নেটফ্লিক্সে ১৭ সেপ্টেম্বর 'স্কুইড গেম'র প্রথম শো শুরু হয়। এরপরই বিশ্বব্যাপী ৯০টি দেশে নেটফ্লিক্সের রাঙ্কিংয়ে এক নম্বরে উঠে আসে 'স্কুইড গেম।' স্কুইড গেম খেলার ৪৫৬ জন প্রতিযোগীর সঙ্গে বাস্তবতার মিল খুঁজে পাওয়ায় দর্শকদের এখন আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু এই জনপ্রিয় গেম শো।
বিবিসির ওয়েই ইপ এবং উইলিয়াম লি বলছেন, সিরিজ অনুষ্ঠানের আকর্ষণীয় ভিস্যুয়াল, চরিত্রগুলোর সাথে বাস্তবের মিল এবং মানব চরিত্রের কিছু কঠিন ও বেদনাদায়ক দিক যেভাবে উঠে এসেছে, তা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মানুষের মনকে ছুঁয়েছে।
স্কুইড গেমের ৪৫৬ জন প্রতিযোগীর সবাই ঋণে জর্জরিত। তারা সবাই ঘুরে দাঁড়াতে মরিয়া। এই খেলা জীবন বাজি রেখে মরা-বাঁচার লড়াই। ছয়টি খেলার এই সিরিজ জিতলে বিজয়ীর হাতে আসবে ৪৫.৬ বিলিয়ন কোরিয়ান ওয়ন বা ৩৯ মিলিয়ন ডলার। আর হারলে মৃত্যু অবধারিত।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই গেম সিরিজের সাফল্যের চাবিকাঠি হল এর চরিত্রদের বেশিরভাগই সমাজের প্রান্তিক মানুষ। তাদের সকলেই বিশাল আর্থিক সমস্যায় জর্জরিত হলেও তারা সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষ।
সিরিজটির প্রধান চরিত্র একজন বেকার যার জুয়ার সমস্যা রয়েছে। ফলে পরিবারের কারোর কাছ থেকে সে সম্মান পায় না। এই গেম সিরিজে সে দেখা পেয়েছে একজন তরুণের যে উত্তর কোরিয়া ত্যাগ করে দক্ষিণে চলে এসেছে। তার জীবনে অনেক কঠিন অভিঘাত এসেছে। তার সাথে দেখা আরেকজন পাকিস্তানি শ্রমিকের যার মালিক তার সাথে খুব দুর্ব্যবহার করেন।
সাংমিউং বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশ্ব সংস্কৃতি বিষয়ের অধ্যাপক কিম পিয়ং-গ্যাং বিবিসিকে বলেন, মানুষ বিশেষ করে তরুণ প্রজন্ম যারা আসল জীবনে বিচ্ছিন্নতা এবং প্রতিকূলকতার শিকার হয় পদে পদে, তারা এই চরিত্রগুলোর মধ্যে নিজেদের মিল খুঁজে পেয়েছেন এবং চরিত্রগুলো তাদের সহানুভূতি কুড়াচ্ছে।
জীবনযুদ্ধে পরাজিত, সমস্যায় জর্জরিত এবং গভীর হতাশাগ্রস্ত কিছু মানুষের গল্প নিয়ে তৈরি এই থ্রিলার সিরিজ 'স্কুইড গেম'-এর গল্প লিখেছেন ও পরিচালনা করেছেন হোয়াং ডং-হিউক।
কেন স্কুইড গেম থেকে ফোন নম্বর বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত:
নেটফ্লিক্সের জনপ্রিয় সিরিজ স্কুইড গেমের একটি দৃশ্যে দেখানো একটি গুরুত্বপূর্ণ ফোন নম্বর বাদ দেওয়া হচ্ছে। একজন নারীর অভিযোগের পরে এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। ওই নারী বলেছেন, এটি বাস্তবে তার ফোন নম্বর, আর তিনি ফোন কল সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছেন।
দক্ষিণ কোরিয় এই সিরিজটিতে দেখানো হয়, ঋণে জর্জরিত প্রতিযোগীদের একটি গেম বা খেলায় অংশ নেয়ার জন্য এই নম্বরেই ফোন করতে বলা হয়। বিজয়ীর জন্য থাকে বিশাল অঙ্কের নগদ অর্থ পুরস্কার। তাদের অংশ নিতে হয় শিশুরা যে ধরনের খেলা খেলে, সেরকম এক গেমে। তবে এই গেম একেবারে জীবন-মৃত্যুর লড়াই। এতে হারলে মৃত্যু। আর জিতলে খেলার পরের ধাপে যাবেন প্রতিযোগীরা।
দক্ষিণ কোরিয়ার ওই নারী দাবি করছেন, ফোন নম্বরটি বাস্তবেই তার ফোন নম্বর। আর বহু মানুষ এখন তার নম্বরে কল করে খেলায় অংশ নেবার জন্য অনুরোধ করছে।
ওই নারী স্থানীয় সংবাদমাধ্যম মানি টুডে অনুষ্ঠানকে বলেছেন, তার ফোনে তিনি হাজার হাজার মেসেজ ও ফোনকল পাচ্ছিলেন। ফোন মেসেজ ও কলের সংখ্যা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছিল যে তার প্রাত্যহিক জীবন বাধাগ্রস্ত হচ্ছিল।
তিনি বলেন, দশ বছরের বেশি সময় আমি এই ফোন নম্বর ব্যবহার করছি, কাজেই আমি হতচকিত হয়ে গেছি। আমার মোবাইল থেকে চার হাজারের ওপর কল আসা ফোন নম্বর আমাকে ডিলিট করতে হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, প্রথমে আমি বুঝতে পারিনি কি হচ্ছে। পরে আমার বন্ধুরা জানান এই নম্বরটি স্কুইড গেমে ব্যবহার করা হয়েছে। তখন ব্যাপারটা বুঝতে পারি।
ওই নারীকে স্থানীয় মুদ্রায় ৫০ লক্ষ ওয়ন (৪,১৭৮ ডলার সম-পরিমাণ) ক্ষতিপূরণের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে তবে তিনি সেই প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছেন।
নেটফ্লিক্স অনুষ্ঠানের ভক্ত দর্শকদের কাছে অনুরোধ করেছেন তারা যেন ওই নম্বরে ফোন না করেন। যে দৃশ্যে ফোন নম্বরটি এসেছে সেই দৃশ্য এডিট করে ফোন নম্বরটি বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
বিডি প্রতিদিন / অন্তরা কবির