১৭ মে, ২০২২ ১১:২৫

মৌলভিকে অপহরণ করে সীমাকে বিয়ে, কেন ভাঙল সোহেলের সেই সংসার?

অনলাইন ডেস্ক

মৌলভিকে অপহরণ করে সীমাকে বিয়ে, কেন ভাঙল সোহেলের সেই সংসার?

সীমা খান ও সোহেল খান

সীমা সাচদেব খান। সাধারণের কাছে এই নাম অতটা পরিচিত না হলেও বলি পাড়ায় এই নাম অতি পরিচিত। সেলিম খান-পুত্র তথা সালমান খানের ছোট ভাই সোহেল খানের স্ত্রী সীমা। পাশাপাশি তিনি বলিউডের একজন নাম করা ফ্যাশন ডিজাইনার। সীমা এখন অবশ্য পরিচিত নাম সোহেলের সঙ্গে বিচ্ছেদের কারণেও।

সংসার সামলানোর পাশাপাশি মুম্বাই এবং দুবাইয়ে থাকা পোশাক সংস্থার দায়িত্বও সামলান দু’হাতে।

বলি পাড়ার যেসব অভিনেতার স্ত্রীরা অভিনেত্রী নন, তাদের মহলেও তার যথেষ্ট নামডাক। চাঙ্কি পাণ্ডের স্ত্রী ভাবনা পাণ্ডে, সঞ্জয় কাপুরের স্ত্রী মাহিপ কাপুরসহ একাধিক অভিনেতার স্ত্রীর কাছের বন্ধু সীমা।

সম্প্রতি স্বামী সোহেল খানের সঙ্গে বিচ্ছেদের জেরে তিনি খবরের শিরোনামে উঠে এসেছেন। অনেক দিনই তাদের সম্পর্কে বনিবনা হচ্ছে না বলে জল্পনা ছিল। সম্প্রতি তাদের বিচ্ছেদের বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে।

শোনা যায়, ছয় বছর ধরেই স্বামী সোহেলের সঙ্গে ঘর করছিলেন না সীমা। দীর্ঘ দিন ধরেই ছেলেকে নিয়ে আলাদা থাকছিলেন তিনি।

তবে সোহেল-সীমার বিয়ের পরিণতি বিচ্ছেদ হলেও, তাদের প্রেম কাহিনি হার মানাবে যেকোনও প্রেমের সিনেমার গল্পকে।

দিল্লির মেয়ে সীমা ফ্যাশন ডিজাইনিং নিয়ে পড়াশোনো শেষ করে নিজের কিছু পরিচিতের ভরসায় জীবন গড়ার একরাশ স্বপ্ন নিয়ে মুম্বাই পাড়ি জমান।

মুম্বাই যাওয়ার পর সীমার ঠাঁই হয় সম্পর্কে চাচা চাঙ্কি পান্ডের বাড়িতে। চাঙ্কির বদৌলতে বেশ কিছু কাজও জুটে যায় সীমার।

বেশ কিছু দিন চুটিয়ে প্রেম করার পর প্রেমিকা ভাবনাকে বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নেন চাঙ্কি। সেই বিয়ে বাড়িতে চাঁদের হাট বসে। নামী পরিচালক থেকে শুরু করে বড় বড় অভিনেতা, কে উপস্থিত ছিলেন না সেখানে! বিয়েতে উপস্থিত ছিলেন সোহেল খানও।

এই বিয়েবাড়িতেই একে অপরের সঙ্গে দেখা হয় সোহেল এবং সীমার। প্রথম দেখাতেই একে অপরের প্রেমে পড়েন তারা।

চাঙ্কি-ভাবনার বিয়ের পরও বেশ কিছু দিন তাদের সঙ্গেই থাকতেন সীমা। এই সময় সোহেলের আমন্ত্রণে খান পরিবারের বাড়ি ‘গ্যালাক্সি’-তে যান সীমা।

সোহেলের বোন অর্পিতা এবং আলভিরার সঙ্গেও ভাল আড্ডা জমে সীমার। ধীরে ধীরে ঘনিষ্ঠতা বাড়ে খান পরিবারের অন্য সদস্যদের সঙ্গেও।

এরপরই সোহেল এবং সীমা বিয়ে করবেন বলে সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু বিয়ে করব বললেই তো আর করা যায় না।

সোহেলকে বিয়ে করবেন শুনে বেঁকে বসে সীমার পরিবার। কারণ? হিন্দু মেয়ে সীমার সঙ্গে মুসলিম ছেলে সোহেলের বিয়েতে মত দিলে তো সমাজে নাক কাটা যাবে! পাশাপাশি তখন আবার বিভিন্ন কারণে বেশ কিছু বদনাম কুড়িয়েছেন সোহেলের ভাই সালমান খান। ওই বাড়িতে মেয়ের বিয়ে দেবে না বলেই সাফ জানিয়ে দেয় সীমার পরিবার।

পরিবারকে অনেক বুঝিয়েও যখন কাজ হল না তখন সোহেলের সঙ্গে বাড়ি থেকে পালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন সীমা। রাতের অন্ধকারে সোহেলের হাত ধরে বাড়ি ছাড়েন তিনি। সোজা উপস্থিত হন গ্যালাক্সিতে।

রাত তিনটার দিকে এই যুগল যখন গ্যালাক্সিতে পৌঁছায়, তখন সোহেলের বাবা সেলিম খান ঘুমাচ্ছিলেন। চাকরের ডাকে তার ঘুম ভাঙে। সেলিমকে পুরো বিষয়টি বুঝিয়ে বলেন সোহেল।

সমস্ত কথা শোনার পর বেঁকে বসেন সেলিমও। তিনি জানান, সোহেল-সীমার বিয়ে হয়নি। তাই তিনি কিছুতেই সীমাকে বাড়িতে রাখতে পারবেন না।

শোনা যায়, সেই সময় সালমানের একাধিক সম্পর্ক নিয়ে যথেষ্ট সমস্যা চলছিল। তা নিয়ে যথেষ্ট বিব্রতও ছিলেন সেলিম খান। তাই তিনি চাইছিলেন না, তার ছোট ছেলেকে নিয়েও নতুন বিতর্কের সৃষ্টি হোক। তবে সোহেলকে তিনি এ-ও জানান যে, বিয়ে করার পর তারা একসঙ্গে থাকতে পারেন।

একে অপরকে ছেড়ে আর এক মুহূর্তও থাকতে রাজি ছিলেন না সোহেল-সীমা। সিদ্ধান্ত নেন সেই রাতেই বিয়ে করবেন। যেমন ভাবা তেমন কাজ। বন্ধুদের ফোন করে সোহেল বলেন, খুব তাড়াতাড়ি একজন মৌলভি জোগাড় করে আনতে। ভোররাতে কোনও মৌলভি না পেয়ে শেষমেশ এক মৌলভিকে অপহরণ করে আনেন সোহেলের বন্ধুরা। প্রথমে রেগে আগ্নিশর্মা হলেও পরে দু’জনের বিয়ে দেন ওই মৌলভি।

তাদের বিয়ের পর দিনই সোহেল পরিচালিত প্রথম ছবি ‘প্যায়ার কিয়া তো ডারনা ক্যায়া’ মুক্তি পাওয়ার কথা ছিল। শোনা যায়, সেই কারণেই সোহেল প্রেমের পরিণতি এমন চেয়েছিলেন যাতে তার পরিচালিত সিনেমার নামের সঙ্গে তার প্রেমের মিল থাকে।

পরে হিন্দু মতেও বিয়ে করেন এই যুগল। নির্বাণ এবং ইয়োহান নামে দুই ছেলে রয়েছে সোহেল-সীমার।

কিন্তু যে প্রেমিকের জন্য একদিন পরিবার ছেড়েছিলেন, শেষমেশ তার সঙ্গেই কি না বিচ্ছেদ হল! কেন এই বিচ্ছেদ?

নেটফ্লিক্সে করন জোহরের শো-তে এসে সীমা জানিয়েছিলেন, তিনি আর সোহেলের সঙ্গে এক বাড়িতে থাকেন না। সোহেল নিজের বাড়িতে থাকলেও তিনি একটি ফ্ল্যাটে ছেলেদের নিয়ে থাকেন। এরপরই একাধিক জল্পনা ভেসে ওঠে। তবে বিতর্ক তৈরি হওয়ার পর সীমা জানিয়েছিলেন, তারা এক ঘরে না থাকলেও সোহেল রাতে তার কাছেই আসেন।

তবে শাক দিয়ে মাছ ঢাকা যায়নি। শেষ পর্যন্ত বিবাহবিচ্ছেদ হয়েই গেল সোহেল-সীমার।

বিচ্ছেদের কারণ হিসেবে অভিনেত্রী হুমা কুরেশিকে দায়ী করছেন অনেকে। কানাঘুষায় শোনা যায়, হুমার সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বেড়েছিল সোহেলের। আর তা মেনে নিতে পারেননি সীমা। তবে হুমা সম্প্রতি দাবি করেন, তার আর সোহেলের সম্পর্কের কথা জল্পনা ছাড়া আর কিছুই না। তিনি বর্তমানে মুদাসসার আজিজের সঙ্গে প্রেম করছেন বলেও জানান হুমা।

তা হলে ঠিক কি কারণে তাদের বিচ্ছেদ হল? এই বিষয়ে সীমা বা সোহেল, মুখ খুলতে রাজি নন কেউই।

মালাইকা অরোরার সঙ্গে মেজো ভাই আরবাজের বিচ্ছেদের পর সালমান চাননি সোহেলেরও বিবাহবিচ্ছেদ হোক। নিজের পক্ষ থেকে বহু চেষ্টা করলেও ভাইয়ের বিবাহবিচ্ছেদ আটকাতে পারলেন না খোদ ‘ভাইজান’।

বাড়ি থেকে পালিয়ে গিয়ে যে প্রেম পরিণতি পেয়েছিল, তার শেষ হল কোর্টের কাগজে সই করে।

বিডি প্রতিদিন/কালাম

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর