বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও সমসাময়িক অন্যান্য প্রসঙ্গ নিয়ে ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন গোলাম মাওলা রনি। পাঠকদের জন্য ফেসবুক স্ট্যাটাসটি তুলে ধরা হলো:
তাসের ঘর নিয়ে বাংলা সাহিত্যে কম কীর্তি হয়নি। তাস ও বাঁশ নিয়ে নানারকম কৌতুকপূর্ণ কল্পকাহিনী লিখা হয়েছে। কোনটা হাস্যস্কর আবার কোনটা সর্বনেশে ট্র্যাজেডীর করুণ গল্প। তাস সাধারণত জুয়া খেলায় ব্যবহৃত হয়। কিন্তু বাঁশ ব্যবহৃত হয় নানা কাজে- ঘরবাড়ী, ব্রিজ পুল-কালভার্ট এবং সর্বপরি মৃত ব্যক্তির কবর রচনা করার কাজে। এতো উপকারী বাঁশ নিয়ে কেনো যে বাঙালী উপহাস করে তা আজো আমার বোধ গম্য নয়।
আমার কৈশর বেলায় একটি সিনেমা দেখেছিলাম। নাম- তাসের ঘর। ফারুক-রোজিনা ছিলেন কেন্দ্রীয় চরিত্রে। দু’জনই আমার অসম্ভব প্রিয় মানুষ ছিলেন। বিশেষ করে রোজিনার জন্য ছিলাম পাগল। সিনেমাটির মধ্যে একটি গান ছিলো এরূপ- রুপসী গো রূপসী, কেন দিলে ফাঁসি! প্রেমেরও ফাঁসি সর্বনাশী- লাগিয়ে হলেম দোষী!
আজ এতো বছর পর তাসের ঘর আর বাঁশের খুটির কথা বারবার মনে পড়ছে সাম্প্রতিক কালের রাজনৈতিক ঘটনাবলীর কারণে। আমরা গ্রাম বাংলার হাদারাম পোলাপান। ছোট কাল থেকে লাথি গুতো খেতে খেতে এ পর্যন্ত এসেছি। গ্রামে দেখেছি বাউন্ডেলে প্রকৃতির বাজে মানুষেরা তাস পাশা খেলত। এসব নিয়ে তাদের পরিবারে রাতদিন অশান্তি লেগে থাকত। যে পরিবারে একবার তাস ঢুকত সেই পরিবারের সর্বনাশ ঘটা ছিল সময়ের ব্যাপার। বাজে লোকেরা বউ ছেলে এমনকি বাপ মা পর্যন্ত ত্যাগ করতো তাস খেলার নেশায়। আর প্রতিবেশিরা তাস পাশার নায়ক নায়িকাদের অর্ন্তদ্বন্দ এবং কলহ দেখে দূর থেকে হাতে তালি দিত। কারন পরিবারটি শেষ হয়ে গেলে তাদের স্থাবর অস্থাবর সম্পত্তিগুলো পানির দামে বিক্রি হয়ে যেতো প্রতিবেশিদের নিকট। আর জুয়ারিদের পরিবারে যদি সুন্দরী কোন বউ বা মেয়ে থাকতো-তবে সেগুলোও গনীমতের মাল হিসেবে পাড়ার দুষ্ট ছেলেরা ভোগ করার জন্য ইতি উতি করতো।
আমাদের এলাকায় ছিল অসংখ্য বাঁশবন। লোকজন বলত বাঁশঝাড়। দুই ধরনের বাঁশ আমরা চিনতাম- বয়রা বাঁশ আর তল্লা বাঁশ। বয়রা বাঁশ মোটা মোটা এবং শক্ত প্রকৃতির অন্যদিকে তল্লাবাঁশ ছিল চিকন এবং হালকা প্রকৃতির। গ্রাম বাংলায় প্রায়শই মারামারি হতো বাঁশ দিয়ে। বাঁশের কঞ্চি দিয়ে শিক্ষকগণ পিটাতেন ছাত্রদেরকে। অনেক প্রভাবশালী লোকদের আবার ৩/৪ টা বউ থাকত। গৃহস্বামী বউ পেটানোর জন্য বাঁশের কঞ্চি ব্যবহার করতেন। অনেকে আবার তাদের বাঁশের লাঠি বা কঞ্চিকে আকর্ষনীয় এবং অধিকতর ব্যবহার উপযোগি করার জন্য নিয়মিত তেল মাখতো। এসব কারণে হয়তো বাঁশের নানামূখি ভাল ব্যবহার সত্বেও আবহমান বাংলায় এটি গালি হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।
	সাম্প্রতিক হয়ে যাওয়া নির্বাচন নির্বাচন খেলার পর একটি সরকার গঠিত হয়েছে বলে দেশবাসী লক্ষ্য করলো। সবাই বলছে- এটি একটি তাসের ঘর। টিকবে না। সরকারি দলের অনেক নামকরা নেতা বলছেন- টিকবে না মানে? অবশ্যই টিকবে। পুরো পাঁচ বছর টিকবে। পাবলিক বলছে- বাঁশ দেখেছেন! বাঁশ! পাবলিকের এই কথা আবার নেতাদের কানে ঢুকছেনা। কারন বাঁশে বাঁশে প্রতিঘাত হয়ে শব্দগুলো ফেরত চলে আসছে। কারন তারা যে তাসের ঘর তৈরী করেছে তাতে খুটি হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে বাঁশ। কিছু বাঁশ রয়েছে বয়রা প্রকৃতির। আবার কিছু তল্লা প্রকৃতির। আবার বেশ কিছু রয়েছে ঘুনে ধরা। ঘুনে ধরা বাঁশগুলি ইতিপূর্বে একাধিক তাসের ঘরে বহুবার খুঁটি হিসেবে ভাড়ায় খেটে এসেছে।
	তাসের ঘরের বড় পরিচয় এটি সাধারণভাবে নির্মিত হয়না। চালাকি, ভাওতাবাজী আর প্রতারণার মাধ্যমে নির্মিত হয়। এই ঘরের বাসিন্দারা কখনো শান্তিতে থাকতে পারে না। সারাক্ষণ ইতি উতি করতে থাকে এবং তাদের নিজেদের দূর্বলতা ঢাকতে গিয়ে একের পর এক অন্যায় এবং ভুল করতে থাকে। সেগুলো চাপা দেওয়ার জন্য আবার নানা রকম অপরাধও করে বসে। ফলে একসময় প্রকৃতি থেকে শুরু হয় ঘূর্ণিঝড় আর তাতেই লন্ড ভন্ড হয়ে যায় সবকিছু।
তাসের ঘরের বাসিন্দারা কখনোই নিজেদের বিশ্বাস করে না। আর যে ব্যক্তিগণ নিজেদেরকে বিশ্বাস করেনা তারা কখনো অন্যকে বিশ্বাস করতে পারে না। ফলে ঘরের ভেতরে ও বাইরে চলতে থাকে নানা সন্দেহ আর অবিশ্বাসের দোলাচল। ফলে ঘর এবং ঘরের বাসিন্দারা কাপতে থাকে অস্থিরতায়। এই অস্থিরতায় একসময় তাদেরকে নিয়ে যায় চরম পরিনতির দিকে।
এবার তত্ত্ব কথা রেখে বাস্তবে ফিরে আসি। বাংলাদেশে এখন যা হচ্ছে তা কারো কখনোই কারো জন্য মঙ্গল জনক নয়। কে দায়ী বা কে দায়ী নয় -সে প্রশ্ন অবান্তর। প্রশ্ন হলো যা ঘটেছে তা কি কাম্য ছিলো? আমি বলবো না। অবশ্যই কাম্য ছিলোনা। যে সভ্যতা , গণতন্ত্রের উন্নয়ন এবং অর্থনৈতিক সফলতার দ্বারপ্রান্তে আমরা উপনিত হয়ে ছিলাম তা আমাদের সাম্প্রতিক কর্মকান্ডে ভন্ডুল হতে চলেছে। এ পথে যতবেশী সময়ক্ষেপণ করবো ততোই দুর্গন্ধ ছড়াবে এবং নিজেদেরকে আমরা জাতি হিসেবে ব্যর্থ প্রমান করবো।
প্রতিটি মানুষের মনেই চাপা ক্ষোভ। একজন রিক্সাওয়ালা কিংবা সবজী বিক্রেতা সমাজ ও রাষ্ট্রের মানীলোকদেরকে নিয়ে যে ভাষায় কথা বলছে তা যদি চলতে থাকে সেক্ষেত্রে আগামী দিনে কোন ভদ্রলোক রাজনীতিতে আসবেননা। কিছু লোকের ব্যক্তিগত লাভ ক্ষতি বা জেদাজেদির দায় পুরো জাতি নিতে পারে না। অথচ জাতিকে সে দায় নিতে হচ্ছে। এর থেকে বাঁচার উপায় কি? মানুষ আপাতত কোনো উপায় খুঁজে পাচ্ছেনা। তাই হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে একটি অবোধ শিশু বলছে আমি আল্লাহকে সব বলে দিবো। এক রিক্সাওয়ালা বলছে হে আল্লাহ তুমি তাদেরকে জান্নাতের সবচেয়ে ভালো জায়গায় স্থান দাও এবং বিনিময়ে আমাদেরকে রক্ষা করো।
নতুন মন্ত্রীপরিষদ নিয়ে অনেকে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করছেন নানাভাবে। এ ব্যাপারে আমার তেমন কোনো প্রতিক্রিয়া নেই। কারন কোন মন্ত্রীই সুস্থভাবে এবং সুষ্ঠভাবে পরিকল্পনা করে তার কাঙ্খিত লক্ষ্য স্থির করতে পারবেননা। কেবলমাত্র একটি ভয়ে-এই সরকার আসলে কতদিন টিকবে। ফলে নতুন সফলতা তো দূরের কথা বরং পুরোনো সফলতাকেও তারা ম্লান করে দিবেন নিজের সন্দেহ, অবিশ্বাস আর অস্থিরতা দিয়ে।
নতুন মস্ত্রীসভার দূর্নীতি রোধ করা হবে প্রধামন্ত্রীর জন্য সব চেয়ে বড় সমস্যা। অতীতের মন্ত্রীদের অনেকেই ছিলেন গ্রাম বাংলা থেকে উঠে আসা ভোলে ভালা প্রকৃতির অভাবী মানুষ। কাজেই দূর্নীতির পথ ঘাট চিনতে তাদের সময় লেগেছে প্রায় বছর দুয়েক। অর্থাৎ বিগত সরকারের প্রথম দুই বছর কোন মন্ত্রীর বিরুদ্ধে দূর্নীতির অভিযোগ উঠেনি। অন্যদিকে তারা মাননীয় প্রধান মন্ত্রীকে ভয় পেতেন আজরাইলের মতো। ফলে কোন অন্যায় করার পূর্বে তারা দশবার চিন্তা করতেন। প্রথম প্রথম যখন কয়েকজনের বিরুদ্ধে দূর্নীতির অভিযোগ উঠলো তখন প্রধানমন্ত্রী কৌশলগত কারণে ঐসব মন্ত্রীদের পক্ষ না নিলে অতীতের মন্ত্রী সভা হতো সম্পূর্ন দূর্নীতিমুক্ত।
অন্যদিকে বর্তমান মন্ত্রী সভার প্রবীন নবীনেরা প্রায় সবাই দশ ঘাটের পানি খাওয়া দক্ষ প্রকৃতির লোক। নৈতিক, অনৈতিক সকল বিষয়েই তাদের রয়েছে অপার দক্ষতা। কয়েকজন ত আছেন দূর্নীতি অনিয়ম আর অনৈতিক জীবন যাপনের প্রিন্সিপ্যাল বা অধ্যক্ষ। কোন পত্রিকা অফিস বা গোয়েন্দা সংস্থায় তাদের বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ যাবার পূর্বেই সবকিছু আপন দক্ষতায় ম্যানেজ করার অসাধারণ ক্ষমতা তারা অতীতে অনেকবার দেখিয়েছিল। ফলে এসব দক্ষ লোক যদি মনে করেন যে, সরকারের স্থায়িত্ব ক্ষনস্থায়ী বা আনসার্টেন তবে তারা ২/৩ দিনের মধ্যে যেসব কর্ম করে ফেলবেন তা আগের সরকারের মন্ত্রীরা ২/৩ বছরেও করতে পারেননি। আর এ কারনেই তাদেরকে আমার মনে হয়েছে তাসের ঘরে বাঁশের খুঁটি।
আপাত দৃষ্টিতে মনে হচ্ছে বিরোধী দল ব্যর্থ এবং সরকারকে বিপদে ফেলার মতো কোন শক্তিই তাদের নেই। আমি কিন্তু এই ধারনার সঙ্গে সম্পূর্ণ একমত। আমার ভয় অন্য যায়গায়। বাংলাদেশের অতীত ইতিহাসের ৪টি ঘটনা আমাকে বার বার ভীত সন্ত্রস্ত করে তোলে। সম্মানিত পাঠক গণকে কাহিনীগুলো স্মরন করিয়ে দিয়ে আজকের লেখা শেষ করবো।
১। ১৪ ই আগষ্ট রাত বারোটা পর্যন্ত খোন্দকার মোস্তাক বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে ছিলেন। বাসা থেকে বঙ্গবন্ধুর জন্য রান্না করে এনেছিলেন হাঁসের মাংস যা কিনা বঙ্গবন্ধু খুবই পছন্দ করতেন। এই ঘটনার ৪ ঘন্টা পর ঘটেছিলো ইতিহাসের সেই নিমর্ম দূর্ঘটনা। অথচ ১৪ আগস্ট পর্যন্ত সারা দেশ ছিলো সরকারের নিয়ন্ত্রনে। কোন বিরোধী দল ছিলোনা। রাষ্ট্রের প্রতিটি বিভাগে সরকারের কর্তৃত্ব ছিলো সীমাহীন।
২। জিয়াউর রহমানের ক্ষমতাকালীন সময়ে তার জন্য বিষফোঁড়া ছিলো একের এক সেনা বিদ্রোহ। কম করে হলেও ৩০টি সেনা বিদ্রোহ দমন করে তিনি আত্মতৃপ্তির ঢেকুর তুললেন- এবার বোধ হয় স্বস্তি পাওয়া যাবে। ১৯৮১ সালের ২৯ শে মে তারিখে চট্টগ্রাম গেলেন জেলা বিএনপির সাংগঠনিক বিষয় নিয়ে আলোচনার জন্য। রাতে চট্টগ্রামের জিওসি এবং জিয়ার কোর্সমেট জেনারেল মঞ্জুরের সঙ্গে গল্প গুজব এবং খানা দানা সেরে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে ফিরলেন পরিতৃপ্ত আত্মা নিয়ে সম্ভবত রাত্রি একটার দিকে। এর ঠিক ৪ ঘন্টা পর ঘটলো সেই দুর্ঘটনা।
৩। পরবর্তী ঘটনা ৬ ই ডিসেম্বর ১৯৯০ সালের। এরশাদ ক্যান্টনমেন্ট থেকে খোশ মেজাজে বঙ্গ ভবনে ফিরলেন। বিকেলে চলছিলো জাতীয় পার্টির জনসভা। শাহ মোয়াজ্জেম হুমকী ছাড়ছিলেন আগামী এক যুগেও সরকারের পতন হবেনা। অন্যদিকে ক্যান্টনমেন্ট থেকে ফেরার পর ৪ ঘন্টা সময়ও পেলেন না এরশাদ। পদত্যাগ করতে হলো। প্রথমে মওদুদ হলেন রাষ্ট্রপতি তারপর বিচারপতি শাহাবুদ্দিন। শাহ মোয়াজ্জেমরা পালাবার সময়টুকুও পেলেন না।
৪। ১/১১ এর জরুরী অবস্থা জারীর কোন খবরই জানতো না হাওয়া ভবনের কর্তা ব্যক্তিরা। তারা তখন পুরোদমে ইয়াজ উদ্দিন এবং তার সচিব মোখলেছের উপর নির্ভর করে নাকে তেল দিয়ে ঘুমাচ্ছে এবং পুনরায় ক্ষমতায় আসার স্বপ্নে বিভোর হচ্ছে। হঠাৎ করেই দেখলেন রাষ্ট্রপতি ইয়াজ উদ্দিন দেশে জরুরী অবস্থা জারী করছে। তারা ভেবে পেলেন না পালাবেন কি পালাবেন না। এসব ভাবতে ভাবতে তারা যখন পালানোর ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছেন ঠিক তখনি আইন শৃংখলা বাহিনী উপস্থিত হলো তাদেরকে গ্রেফতার করার জন্য।
একটি ধর্মের কথা বলে লেখা শেষ করছি। আল্লাহ পাক ওহীর মাধ্যমে হযরত ইয়াকুব (আঃ)কে জিজ্ঞাসা করলেন বলতে পার, আমি তোমার কলিজার টুকরা ইউসুফকে কেন তোমার কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন করেছি? তিনি আরজ করলেন- জানিনা। এরশাদ হলো কারন, তুমি তার ভাইদেরকে বলেছিলে আমার ভয় হয় বাঘ তাকে খেয়ে ফেলবে অথচ তোমরা থাকবে অসর্তক। তুমি বাঘের ভয় করেছ। আমার আশা করনি। তুমি ভাইদের গাফলতির কথা চিন্তা করেছ, আমার হেফাজতের প্রতি লক্ষ করনি।
আল্লাহ পাক আবার প্রশ্ন করলেন তুমি জান, আমি ইউসুফকে কেন ফেরত দিয়েছি। তিনি আরজ করলেন না, জানিনা। এরশাদ হলো তুমি বলেছিলে ক) হয়ত আল্লাহ তাদের সকলকে আমার কাছে নিয়ে আসবেন। খ) তুমি আরো বলেছিলে- যাও ইউসুফ ও তার ভাইকে খোঁজ কর। তোমরা আল্লাহর কৃপা থেকে নিরাশ হয়ো না।
 
                         
                                     
                                                             
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                        