নাটকে অন্তঃপ্রাণ মানুষ ড. ইনামুল হক। প্রায় অর্ধশতক ধরে নাটকের সঙ্গে জড়িয়ে রেখেছেন নিজেকে। প্রথম যৌবন থেকে এই পৌঢ় বয়সেও ভালোলাগা ও ভালোবাসার স্থান শুধু নাটককেই দিয়েছেন। এ বিষয়ে আজ তার ইন্টারভিউ-
টেলিভিশন ও মঞ্চ- নাটকের দুই অঙ্গনের তুলনামূলক পার্থক্যটা কোন ধরনের?নাটকের ক্ষেত্রে আমি কোনো বিভাজন করতে চাই না। দুই অঙ্গনের নাটক দুই ধরনের। দুই ধরনের নাটকের ফিলিংসটাও দুই ধরনের। তবে মঞ্চের বিষয়টা টেলিভিশনের চেয়ে বেশি সিরিয়াস বলে মঞ্চের ফিলিংসটাও বেশি সিরিয়াস। অ্যাকটিংয়ের ধারাটাও ভিন্ন। মঞ্চে প্রেমের সংলাপটাও অনেক জোরে প্রক্ষেপণ করতে হয়। যাতে মিলনায়তনের শেষ বেঞ্চের দর্শকও সংলাপটি শুনতে পায়। মঞ্চে দর্শকদের একটা তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়। তাই বলা যায়, টিভিতে পাওয়া যায় ইমেজের রিয়েকশন আর মঞ্চে পাওয়া যায় বাস্তবের রিয়েকশন। এ ছাড়া টেলিভিশনের চেয়ে মঞ্চের দায়বদ্ধতাটাও অনেক বেশি। যে দর্শন, বিশ্বাস ও দায়বদ্ধতা থেকে মঞ্চে নাটক হয় টেলিভিশনের কিন্তু সেই দায়বদ্ধতা, বিশ্বাস ও দর্শন কোনোটাই নেই। বাণিজ্যিকতার কারণে টেলিভিশনের শিল্পের সিরিয়াসনেস কমে যাচ্ছে।
দর্শন, বিশ্বাস, ফিলিংস ও দায়বদ্ধতা- সবই আছে। কিন্তু পেশাদারিত্ব নেই। শুধু দর্শন ও বিশ্বাস দিয়ে শিল্পীরা কতদিন টিকে থাকবে?
দর্শক যদি বাড়াতে না পারি তাহলে পেশাদারিত্ব তৈরি হবে কীভাবে! আগে দলগুলোর মধ্যে পেশাদারিত্ব তৈরি করতে হবে পরে সামগ্রিক পেশাদারিত্বের কথা চিন্তা করতে হবে। দর্শকের অভাবে দলগুলো নিজ নিজ প্রযোজনা নিয়ে দিনের পর দিন যেভাবে লোকসান দিয়ে যাচ্ছে তাতে পেশাদারিত্ব তো দূরের কথা টিকে থাকাই মুশকিল।
শিল্পকলা একাডেমি তো রেপার্টরি চালু করেছে। পেশাদারিত্বের ক্ষেত্রে এটা কতটুকু ভূমিকা পালন করেছে বলে মনে করেন?
গুটিকয়েক শিল্পীর জন্য রেপার্টরি চালু করলে পেশাদারিত্ব তৈরি সম্ভব নয়। সারা দেশের শিল্পীদের রেপার্টরির আওতায় আনতে হবে। না হলে কখনোই মঞ্চে পেশাদারিত্ব হবে না।
মঞ্চ নাটককে সমৃদ্ধির পথে উন্নীত করতে হলে কী করণীয় রয়েছে বলে আপনি মনে করেন?
এক্ষেত্রে নাট্যকর্মী ও সরকার উভয়কেই এগিয়ে আসতে হবে। সামাজিকতার ও মানসিকতার বিপ্লব ঘটাতে হবে। স্কুল-কলেজ থেকে নাটক ও সংস্কৃতির প্রতি ভালোবাসা তৈরি করতে হবে। ঘরে ঘরে নাট্যচর্চা করতে হবে। নাট্যকর্মীদের তাদের আত্দীয়-স্বজন ও প্রতিবেশীদের নাটকের প্রতি উৎসাহিত করতে হবে। নাটক নিয়ে আমাদের কিছু কূপমণ্ডূকতা রয়েছে সেগুলো দূর করতে হবে। সাংস্কৃতিক শিক্ষার বিকাশ ঘটাতে হবে। শুধু শিল্পকলা একাডেমির মঞ্চ দিয়ে চলবে না, ঢাকার বিভিন্ন স্থানে মঞ্চ নির্মাণ করতে হবে।
নাগরিক নাট্যাঙ্গন নিয়ে আপনি ঢাকার বাইরে ভারতেও বহুবার শো করেছেন। এখানকার দর্শক ও ওখানকার দর্শকদের মাঝে তুলনামূলক পার্থক্যটা কোন ধরনের?
ভারতের দর্শকরা আমাদের দর্শকদের চেয়ে অনেক বেশি সংস্কৃতিবান্ধব। ওদের ঘরে ঘরে সংস্কৃতি চর্চা হয়ে থাকে। ধর্ম থেকে শুরু করে ওদের সবকিছুতেই সংস্কৃতি একটা বিরাট জায়গা দখল করে আছে। যার কারণে ওদের মানসিকতাটাও সংস্কৃতির মধ্যে আবদ্ধ।
মোস্তফা মতিহার