যৌথ প্রযোজনার ছবি নির্মাণে আগ্রহ বাড়ছে। এরই মধ্যে নতুন করে অর্ধডজনের মতো যৌথ আয়োজনের ছবি নির্মাণ শুরু হচ্ছে। কিন্তু স্থানীয় চলচ্চিত্রকারদের দাবি এ ক্ষেত্রে ১৯৮৬ সালের নীতিমালা পুনর্বহাল করতে হবে। না হলে উভয়পক্ষেরই স্বার্থহানির আশঙ্কা থাকবে। সিনিয়র ও বর্তমান সময়ের প্রায় সব নির্মাতাই ১৯৮৬ সালের নীতিমালার পক্ষে কথা বলেছেন।
উল্লেখ্য, ১৯৮৬ সালের নীতিমালায় বলা আছে, যৌথ প্রযোজনার ছবি নির্মাণে দুই পক্ষ থেকে নির্মাতা, শিল্পী, কলাকুশলীসহ সব কিছু দু'দেশ থেকে সমহারে থাকতে হবে। কিন্তু ২০১২ সালের পরিবর্তিত নীতিমালায় উল্লেখ আছে দু'দেশের নির্মাতা আলোচনার ভিত্তিতে সব বিষয় চূড়ান্ত করবে। নির্মাতারা বলেন, আসলে এটি শুভঙ্করের ফাঁকি ছাড়া আর কিছুই নয়। যা সম্প্রতি অনন্য মামুন ও অশোক পতি নির্মিত দুই বাংলার 'আমি শুধু চেয়েছি তোমায়' ছবিটি দিয়েই প্রমাণ হয়েছে। কারণ কলকাতায় ছবিটির টাইটেল বা পোস্টারে এ দেশের নির্মাতার নাম এবং এটি যে যৌথ আয়োজনের ছবি তার কোনো উল্লেখ নেই। তা ছাড়া মুখ্য অর্থাৎ নায়ক-নায়িকা চরিত্রে এ দেশের কোনো শিল্পী ছিলেন না। তাই নতুন করে যৌথ আয়োজনের ছবি নির্মাণের আগে ১৯৮৬ সালের নীতিমালা পুনর্বহাল করতে হবে।
সিনিয়র নির্মাতার মধ্যে নায়করাজ রাজ্জাক বলেন, যৌথ আয়োজনে ছবি নির্মাণ হয়েছে এবং হবে এটিই স্বাভাবিক। কিন্তু কেন এবং কার স্বার্থে নতুন করে নীতিমালা তৈরি করতে হয়েছে জানি না। এ কারণে নতুন করে সমস্যাও দেখা দিয়েছে। তাই আগের নীতিমালা অনুযায়ী বা বর্তমান সময়োপযোগী করে নীতিমালা তৈরি করে কাজ করা দরকার। সুচন্দা বলেন, যৌথ আয়োজনে চলচ্চিত্র নির্মাণ করতেই পারি। যা আগেও হয়েছে। কিন্তু নীতিমালা যদি সঠিক না হয় তাহলে উভয়পক্ষেরই ক্ষতি হবে। চাষী নজরুল ইসলাম বলেন, যৌথ প্রযোজনার ছবির ক্ষেত্রে নীতিমালা যদি দুর্বল হয় তাহলে যৌথ আয়োজনের উদ্দেশ্য অবশ্যই ব্যাহত হবে। এদিকটায় নজর দিতেই হবে। ছটকু আহমেদ বলেন, দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে যৌথ আয়োজনে ছবি নির্মাণ হচ্ছে। প্রথমদিকে তেমন শক্তিশালী কোনো নীতিমালাও ছিল না। তা সত্ত্বেও এ ক্ষেত্রে তখন কোনো জটিলতা দেখা দেয়নি। পরে ১৯৮৬ সালে যে নীতিমালা প্রণয়ন হয় তাতেও সুষ্ঠুভাবে কাজ চলছিল। কিন্তু ২০১২ সালে নতুন যে নীতিমালা তৈরি হয় তা সত্যিই দুর্বল। এতে উভয়পক্ষেরই ক্ষতি হতে পারে। তাই ১৯৮৬ সালের অথবা নতুন করে নীতিমালা প্রণয়ন জরুরি। চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির সহ-সভাপতি সুদীপ্ত কুমার দাশ বলেন, ২০১২ সালের নীতিমালা তো স্থানীয় চলচ্চিত্র নির্মাতারাই তৈরি করেছেন। তারা যদি এখন মনে করেন এতে তাদের স্বার্থ ক্ষুণ্ন হচ্ছে তাহলে নতুন করে আবার নীতিমালা তৈরি করে নিতে পারেন। অথবা ১৯৮৬ সালের নীতিমালা পুনর্বহাল করতে পারে। শাকিব খান বলেন, আমি যৌথ প্রযোজনার বিপক্ষে নই। কিন্তু দুর্বল নীতিমালার কারণে কোনো পক্ষ ক্ষতিগ্রস্ত হোক তাও চাই না। ফেরদৌস বলেন, আমরা আগের মতো যৌথ নির্মাণ অব্যাহত রাখতে পারি। তবে এক্ষেত্রে বর্তমান নীতিমালা সংস্কার প্রয়োজন। এমএ জলিল অনন্ত বলেন, এ দেশে বিদেশি ছবির বাজার তৈরি হতে দেব না। তবে পরস্পরের স্বার্থ সংরক্ষণের মাধ্যমে যৌথ আয়োজনে ছবি নির্মাণে আপত্তি থাকার কথা নয়।
মোস্তফা সরয়ার ফারুকী, গিয়াসউদ্দীন সেলিম, স্বপন আহমেদ, মুস্তাফা কামাল রাজ, রেদোয়ান রনি, শাহীন কবির টুটুলসহ এই প্রজন্মের প্রায় সব নির্মাতার অভিন্ন মত। তাদের কথায় যৌথ প্রযোজনায় ছবি নির্মাণ হয়েছে এবং হতেই পারে। তবে তা হতে হবে সমতার ভিত্তিতে। তাই উভয়পক্ষের স্বার্থ সংরক্ষণে ১৯৮৬ সালের নীতিমালার কোনো বিকল্প নেই। এদিকে কলকাতার সঙ্গে যৌথ আয়োজনে যেসব ছবি নির্মাণ হতে যাচ্ছে সেগুলো হলো- নায়ক ফেরদৌস প্রযোজিত 'বিয়ের ফাঁদে', উত্তম আকাশের 'ঢাকার ছেলে কলকাতার মেয়ে', জাজ মাল্টিমিডিয়ার 'রোমিও ভার্সেস জুলিয়েট', অনন্য মামুনের 'ঈদ মোবারক',ইফতেখার চৌধুরীর 'মোটকা' এবং শাকিব খান প্রযোজিত নাম চূড়ান্ত না হওয়া দুটি ছবি। স্বাধীনতার পর এ পর্যন্ত বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, নেপাল, শ্রীলঙ্কা, তুরস্ক ও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে প্রায় অর্ধশতাধিক যৌথ প্রযোজনার ছবি নির্মাণ হয়েছে।