চলচ্চিত্র নির্মাণ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন ঢালিউড বিউটি কুইন অভিনেত্রী শাবানা। রাজনীতিতে যুক্ত না হওয়ার ঘোষণাও দিয়েছেন তিনি। তার স্বামী চলচ্চিত্রকার ওয়াহিদ সাদিকেরও একই মত।
স্বামী-ছেলেসহ ওমরাহ হজ পালন শেষে ২২ মে ঢাকা ফেরেন শাবানা।
১৯৯৬ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্রে স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন এই জনপ্রিয় অভিনেত্রী। চার দশক ধরে প্রায় চার শতাধিক ছবিতে তুমুল জনপ্রিয়তায় অভিনয় করেন শাবানা। প্রায় দেড় ডজন ছবি প্রযোজনাও করেন। এর মধ্যে বেশ কটি যৌথ প্রযোজনার ছবিও রয়েছে। স্বামী ওয়াহিদ সাদিককে নিয়ে আশির দশকের মাঝামাঝি সময়ে গড়ে তুলেন প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান 'এস এস প্রোডাকশন'। ১০ বার জাতীয়সহ বাচসাস ও অন্যান্য সংগঠনের অসংখ্য পুরস্কার লাভ করেন তিনি। ৯০ দশকের মাঝামাঝি সময়ে অনেকটা হঠাৎ করেই অভিনয় ছেড়ে স্বামী-সন্তান নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন শাবানা। তার অভিনীত শেষ ছবি হচ্ছে আজিজুর রহমান পরিচালিত 'ঘরে ঘরে যুদ্ধ'। প্রায় প্রতি বছর দেশে আসেন তিনি। সর্বশেষ ২০১২ সালে ঢাকায় এসে চলচ্চিত্র নির্মাণের ঘোষণা দেন শাবানা ও স্বামী ওয়াহিদ সাদিক। কলকাতার সঙ্গে যৌথভাবে চলচ্চিত্র নির্মাণের আয়োজনও করেন। একসঙ্গে তিনটি চলচ্চিত্র নির্মাণের জন্য তিন নির্মাতার সঙ্গে আলাপ চূড়ান্ত হয়। এই নির্মাতারা হলেন- নার্গিস আক্তার, শাহিন সুমন এবং এমবি মানিক। চলচ্চিত্রের পাণ্ডুলিপি তৈরি করেন মোহাম্মদ রফিকুজ্জামান। দুই বাংলার একজোড়া তরুণ-তরুণীর প্রেম কাহিনী নিয়ে এই গল্পটি তৈরি হয়। কলকাতায় গিয়ে তারা সেখানকার প্রযোজনা সংস্থা ধানুকা ব্রাদার্সসহ বেশ কটি চলচ্চিত্র নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যৌথ প্রযোজনায় চলচ্চিত্র নির্মাণের বিষয়টি চূড়ান্তও করেন। সেখানকার দেব, জিৎ, কোয়েল মলি্লক, রঞ্জিত মলি্লকসহ বেশ কজন শিল্পীর সঙ্গে প্রাথমিক আলাপও সম্পন্ন করেন। আর এখানকার শিল্পী হলেন আলমগীর, শাকিব খানসহ অনেকে। কথা ছিল ওই বছরের ডিসেম্বরে সংবাদ সম্মেলন করে চলচ্চিত্র নির্মাণের ঘোষণা দেওয়া হবে। কিন্তু ওই মাসেই কাজ অসম্পূর্ণ রেখে যুক্তরাষ্ট্র ফিরে যান তারা। মধ্যে ২০১৩ সাল পেরিয়ে গেলেও আর ফেরেননি। গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে ক্ষোভের সঙ্গে তারা জানান, চলচ্চিত্র নির্মাণের আর কোনো প্রশ্নই আসে না। কারণ গতবার উদ্যোগ নিয়ে চরম হয়রানির মুখে পড়েছি। তথ্য মন্ত্রণালয়ের কাছে অনুমতি চেয়ে বার বার ব্যর্থ হয়েছি। কলকাতার স্থানীয় সরকারও এ ব্যাপারে আমাদের সহযোগিতা করেনি। প্রচুর টাকা পয়সা নষ্ট করে হতাশ মনে যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে যেতে হয়েছিল। অথচ ঢাকার চলচ্চিত্রকে ভগ্নদশা থেকে উদ্ধারই ছিল আমাদের প্রধান লক্ষ্য। জানি না কি কারণে কারও সহযেগিতা পেলাম না। তাই ওই পথে আর কখনো পা বাড়াতে চাই না। ২০১২ সালে ওয়াহিদ সাদিকের গ্রামের বাড়ি যশোরের কেশবপুরে শাবানা ও সাদিক নির্বাচনী প্রচারণাও করেছিলেন। কথা ছিল সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে ওই এলাকা থেকে নির্বাচন করবেন ওয়াহিদ সাদিক। তার বড় ভাই এ এইচ কে সাদিক এক সময় ওই এলাকার নির্বাচিত এমপি এবং শিক্ষামন্ত্রী ছিলেন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে সাদিক বলেন, না এখন আর রাজনীতি বা নির্বাচন করার কোনো ইচ্ছা আমাদের কারোরই নেই। কারণ বর্তমানে রাজনৈতিক পরিবেশ ভালো নয়। শাবানা ও সাদিক জানান, দুই সপ্তাহের মতো দেশে থেকে আবার যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে যাবেন তারা। এরই মধ্যে খুলনা এবং যশোরের কেশবপুর যাবেন। ওয়াহিদ সাদিক বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে রিয়েল এস্টেট ও অন্যান্য ব্যবসা নিয়ে সুখে আছেন তারা। ছেলে সাহিক সাদিক নিওজার্সির একটি স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠানে কর্মরত। স্থানীয় রাতগার ইউনিভার্সিটি থেকে বিজনেস ও অ্যাকাউন্টসে গ্রাজুয়েশন করেছেন তিনি। বড় মেয়ে ফারহানা সাদিক এমবিএ এবং সিপিএ সম্পন্ন করেছেন। ছোট মেয়ে সাবরিনা সাদিক হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটিতে ইংলিশ লিটারেচারে পিএইচডি করছেন। শাবানা-সাদিক বলেন, ব্যবসা-বাণিজ্য আর পুত্র-কন্যা নিয়ে পরম সুখে কাটছে তাদের জীবনের সোনালি-রুপালি দিনগুলো।