দুই দফায় ছয়দিনের রিমান্ড শেষে আলোচিত চিত্রনায়িকা পরীমণিকে আজ ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতে হাজির করে পুলিশ। আদালত তার জামিন নামঞ্জুর করে তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত কারাগারে আটকে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। এদিকে, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে তাকে গ্রেফতারের পর থেকে উত্তপ্ত দেশ। অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ার আগেই নেটমাধ্যমে নিন্দার ঝড় বইছে। পরীমণির জীবনযাপন নিয়ে কদর্য মন্তব্যের শেষ নেই বলে এক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ভারতীয় দৈনিক আনন্দবাজার পত্রিকা।
গণমাধ্যমটি বাংলাদেশের বিশিষ্টজন আবদুল গাফফার চৌধুরীর পরীমণিকে নিয়ে করা মন্তব্যও তুলে ধরেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে আবেদন জানিয়ে গাফফার চৌধুরী বলেন, ‘পরীমণিকে হায়না চক্রের হাত থেকে রক্ষা করা হোক।
বাংলাদেশের অমর গান ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি’-এর এই লন্ডন প্রবাসী ৮৬ বছরের রচয়িতা ও সাংবাদিকের আবেদনের গুরুত্ব অপরিসীম। সংখ্যায় অল্প হলেও ধীরে ধীরে পরীমণির বিষয়ে মুখ খুলছে শিল্পী সমাজ।
ধরপাকড়ের কিছু দিন আগে পরীমণি দেশের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিলেন প্রীতিলতা চরিত্রে। ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা সংগ্রামের শহিদ প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার। তাঁর জীবন অবলম্বনে নির্মীয়মাণ ‘প্রীতিলতা’ ছবিতে পরীমণি অভিনয় করছেন নাম-ভূমিকায়। পরীমণি গ্রেফতার হওয়ার পরেই টিম প্রীতিলতার পক্ষে দাবি জানানো হয় ‘পরীমণির মুক্তি চাই’।
এবার ‘প্রীতিলতা’ ছবির পরিচালক রাশিদ পলাশ গণমাধ্যমকে বললেন, পরীমণি আমাদের ‘প্রীতিলতা’-র প্রধান চরিত্র। ১৭ আগস্ট থেকে চট্টগ্রামে আমাদের টানা কুড়ি দিন শুটিং ছিল। আমাদের শুটিং এখন অনিশ্চিত। এই করোনাকালে আমাদের প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান একটা বড় ক্ষতির মুখে পড়ল। বিচার চলুক, কিন্তু আমাদের দেশের সরকার ও সংশ্লিষ্ট মহলের কাছে আমরা দাবি জানাচ্ছি দ্রুত আমাদের প্রীতিলতাকে জামিনে মুক্তি দেওয়া হোক। আমরা ‘টিম প্রীতিলতা’ অভিনেত্রী পরীমণির মুক্তি চাই।
পরীমণির মুক্তি চান মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের আহ্বায়ক ও মুখপাত্র অধ্যাপক আ ক ম জামালউদ্দিন। ফেসবুক পোস্টে তিনি লিখেছেন, ‘চিত্রনায়িকা পরীমণি-সহ গ্রেফতারকৃত সব শিল্পী কলা-কৌশলীকে অবিলম্বে মুক্তি দিন। স্ট্যান্ড ফর পরীমণি।’
মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের আহ্বায়ক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক এ বিষয়ে সাংবাদিকদের বলেন, ধরা হয়েছে নামীদামি তারকাদের। এই মানুষদের বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকলে পুলিশ আদালতে মামলা করুক। তারা কোর্টে গিয়ে যা জবাব দেওয়ার দেবেন। কিন্তু তাদের রাত দিন এক করে এভাবে ধরা, এটা কোন সভ্যতার মধ্যে পড়ে?
জনপ্রিয় অভিনেতা মিশা সওদাগর বলেছেন, ‘শিল্পী সমিতির ভাবমূর্তি রক্ষার্থে পরীমণির শিল্পী সমিতির সদস্যপদ সাময়িক ভাবে স্থগিত করা হল।’ অন্যদিকে শিল্পী হিসেবে বাংলাদেশের একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলের সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, ‘ও আমার দু’টি ছবিতে অভিনয় করেছে। ও অনেক মেধাবী অভিনেত্রী।’
রবীন্দ্রনাথের গল্প অবলম্বনে ‘কাবুলিওয়ালা’ ছবির পরিচালক ও অভিনেতা কাজী হায়াৎ পরীমণির বর্তমান পরিস্থিতিকে সহানুভূতির সঙ্গে দেখেছেন। তার বক্তব্য, ‘পরীমণি ছিলেন অভিভাবকহীন। এই সুযোগ অনেকে নিয়েছেন।’
বঙ্গবন্ধু-হত্যাকাণ্ড নিয়ে গবেষণামূলক উপন্যাস ‘আগস্ট আবছায়া’-র জন্য সাহিত্য অঙ্গনে সমাদৃত আরেফিন বলেছেন, ‘সামাজিক মাধ্যমে পরীমণিকে নিয়ে যে হিংস্র কাটাছেঁড়া চলছে।’ তিনি লিখেছেন, ‘পরীমণিকে নিয়ে যা চলছে তা একটা রীতিমতো সার্কাস, যা কিনা এ ভাবে চলতে থাকলে আমরা শিগগির ভাল্লুকের ডাক শিখে ফেলতে যাচ্ছি নিশ্চিত। ওই ডাকেরই ভদ্রস্থ নাম—সহিংসতা। সহিংস হবে না। মায়া রাখুন মানুষের প্রতি। ভালবাসা সবার জন্য, ব্যক্তিমানুষ পরীমণি-সহ। ন্যায়বিচারই প্রাপ্য তার, আর প্রাপ্য—বিচারের আগেই ছিন্নভিন্ন না হয়ে যাওয়া। আইনের বিচারের আগেই কেউ যেন সমাজের বিচারের হাতে টুকরো না হয়ে যায়।”
এর আগে, বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে পরীমণির মুক্তির দাবিতে ব্যানার হাতে অবস্থান করেন অল্প কিছু মানুষ। নেতৃত্বে ছিলেন জগদীশ বড়ুয়া পার্থ। এ দিকে আগামীকাল শনিবার বিকেল ৪-টেয় জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে ‘পরীমণির মুক্তি চাই’ দাবিতে বিক্ষুব্ধ নাগরিকদের সমাবেশ। শিল্পী-সমাজের গরিষ্ঠ অংশ অবশ্য এখনও নীরব।
বিডি-প্রতিদিন/শফিক