এক সময় তারা ছিলেন দাপুটে নায়িকা। আকাশছোঁয়া জনপ্রিয়তা নিয়ে কাজ করেছেন বড় পর্দায়। তাদের ছবি মানেই দর্শক-আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু। কিন্তু ২০১০ সাল থেকে নিজেরাই ব্যক্তিগত কারণে চলচ্চিত্র থেকে দূরে সরতে থাকেন। দর্শকপ্রিয় এই নায়িকারা হলেন- শাবনূর, পূর্ণিমা, নিপুণ, সাহারা ও রেসি।
শাবনূর চলচ্চিত্রে আসেন ১৯৯৩ সালে। প্রখ্যাত চিত্রপরিচালক এহতেশাম তাকে চলচ্চিত্রে আনেন। প্রথম ছবি 'চাঁদনী রাতে'। অপ্রতিরোধ্য জনপ্রিয়তায় ২০১০ সাল পর্যন্ত নিয়মিত অভিনয় করে যান তিনি। ২০০৬ সালে 'দুই নয়নের আলো' ছবির জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে শ্রেষ্ঠ নায়িকার স্বীকৃতি পান। এ ছাড়া নানা সংগঠনের অসংখ্য সম্মাননাও লাভ করেন। ২০১১ সালে সহশিল্পী অনিককে বিয়ে করে চলচ্চিত্রে অনিয়মিত হয়ে পড়েন তিনি। অস্ট্রেলিয়ার নাগরিকত্ব নিয়ে সেখানেই স্থায়ীভাবে বসবাস করতে থাকেন। মাঝে মধ্যে দেশে এসে অনিয়মিতভাবে দু-একটি ছবিতে কাজ করেন। ২০১৩ সালের ২৯ ডিসেম্বর অস্ট্রেলিয়ায় সন্তানের মা হন তিনি। এখন সংসার নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ায় চলচ্চিত্র থেকে প্রায় বিদায় নিয়েছেন এই নায়িকা। গত বছর দেশে ফিরলেও নতুন কোনো ছবির কাজ হাতে নেননি তিনি। আগে তার অসমাপ্ত বেশ কিছু ছবি রয়ে গেছে। এর মধ্যে সম্প্রতি 'পাগল মানুষ' ছবির শুটিংয়ে অংশ নিলেও শিগগিরই আবার অস্ট্রেলিয়া যাওয়ার ঘোষণা দেন তিনি। এতে তার অভিনয়ের প্রতি অনাগ্রহ প্রকাশ পেয়েছে বলে চলচ্চিত্র নির্মাতারা বলছেন।
১৯৯৭ সালে জাকির হোসেন রাজুর 'এ জীবন তোমার আমার' চলচ্চিত্রের মাধ্যমে চিত্রজগতে পদার্পণ পূর্ণিমার। ২০১০ সালে কাজী হায়াৎ পরিচালিত 'ওরা আমাকে ভালো হতে দিল না' চলচ্চিত্রের জন্য শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীর সম্মান লাভ করেন তিনি। ২০০৭ সালে বিয়ে করলেও নিয়মিত অভিনয় করে যান পূর্ণিমা। কিন্তু সংসার নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ায় ২০১০ সাল থেকে অনিয়মিত হয়ে পড়েন তিনি। ২০১৪ সালে মা হওয়ার পর এখন তার চলচ্চিত্রে নিয়মিত অভিনয় প্রায় অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। তিনিও জানান, চলচ্চিত্রকে প্রচুর সময় দিয়েছি। এবার সংসার নিয়ে ব্যস্ত থাকতে চাই।
২০০৪ সালে 'রুখে দাঁড়াও' চলচ্চিত্রের মাধ্যমে চিত্রজগতে আত্মপ্রকাশ সাহারার। ২০০৬ সালে শাকিব খানের বিপরীতে 'প্রিয়া আমার প্রিয়া' চলচ্চিত্রে অনবদ্য অভিনয় করে দর্শক নজর কাড়েন তিনি। ঢালিউডে শিল্পী সংকট উত্তরণে যথেষ্ট ভূমিকা রেখে এগোচ্ছিলেন এই নায়িকা। প্রচুর হিট ছবি উপহার দিয়ে আসছিলেন। কিন্তু ২০১৩ সালে এক চিত্রপ্রযোজককে গোপনে বিয়ে করে চলচ্চিত্র থেকে স্বেচ্ছানির্বাসনে যান তিনি। বর্তমানে পুরোদস্তুর সংসারী তিনি।
২০০৬ সালে এমএ আউয়াল পরিচালিত 'আমার রত্ন গর্ভা' চলচ্চিত্রের মাধ্যমে বড় পর্দায় অভিনয়ে আসেন নিপুণ। এই চলচ্চিত্রটি মুক্তি না পেলেও ২০০৭ সালেই সুপার হিট ছবি উপহার ও জাতীয় পুরস্কার প্রাপ্তির মধ্য দিয়ে ঢালিউডে স্থায়ী আসন করে নেন নিপুণ। ওই বছর তার অভিনীত এফআই মানিক পরিচালিত 'পিতার আসন' সুপারহিট চলচ্চিত্রের তালিকায় নাম লেখায় এবং শাহ আলম কিরণ পরিচালিত প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের গল্পে নির্মিত 'সাজঘর' চলচ্চিত্রের জন্য শ্রেষ্ঠ পাশর্্ব অভিনেত্রী হিসেবে জাতীয় পুরস্কার লাভ করেন তিনি। ২০১০ সালে 'চাঁদের মতো বউ' চলচ্চিত্রের জন্য দ্বিতীয়বার জাতীয় পুরস্কার অর্জন করেন। তা ছাড়া উপহার দিয়ে যান অসংখ্য ব্যবসাসফল ছবি। বিবাহিত এই নায়িকা চলচ্চিত্রে আসার আগে থেকেই যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী ছিলেন। সেখানে তার সন্তানও রয়েছে। ২০১০ সালের শেষ দিক থেকে যুক্তরাষ্ট্রে ঘন ঘন যাতায়াতের ফলে অভিনয়ে অনিয়মিত হয়ে পড়েন তিনি। বর্তমানে কয়েকটি চলচ্চিত্রে কাজ করলেও আগের মতো ব্যস্ততা নেই তার।
২০০৬ সালে বুলবুল জিলানীর হাত ধরে চলচ্চিত্রে আসেন রেসি। অভিনয় করেন এই নির্মাতার 'নীল অাঁচল' ছবিতে। অভিনয়ে এসেই সুশ্রী মুখশ্রীর কারণে দর্শক-নির্মাতার নজর কাড়েন তিনি। অনেকে তার মধ্যে মৌসুমীর ছায়া দেখতে শুরু করেন। প্রচুর ছবিতে কাজ করতে থাকেন তিনি। ২০০৯ সাল থেকে ডিপজলের প্রযোজনা সংস্থার স্থায়ী নায়িকা হয়ে যান রেসি। এরপর অন্য কারও ছবিতে আর অভিনয় করেননি তিনি। ২০১২ সালের শেষ দিকে হঠাৎ করে অভিনয় ছেড়ে নিরুদ্দেশ হন রেসি। অবশেষে ২০১৩ সালের প্রথম দিকে বিয়ে করেন পুরনো এক প্রেমিককে। এরপর চট্টগ্রামে শ্বশুরবাড়ি গিয়ে সংসার নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েন তিনি। ২০১৪ সালে মা হন এই নায়িকা। ওই বছরই জাকির হোসেন রাজুর 'অনেক দামে কেনা' ছবির মাধ্যমে আবার চলচ্চিত্রে ফিরলেও এখন পর্যন্ত আর কোনো ছবিতে চুক্তিবদ্ধ হননি রেসি। তাই এই নায়িকার অভিনয়ে নিয়মিত হওয়া নিয়ে রয়েছে সংশয়।