মৃত্যুর আগে তিন যুগ লোকচক্ষুর আড়ালে জীবন যাপন করা অভিনেত্রী সুচিত্রা সেনের দুটি ছবি ‘ভাইরাল’ হয়ে ঘুরছে ফেইসবুকে।
ঊনিশশ পঞ্চাশের দশক থেকে প্রায় ২৫ বছর কোটি বাঙালির হৃদয়ে ঝড় তুলে নিজেকে সরিয়ে নেওয়া বাংলা চলচ্চিত্রের কিংবদন্তি অভিনেত্রী সুচিত্রা সেন গত বছরের ১৭ জানুয়ারি ৮২ বছর বয়সে মারা যান।
১৯৭৮ থেকে ২০১৪- প্রায় তিনটি যুগ ঠিক কোন অভিমানে এপার বাংলার মেয়ে সুচিত্রা নিজেকে আড়াল করে রেখেছিলেন তা কখনোই জানা যায়নি।
সম্প্রতি কলকাতা থেকে প্রকাশিত আনন্দবাজার পত্রিকায় ছাপা হয় সুচিত্রার দুটি ছবি। ছবির নিচে ক্যাপশনে লেখা ছিল ১৯৯২ সালে এই ছবি দুটি তোলা হয়।
আনন্দ বাজারে এ নিয়ে সুচিত্রার নাতনি রাইমা সেনের একটি মন্তব্য প্রতিবেদনও ছাপানো হয়েছে।
রাইমা বলছেন, ''এই দিম্মাই তো আমার ছোটবেলার দিম্মা। সত্যি এক ছবিতেই কত স্মৃতি! দিম্মার এই ছবিটা সেই সময়কার, যখন দিম্মা নিজেকে একেবারে সরিয়ে নিয়েছিল। তাই এই দিম্মাকে সত্যি এত দিন খুব কম মানুষই দেখেছেন।''
''সেই সময় আমরা হ্যারিংটন ম্যানসনস-এ থাকতাম। আর দিম্মা থাকত বালিগঞ্জে। শুক্রবার বিকেলে স্কুলের ছুটি হলেই আমরা গাড়ি করে সোজা দিম্মার বাড়ি। আমাদের বাকি সব কাজিনও চলে আসত উইকএন্ড কাটাতে। মায়ের ছোট মাসির মেয়েরা, তৃণা, লগ্না— এরাই ছিল আমার আর রিয়ার খেলার সঙ্গী।''
''যে চেয়ারটা দেখছেন ছবিতে, সেই চেয়ারটা ছিল দিম্মার সবচেয়ে প্রিয়। ছোটবেলায় মনে আছে, ওই চেয়ারে চড়ে আমি দিম্মাকে কত খামসেছি, আদর করেছি, চুমু খেয়েছি... এই চেয়ারের মাথার পিছনেও উঠতাম আমরা। আর দিম্মা আমাদের সাবধানে নামিয়ে দিত।''
''আজ এত বছর পর এই ছবিটা দেখে তাই বুকের ভিতরটা হুহু করছে।''
১৯৭৮ সালে ‘প্রণয় পাশা’ ছবিতে অভিনয়ের পর সুচিত্রা সেন আকস্মিকভাবেই চলে যান লোকচক্ষুর অন্তরালে।
এরপর প্রথম তিনি আড়াল ছেড়ে বাইরে আসেন মহানায়ক উত্তম কুমারের মৃত্যুর পর। মাঝরাত পর্যন্ত বসে ছিলেন তার মরদেহের পাশে। সুচিত্রা শেষ জনসম্মুখে আসেন ১৯৮৯ সালে, তার গুরু ভরত মহারাজের মৃত্যুর পর।
২০০৫ সালে সুচিত্রাকে দাদাসাহেব ফালকে পুরস্কারের জন্য মনোনীত করা হলেও ভারতের রাষ্ট্রপতির হাত থেকে পুরস্কার নিতে বাড়ির বাইরে বেরিয়ে দিল্লি যেতে রাজি হননি তিনি।
অভিনয় জীবনের পুরোটা সময় জনপ্রিয়তার শীর্ষে থাকা মানুষটি ছিলেন তার নিজের এবং পরের দুটি প্রজন্মের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে। তার অন্তরালের জীবন নিয়েও কৌতূহলের অন্ত ছিল না। কিন্তু নিজের পারিবারিক ও অন্তরালের জীবন নিয়ে কঠোর গোপনীয়তা মেনে চলেছেন সুচিত্রা।
বিডি-প্রতিদিন/২৫ জুলাই ২০১৫/ এস আহমেদ