৪ এপ্রিল, ২০২০ ১৫:৫৯

সময়ে এক ফোঁড়, অসময়ে দশ ফোঁড়

এবিএম জাকিরুল হক টিটন

সময়ে এক ফোঁড়, অসময়ে দশ ফোঁড়

এবিএম জাকিরুল হক টিটন

যারা ভাবছেন ইউরোপ, আমেরিকার মত ভয়াবহ অবস্থা আমাদের দেশে তথা এশিয়াই কখনো হবে না। কিছু দিনের মধ্যেই দেশের অবস্থা স্বাভাবিক হয়ে যাবে। অফিস, আদালত, মার্কেট, দোকান, স্কুল, কলেজ, ইউনির্ভাসিটি সব কিছু খুলে যাবে। আবার আমরা হেসে খেলে স্বাভাবিক জীবনযাপন করবো। আমিও তাই চাই। কিন্তু বাস্তবতা একটু অন্যরকম। আমি যখনই দেখছি সারা দুনিয়ার বাস্তবতা, তখনই আপনারা আমাদের দেশে তেমন কিছু হবে না-এর পক্ষে যুক্তি দিচ্ছেন। বলছেন, আমাদের দেশে তাপমাত্রা বেশি। আমরা সারা বছর ফরমালিনযুক্ত ফলমূল খাই। আমরা ফার্মের মুরগির মাংস ও ডিমের সাথে পৃথিবীর সবচেয়ে হায়ার অ্যান্টিবায়োটিক খাই। আমরা শাক-সবজির সাথে প্রতিদিন কীটনাশক খাই। আরও কত কি। অতএব আমাদের বডি অ্যান্টিবডি। এ বডিতে করোনা কিছুই করতে পারবে না।

বৃহস্পতিবার রাতে বৃষ্টি দেখে কিছু লোক বলার চেষ্টা করলেন আজ বৃষ্টিতে করোনা সব ভেসে যাবে। আপনাদের সব কথা, সব যুক্তি সত্যি হোক। আপনাদের মুখে ফুলচন্দন পড়ুক। এই দেশটি রক্ষা পাক করোনা থেকে। কিন্তু আমি যখন সারা বিশ্বের করোনার আপডেট দেখি তখন আর আপনাদের সাথে কণ্ঠ মিলাতে পারি না। তখন দেশের কথা, দশের কথা ভেবে আমার শরীর হিম হয়ে যায়। তখনই আপনাদের করজোড়ে অনুরোধ করি ঘরে থাকুন। মসজিদ, মন্দির, গীর্জায় যাবার দরকার নেই। আগে সবাই বেঁচে নেই। তারপর সব হবে। বেড়ানো হবে, আড্ডা হবে, প্রার্থনা হবে, অফিস হবে, পড়া হবে, পরীক্ষা হবে। মোট কথা সব হবে। কিন্তু তার আগে দেখতে হবে বিশ্ব পরিস্থিতির দিকে। আর কতদিন আমাদের ঘরবন্দী থেকে করোনাকে বিদায় দিতে হবে। আপনিই নিচের তালিকার পরিসংখ্যান দেখে সিদ্ধান্ত নিন। 

যুক্তরাষ্ট্র
১ জানুয়ারি-১ জন করোনা শনাক্ত।
১ ফেব্রুয়ারি-৭ জন শনাক্ত।
১ মার্চ -১,৯০,০০০ জন শনাক্ত।

ইতালি
৩১ জানুয়ারি-২ জন করোনা শনাক্ত।
২৯ ফেব্রুয়ারি-১১০০জন শনাক্ত।
৩১ মার্চ-১,০৫,৮০০জন শনাক্ত।

স্পেন
১ ফেব্রুয়ারি-১ জন করোনা শনাক্ত।
১ মার্চ - ৮৪ জন শনাক্ত।
১ এপ্রিল-৯৬,০০০ জন শনাক্ত।

যুক্তরাজ্য
১ ফেব্রুয়ারি-২ জন করোনা শনাক্ত।
১ মার্চ-৩৬ জন শনাক্ত।
১ এপ্রিল-২৫,৫০০ জন শনাক্ত।

জার্মান
২৭ জানুয়ারি-১ জন করোনা শনাক্ত।
২৭ ফেব্রুয়ারি-৪৬ জন শনাক্ত।
২৭ মার্চ-৫১,০০০ জন শনাক্ত।
৩১ মার্চ-৭১,৮০০ জন শনাক্ত।

ফ্রান্স
২৪ জানুয়ারি-২ জন করোনা শনাক্ত।
২৪ ফেব্রুয়ারি-১২ জন শনাক্ত।
২৪ মার্চ -২২,৬০০ জন শনাক্ত।

ইন্ডিয়া
৩০ জানুয়ারি-১ জন করোনা শনাক্ত।
২৯ ফেব্রুয়ারি-৩ জন শনাক্ত।
৩১ মার্চ-১৪০০ জন শনাক্ত।

পাকিস্তান
২৬ ফেব্রুয়ারি-২ জন করোনা শনাক্ত।
২৬ মার্চ-১২০০ জন শনাক্ত।
৩১ মার্চ-১৯০০ জন শনাক্ত।

আর বাংলাদেশে প্রথম করোনা শনাক্ত হয় ৮ মার্চ। আজ পর্যন্ত করোনা শনাক্ত বা আক্রান্তের সংখ্যা মোট ৭০ জন। এখন পর্যন্ত এক মাসও হয়নি। উপরে লক্ষ্য করুন বেশিভাগ দেশেই প্রথম একমাসে এত সংখ্যা হয়নি। কিন্তু উপরে লক্ষ্য করলে দেখবেন তৃতীয় মাসে বৃদ্ধির পরিমাণ কত ভয়াবহ। প্রায় সব দেশেই ২য় মাসের পর থেকে সকল দেশেই করোনা মহামারী আকারে বিস্তার লাভ করেছে।

তাই বলছি, দুই মাস পরে আমাদের কি অবস্থা দাঁড়াবে তা একমাত্র সৃষ্টিকর্তাই জানেন। এবং করোনা আমাদের এই প্রিয় স্বদেশে মহামারী আকারে বিস্তার করলে কি অবস্থা দাঁড়াবে তা আপনারা সকলেই অনুমান করতে পারেন। অমাদের একটু উদাসীনতা ও নিয়ম ভঙ্গের কারণে যদি দেশে করোনা মহামারী আকারে দেখা দেয় তখন ঘরে থেকে নিয়ম করেও লাভ হবে না। কারণ সময়ে এক ফোঁড়, অসময়ে দশ ফোঁড়।

তাই সময় থাকতে আরও একটু কষ্ট ও সংযম করে ঘরে থাকি। নিয়ম মেনে চলি। নিজে বাঁচি, পরিবারকে বাঁচায় তথা দেশকে বাঁচায়। যেহেতু করোনা নিজে চলতে পারে না। সেহেতু আপনি যদি করোনাকে পরিবহন বা চলতে সহয়তা না করেন, তাহলে করোনা নির্মূল হতে বাধ্য। অতএব, ঘরে থাকাই করোনা প্রতিরোধের একমাত্র উপায়।

(ফেসবুক থেকে সংগৃহীত)

বিডি-প্রতিদিন/শফিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর