এবার দীর্ঘদিন বিদেশে ছিলেন। এত লম্বা ট্যুর!
হ্যাঁ, প্রায় তিন মাস কানাডা ছিলাম। খুব ভালো সময় কেটেছে। আমি আর অনিক মিলে ঈদ, জন্মদিন পালন এবং খুব আনন্দ করেছি। নতুন অনেক অভিজ্ঞতাও সঞ্চয় করেছি। যেমন বাসে চড়া, কম্পিউটার আর ল্যাপটপ প্রশিক্ষণের কোর্স করা ইত্যাদি। নিজের দেশে তো কখনো বাসে চড়া সম্ভব হয়নি। সেলিব্রেটি বলে পাবলিক প্লেসে স্বাধীনভাবে চলাফেরা করা যায় না। মানে স্বাধীন জীবন বলতে যা বোঝায় তা কখনো এনজয় করতে পারিনি। ওখানে ওয়াটার লু থেকে বাসে চড়ে অনেক দূরে গিয়ে হালাল গোস্ত আর অন্যান্য কেনাকাটা করেছি, ঘুরে বেড়িয়েছি। মজার মজার রান্না করেছি। এসব দেখে অনিক বলেছে 'ইউ আর গ্রেট মাদার অ্যান্ড কুক।'
অনিকের লেখাপড়ার বিষয়ে কিছু বলবেন।
ও এখন ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে মাস্টার্স করছে। নভেম্বরে ফাইনাল পরীক্ষা। অলরেডি ওয়াটার লু ইউনিভার্সিটিতে ওর চাকরি হয়ে গেছে। জানুয়ারি থেকে চাকরিতে যোগদান করবে। ওর পদের নাম 'প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্ট ফর ইউনিভার্সিটি রিসার্চ'।
দেশ আর বিদেশ, বেশি ভালো লাগা কোথায়?
অবশ্যই নিজের দেশ। আমি আবার দ্রুত হোমসিক হয়ে যাই। তাই বিদেশ যতই খুশি লাগুক বেশি দিন মন টেকে না। মনে হয় আমার দেশে আমিই রাজা। আসলে নিজের দেশের মতো নিরাপত্তা আর স্বাধীনতা কোথাও নেই।
চলচ্চিত্রে আর ফেরা হবে না?
আমি তো চলচ্চিত্রকে কখনো গুডবাই বলিনি। মনের মতো গল্প আর চরিত্রের অভাবে আপাতত বিরতি দিয়েছি। পুতুল খেলার বয়স থেকে চলচ্চিত্রের সঙ্গে জড়িয়ে আছি। এই জগত আমাকে অর্থ-বিত্ত-যশ-খ্যাতি সবই দিয়েছে। ভালো চলচ্চিত্রের অভাবে এখন ক্যামেরার সামনে দাঁড়াতে পারছি না বলে প্রতিটা মুহূর্তে মনটা গুমড়ে কাঁদে। অপেক্ষায় আছি, আবার চলচ্চিত্রের সোনালি দিন ফিরবে। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত অভিনয় করে যেতে পারব।
চলচ্চিত্রের বর্তমান দুরবস্থার জন্য দায়ী কে?
এককভাবে কেউ দায়ী নয়। সমগ্র ব্যবস্থায় কেমন জানি মৌলিকত্বের অভাব তৈরি হয়েছে। জহির রায়হান, কাজী জহির, খান আতা, আমজাদ হোসেন, সুভাষ দত্ত, নারায়ণ ঘোষ মিতাসহ অনেকের মতো সর্বজন বিদিত নির্মাতা এখন কোথায়? যেসব ছবি নির্মাণ হয় সেগুলো কি পরিবার নিয়ে দেখার মতো? টিভিতে অনেক ছবির গান দেখে দুঃখ হয়। এসবের পোশাক, শরীর প্রদর্শন আর নাম কি আমাদের সংস্কৃতির সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ? নকল তো আছেই। সব সময় মনে রাখতে হবে আমরা বাঙালি। জাতি হিসেবে নিজস্ব স্বকীয়তা বজায় রাখা আমাদের দায়িত্ব। চলচ্চিত্র এখন পুরোপুরি ব্যবসায়িক পণ্য হয়ে গেছে। তাই এর মানও নিম্নগামী হয়েছে। অথচ চলচ্চিত্র হচ্ছে শিল্প ও ব্যবসার সংমিশ্রণে প্রধান একটি গণমাধ্যম। ভালো ছবি যে একেবারে হচ্ছে না তা কিন্তু নয়। তবে রাস্তাঘাটের নিরাপত্তা আর সিনেমা হলের বাজে পরিবেশের কারণে দর্শক কি পরিবার নিয়ে ছবি দেখতে যেতে পারছে?
বর্তমান সময়ের শিল্পীদের সম্পর্কে মন্তব্য কি?
আসলে এখন যে গুণী শিল্পী আসছে না তা কিন্তু নয়। তবে এদের কাজে লাগানো বা প্রপারলি কাজ আদায় করে নেওয়ার মতো নির্মাতা কোথায়? মিস ইউজের কারণে এখনকার শিল্পীরা কাজের প্রতি সিনসিয়ার হতে পারছে না। আমরা এখনো চরিত্র আর সংলাপ নিয়ে অনবরত ভাবি। একটি শট দিয়ে সন্তুষ্ট হতে পারি না। নির্মাতাকে অনুরোধ করে বলি- আমার এই শটটি মনে হয় ভালো হয়নি, প্লিজ আরেকবার নেন। কিন্তু এখনকার শিল্পীরা নিজেরা শট দিয়ে নিজেরাই বলে 'ওকে' 'নেঙ্ট'। এর জন্য নির্মাতাদেরই দায়ী করব।
নিজের কাছে নিজের মূল্যায়ন কেমন?
আমি একজন পরিপূর্ণ শিল্পী, মা এবং মানুষ। চলচ্চিত্রে দেশ-বিদেশে সাফল্যের স্বাক্ষর রাখতে এবং সন্তানকে আদর্শ সন্তান হিসেবে গড়ে তুলতে পেরেছি- এটিই আমার জীবনের বড় সফলতা। সবমিলিয়ে আমি একজন পরম সুখী মানুষ। এর জন্য দর্শক এবং দেশবাসীর কাছে কৃতজ্ঞ।
আলাউদ্দিন মাজিদ