১০ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ১৬:২১

‌‘তুই আমারে চিনোস’

ইফতেখায়রুল ইসলাম

‌‘তুই আমারে চিনোস’

ইফতেখায়রুল ইসলাম

গত সপ্তাহে একদিন সকালে হাঁটতে বের হয়েছিলাম। হাঁটা শেষে বাসার পাশের গলিতে আসতেই তীব্র চিৎকারে একটি লাইন শুনতে পেলাম, ‘তুই আমরে চিনোস’? অপরপাশের জন আরও দ্বিগুণ তারস্বরে বলতে লাগলো, ‘তুই আমারে চিনোস’!  আমি খুব মনোযোগের সাথে তাদের দু’জনের দিকে তাকিয়ে কাউকেই চিনতে পারলাম না! তবে দু’জনের সামনেই চায়ের কেতলি ও অন্যান্য সরঞ্জামাদি দেখে অনুধাবন করতে পারলাম তারা দু’জনেই চা বিক্রেতা! তাদের পেশাগত অবস্থান নিয়ে আমার কোনো মাথা ব্যথা নাই (এ্যাট লিস্ট কাজ করে খায়)! 

যখন দু’জনেরই উত্তেজনা চরমে তখন আশেপাশের দুই একজন তাদের থামতে বলছিলেন। সেদিকে কোনো ভ্রুক্ষেপ না করেই তারা দু’জনই পূর্ণোদ্যমে নিজেদের চেনানোয় ব্যস্ত ছিলেন। হঠাৎই অবস্থা বেগতিক হয়ে যায় যখন একজন চা বিক্রেতা অপর একজনের গালিগালাজ শুনে হাতে বাঁশ তুলে নেন। সেই মুহূর্তে আমি চিৎকার করে থামতে বললেও কেউই কথা শুনছিল না! মুহূর্তেই একজন হাতের বাঁশ দিয়ে অপরজনকে হালকা আঘাত করে, যার ফলে আঘাতপ্রাপ্ত চা বিক্রেতা আহত বাঘের মত নিজের লেবু কাটার ছুরি নিয়ে অপরজনকে আঘাত করতে দৌঁড়ানো শুরু করে। আমরা কয়েকজন মিলে থামাতে চেয়েও মহাশয়ের রাগ নিয়ন্ত্রণ করতে পারছিলাম না! ইতোমধ্যে নির্দিষ্ট এলাকার পুলিশের টহল টিমকে খবর দিতেই ৫ মিনিটের মধ্যে তারাও এসে হাজির হয়ে যায়।

আঘাতকারী চা বিক্রেতা চাকু দেখেই নিজের দোকানপাট ফেলে চলে যায়! টহল টিমকে পুরো ঘটনা অবহিত করে, আমি তুই আমারে চিনোস চাওয়ালা ভাইকে ছেড়ে নিজের বাসার দিকে পা বাড়াই! মনে মনে ভাবছিলাম, চা বিক্রেতা থেকে শুরু করে প্রত্যেক শ্রেণি-পেশার মধ্যে এই ‘তুই আমারে চিনোস’ লোকজনের উপস্থিতি কম নয়! আমরা সবাই-ই কম, বেশি নিজেদের চেনাই, এর পেছনে মূল প্রভাবক ক্ষমতার প্রদর্শন! সমাজের কল্যাণ বহনে নিয়মমাফিক এই‘ তুই আমারে চিনোস’ বলায় কারো সমস্যা হওয়ার কথা নয়! সমস্যা হয় অযথা ও অন্যায়ভাবে এই হুমকি প্রদর্শনে! 

শ্রেণিভেদে হুমকির ধরণে অবশ্য ভিন্নমাত্রা থাকে, কেউ কিছু না বলেই নিজেকে কাজ দিয়ে ভাল করেই চিনিয়ে দেয়! কেউ কেউ আবার প্রকাশ্যে, অপ্রকাশ্যে হুমকি প্রদান করেন! অন্যদিকে, কেউ কেউ হুমকিই দেয় শুধু কাজে কিছু করে দেখাতে পারেন না! এখন কার হুমকি আসল আর কারটা নকল, এটা উপলব্ধি করাও বেজায় কঠিন কাজ! 

সব কথার শেষ কথা, মানুষ ক্ষমতা ও ক্ষমতার আশেপাশে থাকতে সবচেয়ে বেশি ভালবাসে। একইসাথে ভালবাসে তার প্রদর্শনে। এবং তারচেয়েও বেশি ভালবাসে ক্ষমতাবানের ক্ষমতার পতনে! কি নিদারুণ দ্বিচারিতা! 

আমাদের সমাজ আসলে এমনই। মেনে নিয়ে চলতে পারলে ভাল না পারলে অদূর ভবিষ্যতে বেদনার নদীতে সাঁতরে চলতে হবে। 

এতকিছুর পরও এই সমাজে চরম ক্ষমতাবান কেউ যখন, জীবনেও ক্ষমতার ছিটেফোঁটা প্রদর্শন করেন না, তাদের প্রতি সহনশীল মানুষের হৃদয় শ্রদ্ধায় পূর্ণ হয়ে যায়! যদিও তাদের এই সহজ, সরল প্রকাশ সমাজের চতুর শ্রেণির কাছে বোকামির সংজ্ঞায় সংজ্ঞায়িত হয়! ক্ষমতা থাকতে তার প্রদর্শন হবে না, সেটি এই সমাজের চতুর শ্রেণির বিশ্বাস করতে তীব্র কষ্ট হয় কারণ মানুষ নিজে যেমন অন্যকে তাই ভাবতেই ভালবাসে।

(ফেসবুক থেকে সংগৃহীত)

লেখক : এডিসি, মিডিয়া অ্যান্ড পিআর।

বিডি-প্রতিদিন/বাজিত হোসেন

সর্বশেষ খবর