ঢালিউডের গোড়াপত্তন থেকেই এদেশের চলচ্চিত্র বিশ্ব দরবারে মর্যাদার আসনে সমাসীন হয়। নামিদামি নির্মাতা, শিল্পী-কলাকুশলী ও গল্প-সমৃদ্ধ ছবির কৌলিন্য বজায় থাকে নব্বই দশকের মধ্যসময় পর্যন্ত। খাজা ও নবাব শ্রেণি ছাড়াও খানদানি বংশ পৃষ্ঠপোষকতা করত এই গণমাধ্যমটির। দুঃখজনক হলেও সত্যি, নব্বই দশকের শেষদিকে সুস্থ রুচি বিবর্জিত কাণ্ডজ্ঞানহীন কতিপয় নির্মাতা শুরু করেন অশ্লীল ছবি নির্মাণের মতো অপরাধ। গোত্র পরিচয়হীন কতিপয় নরনারীকে নিয়ে ছবির নামে কাটপিস নির্মাণ শুরু হয়। সুস্থ মানুষ বা সুশীল সমাজ তাদের নির্মাতা ও শিল্পী বলতে লজ্জাবোধ করে। এ কারণে একদিকে সুস্থ রুচির দর্শক সিনেমা হলে যাওয়া বন্ধ করে দেয়, অন্যদিকে বিকৃত রুচির কিছু মানুষ এসব দেখে দেশ ও সমাজে নতুন অপরাধের জন্ম দেয়।
কাটপিস জাতীয় অশ্লীল ছবিতে কিছু নারী অভিনয় করে নারী শিল্পীদের মুখে কালিমা লেপন করে। তাদের মধ্যে বেশ কজনের নাম দীর্ঘদিন ধরে মিডিয়ায় উচ্চারিত হয়ে আসছে। বেশি সমালোচিত হয়েছেন মুনমুন, ময়ূরী, পলি, ঝুমকা, শাপলা, সাহারা, নাসরিন প্রমুখ। একসময় দেশবাসীর দাবির মুখে সরকার ও এফডিসি অশ্লীলতা রুখতে সক্রিয় হয়। কিন্তু অশ্লীল নির্মাতা ও শিল্পীদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি কখনো। অনেক নারী সংগঠন আক্ষেপ করে প্রায়শ বলে, এসব নারী কীভাবে অশ্লীল দৃশ্যে অভিনয় করার মতো দুঃসাহস দেখিয়ে একদিকে চলচ্চিত্র অন্যদিকে নারী জাতিকে কলঙ্কিত করল। তাদের বিরুদ্ধে কেন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। তাদের কারণেই এখনো দেশীয় ছবির নাম শুনলে দর্শক নাক সিটকায়। চলচ্চিত্র ব্যবসা ধ্বংস হয়। ২০০৫ সালে এফডিসির এমডি আ ন ম বদরুল আনাম এসব অভিনেত্রীকে এফডিসিতে প্রবেশ নিষিদ্ধ করেন। তারপরও বিভিন্ন সময় তারা এফডিসিতে প্রবেশ এবং ছবিতে অভিনয়ের চেষ্টা করেন। কিন্তু মিডিয়ার সজাগ দৃষ্টি ও প্রতিবাদের কারণে সফল হয়নি তাদের সেই চেষ্টা।
অশ্লীলতার দায়ে অভিযুক্ত মুনমুন, ময়ূরী, পলি, সাহারা, নাসরিন এখন কোথায়? এমন কৌতূহল অনেকের মধ্যেই আছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মুনমুন আশুলিয়ায় নিজের বাড়িতেই থাকেন। সংসার করার স্বপ্ন নিয়ে দুবার বিয়ে করেন। দুই ঘরে তার দুটি ছেলে সন্তানও আছে। দুই স্বামীই তাকে ত্যাগ করেছেন। তার মা মুনমুনকে নিয়ে স্বামীর ঘর ছেড়ে আসে ভাগ্যের সন্ধানে। মেয়ে মুনমুন সংসারের হাল ধরবে এমন একটা বাসনা নিয়ে চিত্রজগতে মেয়েকে নিয়ে আসেন। ১৯৯৪ সালে এহতেশামের 'মৌমাছি' ছবি দিয়ে চলচ্চিত্রে মুনমুনের যাত্রা শুরু হয়। কিন্তু মৌমাছি ছবিটি বাণিজ্যিকভাবে ব্যর্থ হওয়ার পর তাকে কেউ সিনেমায় নিতে চাইল না। তখন মন্দ ছবির সিঁড়ি বেয়ে মুনমুন উপরের দিকে উঠতে থাকে আর অশ্লীল নায়িকা হিসেবে অভিযুক্ত হয়।
ময়ূরীকে চলচ্চিত্রে নিয়ে আসেন মাহমুদ নামে এক প্রযোজক। ছবির পরিচালক ছিলেন কবি আবুল হাসানের ছোট ভাই প্রয়াত আবিদ হাসান বাদল। ছবিটি নির্মাণ হলেও ময়ূরী তাতে ছিল না। তার ক্যারিয়ার শুরু 'রাজা' নামের একটি ছবি দিয়ে। এরপর ক্যারিয়ার সজীব রাখতে অশ্লীল ঘরানার ছবির প্রযোজকদের সঙ্গে সখ্য গড়ে তোলে। ময়ূরী সে সময় মগবাজার এলাকায় একটি ফ্ল্যাট কেনেন। এখনো সেই ফ্ল্যাটেই থাকেন। সংসার করেন এবং তার একটি কন্যাসন্তান আছে।
পলি আসেন মোহাম্মদ হোসেন পরিচালিত 'ফায়ার' ছবির মাধ্যমে। এ ছবিটির শুটিং হয় ব্যাংককে। তখন তার বিরুদ্ধে ব্যাংককের নগ্ন বারে নগ্ন হয়ে অভিনয় করার অভিযোগ উঠলেও ছবিতে সে দৃশ্য দেখা যায়নি। পলি কখনোই সুস্থ ছবির নায়িকা হয়ে উঠতে পারেনি। পলি এখন গুলশানে নিজের ফ্ল্যাটে থাকেন। দুটি যমজসহ তার চার সন্তান রয়েছে। পলি অভিনীত প্রায় ১১৩টি ছবি মুক্তি পেয়েছে।
অশ্লীলতার অভিযোগে এই তিন নায়িকার বিরুদ্ধে মামলাও হয়েছিল। তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসন যখন কঠোর হয়ে ওঠে তখনই ধীরে ধীরে তিনজনের ক্যারিয়ারে ভাটা পড়তে শুরু করে। তাদের নিয়ে যেসব প্রযোজক ছবি বানাতেন তারা প্রশাসনের ভয়ে এ ব্যবসা থেকে পাততাড়ি গুটিয়ে অন্যদিকে সরে যান। মুনমুন-ময়ূরী বর্তমানে দেশে ও বিদেশে স্টেজ প্রোগ্রাম করেন। সেখান থেকেই তাদের জীবিকা আসে।
সাহারা পরবর্তীতে ভালো ছবির সঙ্গে যুক্ত হন এবং ২০১৩ সাল পর্যন্ত নিয়মিত অভিনয় করেন। ওই বছরের শেষদিকে এক প্রযোজককে গোপনে বিয়ে করে চলচ্চিত্র ছাড়েন। নাসরিনও নিয়মিত অভিনয় করে যান। একই সময় বিয়ে করে নাসরিনও সংসারী হন। শাপলা এবং ঝুমকাও বিয়ে করে সংসার করছেন বলে জানা গেছে।