সৈয়দ মুজতবা আলীকে প্রথম দেখি ১৯৭৪ সালে ধানমন্ডীর বাড়িতে। ঢাকা কলেজে যাওয়া -আসার পথে ওই বাড়িটির অবস্থান ছিল। সকালে দেখতাম দোতলার বারান্দার দেয়ালে হাতদুটো ঝুলিয়ে বসে অছেন। কখনো সংবাদপত্র হাতে। বিকেলে মাঝে মাঝে দেখতাম একই অবস্থায়।
বাড়ির কাছেই ছিল ইউসিস ও রুশ পাঠাগার। এক সন্ধ্যায় রুশ পাঠাগারে দেখি নিমগ্ন হয়ে ইংরেজি বই পড়ছেন। সালাম ঠুকেছিলাম। ১৩সেপ্টেম্বর ওনার জন্মদিনে এসব মনে এলো।
১৯৭১। মুজতবা থাকতেন পেয়িংগেস্ট --আবুসয়ীদ আইয়ুবের বড় ভাই ডাএমও গণির বাড়ির তিন তলায়।। তিনিই বাড়ির মালিক।ওনার বাড়িতে বাংলাদেশীদের আশ্রয়স্থল ছিল। বিশেষ করে ন্যাপ কমিউনিস্ট। গণিও কমিউনিস্ট এমএলএ তখন। পাশের ফ্ল্যাটে সয়ীদ।
একরাতে মুজতবা বাঙলাদেশীদের উপর ক্ষিপ্ত হলেন খাবার টেবিলে। বললেন, "তোমরা মুক্তিযোদ্দা না চুক্তিযোদ্ধা হে?" ঘটনা মুজতবা বললেন বাড়ি ফেরার পথে ট্রাম থেকে নেমেই তার মনমেজাজ তিরিক্ষিপ্রায়।
মেজর ডালিমকে দেখেছেন সেখানে। তার এক হাতে ব্যান্ডেজ। ডালিমের সঙ্গে তার গার্লফ্রেন্ড নিম্মী ছিল । নিম্মীর পরনে উত্তেজক স্বল্প পোষাক। ডালিম নিম্মীকে নিয়ে পার্ক ওযাইন হাউসে গিয়েছিলো। পার্ক স্ট্রীট ট্রাম ডিপোর উল্টোদিকে অবস্থিত ওযাইন হাউসটি নির্ধারিত সময় শেষে তখন বন্ধ। কলাপসিবল গেইট লাগিয়ে কমর্চারিরা ক্যাশ মিলাচ্ছে। কিন্তু ডালিমের এক কথা তাকে মদ দিতে হবে। কর্মচারিরা বলছে কোনভাবেই এখন আর দেওয়া যাবে না। ডালিম তুমুল হৈচৈ করতে লাগলো। এক পর্যাযে পাড়ার যুবকরা দৃশ্যপটে হাজির। ডালিমের মারমুখি আচরণ ,নিম্মীর স্বল্পবসনা সাজপোষাক ক্ষিপ্ত করে তুলেছে যুবকদের। ডালিম যখন কোনো কথাই শুনতে রাজি নয়,তখন তারা বেশ কয়েক ঘা ঝাড়ে। ঘুষি খেয়ে ডালিম রাস্তায় পড়ে গেলে হুঁশ ফেরত পায়। এমনিতে তার একহাতে স্লিং ঝোলানো। মেয়ে বলে রক্ষা পেয়েছে নিম্মী। মুজতবাকে ঘটনাটি পীড়া দেয়। রণাঙ্গন হতে ভুল তথ্য দিয়ে ডালিম কলকাতায় প্রায়ই আসতো।
এই নিম্মীই ১৯৭৪ সালে গাজী গোলাম মুস্তফার পুত্রদের সাথে বচসার সেই পল্লবিত কাহিনীর নায়িকা।