শিরোনাম
২৬ জানুয়ারি, ২০২০ ১২:০৯

পাতৌদি ব্যাট হাতে নামলেই বেজে উঠত শর্মিলা ঠাকুরের ছবির গান

অনলাইন ডেস্ক

পাতৌদি ব্যাট হাতে নামলেই বেজে উঠত শর্মিলা ঠাকুরের ছবির গান

ব্যাটিংরত পাতৌদি ও গ্যালারিতে শর্মিলা ঠাকুর

সুনা কেয়া? (শুনেছ নাকি) প্রশ্ন বোলারের। যার উদ্দেশে প্রশ্ন, সেই ব্যাটসম্যান এই মাত্র অফস্টাম্পের বাইরে পরাস্ত হয়েছেন। এখনকার দিনে বোলারকে ও ভাবে এগিয়ে যেতে দেখলে মনে হত, এই বুঝি শুরু হল স্লেজিং! এখানে ব্যাটসম্যানের কাছে গিয়ে কিছু শোনার অনুরোধ জানাচ্ছেন বোলার। কিন্তু কী? ব্যাটসম্যান আবার মূর্তিমান মনঃসংযোগ- সুনীল গাভাস্কার। ব্যাটিং করার সময় তার সামনে এমন অদ্ভুত আর্জি নিয়ে হাজির হতে পারতেন এক জনই। ভারতের ঘরোয়া ক্রিকেটের ম্যাচে সে দিন তিনিই ছিলেন বোলার- বি এস চন্দ্রশেখর। বলা উচিত ভারতের জনপ্রিয় প্লেব্যাক গায়ক মুকেশ-ভক্ত চন্দ্রশেখর। গাভাস্কারের কাছে গিয়ে দূর থেকে ভেসে আসা ‘জিস দেশ মে গঙ্গা বহতি হ্যায়’-এর গান শোনার অনুরোধ জানাচ্ছেন তিনি!

সুনা কেয়া? এ বার সুনীল গাভাস্কাররও কান খাড়া। নিকুচি করেছে মনঃসংযোগের। গুনগুন করে গাইছেন ব্যাটসম্যান-বোলার দু’জনেই। কে বলবে সে দিন তারা যুযুধান প্রতিপক্ষ! তখন ক্রিকেট শুধু খেলা ছিল না, ছিল নানা আবেগের মিলনমঞ্চ! প্রতিদ্বন্দ্বিতার পাশাপাশি ছিল পারস্পরিক শ্রদ্ধা। যেমন ক্রিকেটের চিরকালীন সংগ্রহশালায় ঢুকে রয়েছে আর্থার মেইলির মন্তব্য। মেইলি শুধু বিখ্যাত লেগস্পিন-গুগলি বোলারই ছিলেন না, একই সঙ্গে ক্রিকেট নিয়ে অসাধারণ লিখতেন, দারুণ ‘ক্যারিকেচারিস্ট’ ছিলেন। ভিক্টর ট্রাম্পার ছিলেন তার সবচেয়ে প্রিয় ক্রিকেটার। অস্ট্রেলিয়ার ঘরোয়া ম্যাচে মেইলি আউট করলেন ট্রাম্পারকে। বেরিয়ে যাওয়ার সময় ব্যাটসম্যান বলে গেলেন, ‘‘বলটা আমার পক্ষে একটু বেশিই ভাল ছিল।’’

সেই সময় ট্রাম্পারের মুখ থেকে এমন প্রশংসাবাক্য শোনা মানে যে কোনও বোলারের ‘নাইট’ উপাধি পাওয়ার সমান। কিন্তু মেইলি পরে লিখলেন, ‘‘এই উইকেট নেওয়ার মধ্যে কোনও উৎসবের আনন্দ ছিল না। বরং নিজেকে সেই বালকের মতো মনে হচ্ছিল, যে এইমাত্র একটা পাখিকে মেরে ফেলেছে!’’    

চন্দ্রশেখরের আমলে তারকাদের সঙ্গে আত্মিক যোগ তৈরি করার মাধ্যম হয়ে উঠেছিল ট্রানজিস্টার। প্রিয় ক্রিকেটারের শখ বুঝে গ্যালারি থেকে দর্শকেরা বাজিয়ে দিতেন জনপ্রিয় ফিল্মি গান। চন্দ্রশেখর বল করছেন মানে রেডিও স্টেশন ঘুরিয়ে অবধারিত ভাবে মুকেশের গান ধরা হবে। তার অধিনায়ক টাইগার পতৌদি ব্যাট করার সময়ে আবার শোনা যেত শর্মিলা ঠাকুরের ছবির কোনও বিখ্যাত রোম্যান্টিক গান। ‘ওয়াদা করো নেহি ছোড়োগি তুম মেরা সাথ/ জাহাঁ তুম হো, ওয়াহাঁ ম্যায় ভি হুঁ...’

চন্দ্রের ‘মুকেশ কালেকশন’-এর সবচেয়ে বড় ভক্ত হয়ে ওঠেন গাভাস্কার। মাঝেমধ্যে গুরুদক্ষিণা দিতেও ভুলতেন না তিনি। কোনও ম্যাচে হয়তো বিপক্ষ জুটি দাঁড়িয়ে গিয়েছে। কিছুতেই ভাঙা যাচ্ছে না। গাভাস্কার গিয়ে চন্দ্রের পাশে হাঁটতে হাঁটতে গুনগুন করে মুকেশের গান গাইতেন। তাতে অনেক সময়েই বোলার উদ্বুদ্ধ হয়ে উইকেট তুলে নিতেন। পতৌদির সেই দলে প্রবাদই তৈরি হয়ে গিয়েছিল, যদি চন্দ্রের হাতের জাদুতে উইকেট না-ওঠে, মুকেশের কণ্ঠ আনো। কেল্লা ফতে হবেই! 

সূত্র: আনন্দবাজার পত্রিকা

বিডি প্রতিদিন/ফারজানা

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর