল’ সংগীতাঞ্জলি...
জাতীয় কবি নজরুলের অবিস্মরণীয় গান নিয়ে আয়োজন এটি। আমি গেয়েছি, ‘কেমনে রাখি আঁখি’। সাদিয়া আফরিন মল্লিকসহ বেশ কয়েকজন নজরুল সংগীতশিল্পীও গেয়েছেন। গানগুলোর রেকর্ডিং হয়েছে গত মাসে। ‘জেমস অব নজরুল’ ইউটিউবে দেখতে পাওয়া যাবে।
এ মাসের ব্যস্ততা জানতে চাই...
প্রতিবার এই মাসে অনেক ব্যস্ত থাকি। টেলিভিশন, রেডিও এবং বিভিন্ন অনুষ্ঠানে গান করেই তো এই বিজয়ের মাস কেটে যায়। এবারও যাবে হয়তো।
বিজয়ের মাস নিয়ে আপনার অনুভূতি কেমন?
আসলে আমাদের বিজয়ের মাস ডিসেম্বর এলেই মনটা গর্বে ভরে যায়। কারণ, নয় মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ করে এই মাসে আমরা বিজয় ছিনিয়ে এনেছিলাম। বাঙালি হিসেবে এটি আমার জন্য একই সঙ্গে আনন্দের এবং গর্বের। এই দিবসে তাই সবাইকে জানাই অফুরন্ত ভালোবাসা ও অভিনন্দন।
আপনি তো স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। সেটা কীভাবে সম্ভব হলো?
তখন ১৪৪ নম্বর লেনিন সরণিতে বুদ্ধিজীবী ও সাহিত্যিক দীপেন বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাসায় ছিল ‘বাংলাদেশ মুক্তিসংগ্রামী শিল্পী সংস্থা’ নামে একটি সংগঠন। সেখানেই দেখা হয় আরও অনেকের সঙ্গে। আমাদের সংগঠনের সঙ্গে তখন পশ্চিমবঙ্গের সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও বুদ্ধিজীবীরা সম্পৃক্ত ছিলেন। শিল্পী সংস্থায় প্রথমে ছিলাম ১৭ জন। পরে হয়ে গেল ১১৭ জন।
কোনো সম্মানি পেতেন কি?
অল ইন্ডিয়া রেডিওতে ছয়টি গান গাওয়ার জন্য পেয়েছিলাম ১০৫ টাকা। আর যারা গানের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন তাদের বাংলাদেশ সহায়ক শিল্পী সাহিত্যিক বুদ্ধিজীবী সমিতি থেকে সার্টিফিকেট দেওয়া হয়েছিল। সত্যজিৎ রায়সহ অনেকেই ছিলেন তখন ‘বাংলাদেশ মুক্তিসংগ্রামী শিল্পী সংস্থা’র সঙ্গে। গান গেয়ে যে সম্মানি পেতাম তা দিয়ে মুক্তিযোদ্ধা-শরণার্থীদের জন্য হাঁড়ি-পাতিল, খাবার, পানি, কম্বল কেনা হতো।
মুক্তিযোদ্ধাদের উদ্বুদ্ধ করতে আপনারা শরণার্থী ক্যাম্পে ক্যাম্পে ঘুরে গান করেছেন...
স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় আমার বয়স ছিল ১৮। অনেক নারীই তখন মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন। কিন্তু আমার বিষয়টি ছিল ভিন্ন। বাড়ি থেকে পালিয়ে মুক্তিযুদ্ধে চলে যাই। এতে মা-সহ পরিবারের অন্যরা কষ্ট পান।
যদিও বাবা যুদ্ধের আগেই মারা গিয়েছিলেন। তখন আমাদের কাজ ছিল শরণার্থী ক্যাম্পে ক্যাম্পে গান গাওয়া।
আমরা পুরো নয় মাস পশ্চিমবঙ্গেই ঘুরে ঘুরে গান গেয়েছি, মুক্তিযোদ্ধাদের উদ্বুদ্ধ করেছি। মঞ্চ করে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় আমাদের গান গাওয়ানো হতো। আমরা দিল্লিতেও এক মাস ছিলাম, সেখানেও আমাদের কাজ ছিল শুধু গান গাওয়া।