দেশি নাট্যকারের তুলনায় বিদেশি নাট্যকারকে আমাদের দেশের বড় দলগুলো প্রাধান্য দিয়ে থাকে। এটা কেন?
আমাদের নিজস্ব নাটক ছিল না বলে আমরা রবীন্দ্রনাথের নাটক বেশি করে থাকি। অচলায়তন, রক্তকরবী, রথের রশি ইত্যাদি নাটক মঞ্চায়ন করে অনন্য উচ্চতায় আসীন হয়েছে নাগরিক নাট্যসম্প্রদায়। অন্য কেউ করে কি করে না সেটা আমার দেখার বিষয় নয়। আমি কখনো দেশি নাট্যকারদের নাটক করব না। সৈয়দ শামসুল হক ছাড়া দেশি কোনো নাট্যকারের লেখা নাটক শেষ পর্যন্ত নাটক হয় বলে আমি মনে করি না।
রূপান্তর ও অনুবাদের বিষয়ে কিছু বলুন
অনেক দল তাদের নাটকের লিফলেট কিংবা পোস্টারে লিখে থাকেন শেকসপিয়রের নাটক অবলম্বনে কিংবা মলিয়েরের দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে এ নাটকটি মঞ্চায়ন হচ্ছে। এসব আমি মানি না। রূপান্তরটা অনেকেই ঠিকমতো করতে পারেন না। আমরা বিদেশি নাট্যকারদের নাটক করলেও সেটা ঠিক রূপান্তর না। বিষয়বস্তু ঠিক রেখে দেশজকরণ করে মঞ্চায়ন করে থাকি।
তাহলে সেলিম আল দীন?
দুজনের মধ্যে আমি কোনো পার্থক্য করতে চাই না। সৈয়দ শামসুল হক একজন প্রথিতযশা লেখক। অবলীলায় তিনি নাটক, ছোটগল্প, প্রবন্ধ, কবিতা সব কিছু লিখে থাকেন। আর সেলিম আল দীন একটি বিশেষ ধারার নাটক লিখে থাকেন। সৈয়দ শামসুল হক বড় নাকি সেলিম আল দীন বড় এটা সময়ই বিচার করবে। কারও ভালো লাগে সেলিম আল দীনকে আবার কারও ভালো লাগে সৈয়দ শামসুল হককে।
মঞ্চে পেশাদারিত্ব তৈরি হচ্ছে না। কীভাবে পেশাদারিত্ব তৈরি করা যায়?
মঞ্চকে বাঁচিয়ে রাখতে হলে পেশাদারিত্বের বিকল্প কিছুই নেই। পাশের দেশ ভারতেও মঞ্চের শিল্পীদের জন্য গ্র্যান্ড স্যালারি চালু আছে। টিকিট বিক্রির টাকা দিয়ে পেশাদারিত্ব অর্জন সম্ভব নয়। আসলে সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা অত্যাবশ্যক। সরকারের উচিত নাটকে অনুদান প্রথা চালু করা।
বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে নাট্যকলা ও নাট্যতত্ত্বে অনেকেই পড়াশোনা করছে। প্রতি বছর অনেকেই পাস করে বেরোচ্ছে। কিন্তু তাদের খুব বেশি কেউ মঞ্চের সঙ্গে সম্পৃক্ত হচ্ছে না। এর কারণ কী?
তাদের বেশির ভাগই বিভিন্ন চ্যানেলে যোগ দিচ্ছে। আবার অনেকে শিক্ষকতাও করছে। এই কোর্সে টিভি ও সিনেমার কারিগরি বিষয়ও পড়ানো হয়। সৃজনশীলতা, শিল্পবোধের গভীরতার টানে নাট্যকলা নিয়ে অনেকে পড়াশোনা করলেও ব্যক্তিজীবনে একেকজনের পছন্দ একেকরকম।
নাটক নিয়ে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?
আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে একটা নাট্যোৎসব করব। ওই উৎসবে দেশ ও বিদেশের অনেক নাটকের দল অংশগ্রহণ করবে। নাগরিকের চার দশক ও আলী যাকেরের ৭০তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষেই এ উৎসবের আয়োজন করব।
মোস্তফা মতিহার