১ জুন, ২০২০ ০৯:৩৯

এমন সঙ্কটময় মুহূর্তে ছোট বাচ্চাদের একটু সময় দেবেন

মো. খোরশেদ আলম

এমন সঙ্কটময় মুহূর্তে ছোট বাচ্চাদের একটু সময় দেবেন

সব মা বাপের কাছেই পৃথিবীর সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ তার সন্তান। পুলিশে চাকরি করার সুবাদে প্রায়শই হারানো সন্তানকে তাদের বাপ মায়ের কাছে খুঁজে এনে ফিরিয়ে দিতে পেরেছি। বাবা-মা যখন তার হারানো সন্তানকে ফিরে পায় তাদের মুখের দিকে তাকালে অন্যরকম আত্মতৃপ্তি ও স্বর্গীয় অনুভূতি পাওয়া যায়।

মো. রাহাদ মিয়া ও মো. জিহাদ মিয়া দুজনই ৭/৮বছর বয়সী শিশু। এই ২ ভাই একই সাথে ঢাকার একটা মাদ্রাসায় প্রথম শ্রেণিতে পড়ে। গতকাল ৩১ মে তাদের কেওঢালা স্ট্যান্ড থেকে উদ্ধার করি সন্ধ্যা ৬ টায়। আপনারা জেনে থাকবেন কেওঢালা স্ট্যান্ড এলাকা কতটা ব্যস্ততম জায়গা। সারাক্ষণ ভারী যানবাহন চলাফেরা করে। লোকজনের সমাগম!

রাহাদ ও জিহাদ কিছুটা ভয়ে তটস্থ, সারাদিন খেতে পায়নি কিছু। চেহারায় ক্লান্তি, সবমিলিয়ে পথ হারিয়ে, চলতে চলতে এই জায়গায় এসে আরো ভড়কে যায়। আমার অফিসে নিয়ে এসে ওদের খাবারের ব্যবস্থা করে একটু আরামের সুযোগ করে দেই। বাসা কই, ফোন নাম্বার আছে কিনা? বাসার ঠিকানা জানো? জিজ্ঞেস করার পরে সুনির্দিষ্ট কোন উত্তর দিতে পারে নাই। শুধু বললো তাদের বাসা মেরাদিয়া!

মেরাদিয়া ছাড়া আর কিছুই বলতে পারছে না। আমি ডিএমপিতে, মতিঝিলে এসি হিসেবে, ডিবিতে ও মতিঝিল এলাকার দায়িত্বে ছিলাম অনেক দিন। সেই সুবাধে জানি মেরাদিয়া খিলগাঁও থানার আওতাধীন। ঢাকার অন্যান্য এলাকা থেকে একটু অনুন্নত এবং একেবারে ডিএমপির এক কোণায়।

খিলগাঁও থানার অফিসার ইনচার্জকে ফোন দিয়ে বিস্তারিত বলি। যদি কেউ ওদের ব্যাপারে ডাইরি কর‍তে বা থানায় খুঁজতে আসে তাহলে যেন আমার সাথে যোগাযোগ করে । ততক্ষণ বাচ্চাদুটো আমার জিম্মায়।

ঐদিকে ছেলের মা দুপুর থেকেই খুঁজে পাগলপ্রায়। ওরা ২ জন সকাল ১১টায় বাসা থেকে হারিয়ে যায়। আশেপাশে সব জায়গায় তন্নতন্ন করে খুঁজে না পেয়ে ওদের মা রাত ১০ টায় যখন থানায় যায়, তৎক্ষনাৎ খিলগাঁও থানার অফিসার ইনচার্জ আমাকে অবহিত করেন।

রাত ১২টার দিকে রাহাদ ও জিহাদের মা জরিনা বেগম আমার অফিসে আসে। উনার জিম্মায় ফিরিয়ে দেওয়া হয় তার হারিয়ে যাওয়া ২ সন্তানকে। জরিনা বেগম আবেগাপ্লুত হয়ে যান। তিনি ভেবেছিলেন হয়ত কোন অপহরণকারী কিংবা কোন দুর্ঘটনার কারণে তার দুই কলিজার টুকরো...

ধন্যবাদ খিলগাঁও থানার অফিসার ইনচার্জ মশিউর রহমানকে এবং অত্যন্ত মেধাবী পুলিশ কর্মকর্তা ইনস্পেকটর ইশতিয়াক আশফাক রাসেলকে। না হলে হয়ত সম্ভব হত না জিহাদ এবং রাহাদকে তার মায়ের বুকে ফিরিয়ে দেওয়া।

করোনাভাইরাসের মহামারীর জন্য লকডডাউন চলায় বাচ্চারাও সাধারণত ঘরের বাইরে যেতে না পারায় মানসিকভাবে অতিষ্ঠ। এমন সঙ্কটময় মুহূর্তে ছোট বাচ্চাদের একটু সময় দেবেন বিশেষ করে, নজর রাখুন তাদের প্রতি।

বাচ্চা দুটোকে ওদের মায়ের কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার আগে যখন কুশলাদি জিজ্ঞেস করে শুনতে পারলাম ওদের মা একজনের বাসায় কাজ করেন। গত ২ মাস থেকে কাজ নেই। তখন মনে হলো এই পরিবারের জন্য এই সঙ্কটময় মুহূর্তে নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যদ্রব্যের উপহারসহ নগদ কিছু অর্থ দিয়ে পাশে দাঁড়ানো উচিৎ।

আগামী কয়েকদিনের জন্য ওদের খাবারদাবারসহ ওদের বাসায় পাঠানোর ব্যবস্থা করে কিছুক্ষণ আগে ফ্রি হলাম।
পরবর্তী কার্যক্রম, অপারেশন, রুটিন চেকাপ নিয়ে ব্যস্ত হতে হবে আবারও।

সবাই ভালো থাকুন।

(ফেসবুক থেকে সংগৃহীত)

লেখক: অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, নারায়ণগঞ্জ জেলা

বিডি প্রতিদিন/ফারজানা

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর