১৯ এপ্রিল, ২০১৯ ১১:২১

কেন এবং কিভাবে পারিবারিক আদালতে মামলা দায়ের করবেন?

এডভোকেট মুজিবর রহমান মুজিব

কেন এবং কিভাবে পারিবারিক আদালতে মামলা দায়ের করবেন?

পারিবারিক আদালত অধ্যাদেশ, ১৯৮৫ এর ৫ ধারা অনুযায়ী নিম্মোক্ত ৫টি কারণে পারিবারিক আদালতে মামলা দায়ের করা যায়। যেমনঃ- 

১. বিবাহ বিচ্ছেদ 
২. দাম্পত্য সর্ম্পক পুনরুদ্ধার 
৩. মোহরানা
৪. ভরণপোষণ 
৫. সন্তানের অভিভাকত্ব ও তত্ত্বাবধান 

কোন আদালতে মামলা দায়ের করবেন? 
পারিবারিক আদালত অধ্যাদেশ, ১৯৮৫ এর ৬ ধারা অনুযায়ী; 

১. নালিশের কারণটি যে আদালতের স্থানীয় এখতিয়ারের মধ্যে সম্পূর্ণ বা আংশিকভাবে উদ্ভূত হয়েছে। 

২. যে আদালতের স্থানীয় এখতিয়ারের মধ্যে মামলার পক্ষগণ বসবাস করেন অথবা সর্বশেষ একসঙ্গে বসবাস করেছিলেন। 

তবে শর্ত হচ্ছে যে, বিবাহ বিচ্ছেদ, দেনমোহর অথবা ভরণপোষণের মামলার ক্ষেত্রে যে এলাকায় স্ত্রী সাধারণত বসবাস করছে সেই এলাকার আদালতেও মামলা করা যাবে। 

মামলার আরজিতে কি কি অন্তর্ভূক্ত করতে হবে? 
আরজিতে বিরোধ সম্মন্ধীয় বিষয়ের বিস্তারিত তথ্যসহ একটি তফসিল দিবে হবে যেখানে আরজির সমর্থনে সাক্ষ্য দিতে ইচ্ছুক সাক্ষীগনের সাম ও ঠিকানা অর্ন্তভূক্ত থাকবে। 

তবে শর্ত থাকে যে,বাদী মামলা প্রমানের প্রয়োজনে আদালতের অনুমতিক্রমে মামলার যে কোন স্তরে যে কোন সাক্ষী ডাকতে পারে যদি আদালত ন্যায়বিচারের স্বার্থে উক্ত সাক্ষ্য নেয়া উপযুক্ত বলে মনে করেন।

এছাড়া মামলার আরজিতে যে বিষয়গুলির উল্লেখ থাকতে হবে- 
১. যে আদালতে মামলা দায়ের করা হচ্ছে সে আদালতের নাম: 

২. বাদীর নাম, বর্ণণা ও বাসস্থান 

৩. বিবাদীর নাম, বর্ণণা ও বাসস্থান 

৪. বাদী বা বিবাদী নাবালক অথবা অপ্রকৃতিস্থ হলে সে সর্ম্পকিত বর্ণণা 

৫. নালিশের কারণ সর্ম্পকিত তথ্য সহ, যে স্থানে ও যে তারিখে কারণের উদ্ভব হয়েছিলো তার বিবরণ।

৬. সংশ্লিষ্ট আদালতের যে মামলাটি পরিচালনার এখতিয়ার আছে সে সর্ম্পকিত তথ্য।

৭. বাদীর প্রার্থিত প্রতিকার। 

৮. বাদী তার দাবীর সমর্থনে যদি কোন দলিলের উপর নির্ভর করে এবং দলিলটি যদি তার দখলে থাকে তবে আরজি উত্থাপনের সময় দলিলটি আদালতে পেশ করতে হবে। দলিলটির অবিকল ফটোকৃত প্রতিলিপি আরজির সারথ নথিভূক্তির জন্য দিতে হবে। 

৯. বাদী তার দাবীর সমর্থনে এমন কোন দলিলের উপর নির্ভর করে এবং দলিলটি যদি তার দখলে না থাকে সেক্ষেত্রে দলিলটি কার দখলে বা আয়ত্বাধীনে আছে সে বিষয়টি উল্লেখকরত আরজি দাখিল করতে হবে। 

১০. মামলার বিবাদীগনের উপর জারীর জন্য বিবাদীগণের সংখ্যার দ্বিগুণ সংখ্যক তপসিলসহ আরজির সত্যায়িত প্রতিলিপি এবং দলিলের তালিকা দ্বিগুণ পরিমাণ আরজির সাথে থাকবে। 

যে সকল কারণে আরজি অগ্রাহ্য বা নাকচ হতে পারে 
১. পারিবারিক আদালত অধ্যাদেশ, ১৯৮৫ এর ৬ এর ৭ উপধারা অনুযায়ী যেক্ষেত্রে আরজির সাথে তপসিল দেয়া হয়নি। 

২. যেক্ষেত্রে সমন জারির খরচ এবং নোটিশের জন্য পোস্টাল খরচ পরিশোধ করা হয়নি। 

৩. যেক্ষেত্রে ২২ ধারা অনুযায়ী নির্ধারিত কোর্ট ফি দেয়া হয়নি।

রুদ্ধদ্বার কক্ষে বিচার 
মামলা দায়েরের পর বিবাদী পক্ষকে নোটিশ/সমন প্রদান, বিবাদী পক্ষের জবাব দেবার পর মামলাটি বিচারের জন্য ধার্য্য হয়। পারিবারিক আদালত উপযুক্ত মনে করলে এই অধ্যাদেশের অধীনে মামলার সম্পূর্ণ বিচার কার্যক্রম বা যে কোন অংশে রুদ্ধদ্বার কক্ষে অনুষ্ঠিত করতে পারেন। 

যে বিষয়সমূহ নিয়ে পারিবারিক আদালতে বিচারকার্য পরিচালিত হয় সেই বিষয়গুলো স্বাভাবিকভাবে ভিন্ন প্রকৃতির এবং সেই ভিন্ন প্রকৃতির কারণে পারিবারিক আদালতের বিচার ভিন্ন অবস্থায় হতে পারে। স্বামীর সাথে স্ত্রী, স্ত্রীর সাথে স্বামীর বা সন্তানের সাথে পিতামাতার বিরোধ অনেক সময় জনসমক্ষে প্রকাশ করা বিব্রতকর হয়ে পড়ে। এ সমস্ত কারণে আইন এই মামলা রুদ্ধদ্বার কক্ষে বিচারের ব্যবস্থা রেখেছে। 

আপোস বা পুনর্মিলনের জন্য আদালত খাস কামরায় উভয় পক্ষকে বা যে-কোনো পক্ষকে ডেকে চেষ্টা করতে পারেন অথবা আদালত কোনো মহিলা সাক্ষীর সাক্ষ্য খাস কামরায় গ্রহণ করতে পারেন। আদালত নিজের ইচ্ছায় রুদ্ধদ্বার কক্ষে বা খাস কামরায় বিচারানুষ্ঠানের ব্যবস্থা করতে পারেন না৷ এজন্য আদালতকে উভয় পক্ষ কর্তৃক অনুরোধ করতে হবে।পক্ষগণ আদালতের কাছে আবেদন না করলে আদালত খাস কামরায় সাক্ষ্য গ্রহণ করতে পারেন না।

বিচার সমাপ্তি 
সাক্ষ্য প্রমাণ গ্রহণ করার পর রায় ঘোষণার পূর্বে পারিবারিক আদালত পক্ষগণের মধ্যে শেষ পর্যায়েও আপোষ মীমাংসার জন্য প্রচেষ্টা গ্রহণ করার ক্ষমতা দেয়া হয়েছে। যদি অনুরূপ আপোষ বা পুনর্মিলন সম্ভবপর না হয়, তা হলে আদালত তখনই অথবা ভবিষ্যতে অনধিক সাত দিনের মধ্যে যে-কোনো দিনে রায় ঘোষণা করবেন এবং ডিক্রি প্রদান করবেন। 

আপোষমূলক ডিক্রি 
পারিবারিক আদালতে মামলা নিষ্পত্তির দুটি পদ্ধতি আছে। প্রথমটি হচ্ছে আপোস, দ্বিতীয়টি বিচার। আপোস বা মীমাংসার মাধ্যমে কোনো বিরোধের সমাপ্তি হলে উভয়পক্ষের মধ্যে সম্পাদিত আরোষ মীমাংসার আলোকে আদালত মামলার ডিক্রি বা সিদ্ধান্ত প্রদান করবেন। 

রায় লিপিবদ্ধকরণ 
পারিবারিক আদালতের রায় বিচারক নিজেই লিখবেন। তার লেখার কোনো অসুবিধা হলে তিনি ডিক্টেশন দিবেন এবং অন্য কেউ লিখে দিবে। অতঃপর তিনি সেটি প্রকাশ্য আদালতে ঘোষণা করবেন এবং তারিখসহ স্বাক্ষর করবেন। রায় আদালতের ভাষায় লিখতে হবে। আপিলযোগ্য সকল রায় ও আদেশসমূহের ক্ষেত্রে রায় লিপিবদ্ধকরণে পারিবারিক আদালতের বিচারের বিষয়বস্তু, সিদ্ধান্ত ও তার যুক্তি এবং কারণ লিপিবদ্ধ করতে হবে। 

আপিল 
পারিবারিক আদালতের রায়, ডিক্রি বা আদেশের বিরুদ্ধে জেলা জজ আদালতে আপিল করা যাবে। জেলা জজ আদালত দেওয়ানি আদালত বিধায় দেওয়ানি কার্যবিধি আইন এই আপিল নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে। 

নিম্নলিখিত ক্ষেত্রে পারিবারিক আদালতের রায় বা ডিক্রির বিরুদ্ধে আপিল চলে না।
১. স্বামী যদি স্ত্রীর সম্পত্তি হস্তান্তর করেন বা উক্ত সম্পত্তির ওপর স্ত্রীর আইন সম্মত অধিকার প্রয়োগে বাধা দেন। এই অভিযোগে স্ত্রী বিবাহ বিচ্ছেদের মামলা করলে এই কারণে ব্যতীত অন্য কোনো কারণে বিবাহ বিচ্ছেদের ক্ষেত্রে পারিবারিক আদালতের রায় বা ডিক্রির বিরুদ্ধে আপিল করা যাবে না। 

২. মোহরানার টাকা ৫ হাজার টাকার উর্ধ্বে না হলে আপিল চলবে না। আপিল দায়েরের ক্ষেত্রে পারিবারিক আদালতের রায়, ডিক্রি বা আদেশ প্রদানের সময় হতে এ সব কপি সংগ্রহ ৩০ দিনের মধ্য করতে হবে।

(ফেসবুক থেকে সংগৃহীত)

বিডি-প্রতিদিন/সালাহ উদ্দীন

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর