২৭ জানুয়ারি, ২০২২ ১৭:০২

বাণিজ্যিক ঘরানার তামিল ছবি...

মাসুদ হাসান উজ্জ্বল

বাণিজ্যিক ঘরানার তামিল ছবি...

মাসুদ হাসান উজ্জ্বল

বাণিজ্যিক ঘরানার তামিল ছবির একটা মজার বিষয় হলো মাটিতে খুব কম জিনিসই থাকে। নায়ক তো মাটিতে নামার সুযোগই পায় না-চারিদিকে শত্রুস, ভেরি ভেরি ফাইটিং ইন দ্যা স্কাই! বাস-ট্রাক এসবও মোটামুটি আকাশেই ওড়ে! 

আমিও বিনোদিত হই এই ধরনের কাজ দেখে, আমারও ভালো লাগে এই জাতীয় বিনোদন পেতে মাঝে মাঝে। কিন্তু এই ধরনের ছবি বানানোর ক্ষমতা আসলে আমার নাই, সেটা ভিন্ন ধরনের যোগ্যতা। এই যুগে আমার এখনো দৃশ্য মাধ্যমে কবিতা লিখতে মন চায়। এর মানে এই নয় যে নায়ক বা নায়িকা একটু পর পর তোতাপাখির মত কবিতা বলতে থাকবে! 

যদি বেয়াদবি না নেন একটা কথা বলি-দৃশ্যমাধ্যমকে কবিতা বানানোর পায়তারা সম্ভবত এই অধমের আবিষ্কার! পোয়েটিক এ্যাপ্রোচের ছবি দুনিয়াতে আমি পয়দা হওয়ার বহু আগেই ভুরি ভুরি তৈরি হয়েছে। তাহলে এই অযৌক্তিক দাবি আমি কেন করছি? কারণ পোয়েটিক এ্যাপ্রোচ এক জিনিস আর গোটা কাজটাই পোয়েট্রি, এটা এক জিনিস! 

যে জীবন ফড়িং এর, ছায়াফেরি, রোদ মেখো সূর্যমুখি, দুলছে পেল্ডুলাম, ধুলোর মানুষ মানুষের ঘ্রাণ, থতমত এই শহরে কিংবা অক্ষয় কোম্পানি’র জুতো’র কনসেপ্টের ছবি তো আগে দুনিয়াতে দেখেন নাই কেউ, না কি? 

দেখে থাকলে আওয়াজ দিয়েন-ভুল শুধরে নেব, এমন তো নয় দুনিয়ার সমস্ত সিনেমা আমি দেখে ফেলেছি (খুব কম যে দেখেছি তাও অবশ্য নয়! ) 

আজকে স্বপ্রণোদিত হয়ে নিজের কাজ নিয়ে কথা বলছি, কারণ গত ১৫ বছরে অজস্র ইন্টার্ভিউ দিয়েছি, কিন্তু এই ধরনের প্রশ্ন কেউ আমাকে করে নাই! 

আমি কর্মার্শিয়াল এবং ফেস্টিভ্যাল এই দুই মার্কেটের কোন মার্কেটেরই কোনপ্রকার তরিকা বা ট্রেইন্ড ফলো করি না। ফলে জীবদ্দশায় আমার মূল্যায়ন হবার সম্ভাবনা কম। “ফেস্টিভ্যাল মুক্ত চলচ্চিত্র’র জায়গা” এইটা মোটামুটি একটা ভুয়া কথা ! ফেস্টিভ্যালে ছবি সান্ধানোরও নির্দিষ্ট তরিকা আছে। আমিও ভাবছি এমন দুই এক তরিকার ছবি বানায়ে ওসব জায়গা থেকে ঘুরে টুরে আসবো কোনদিন। “মাহমুদ মিয়া বেকার, তাই বলে কী সাধা নাই তার বিশ্ব ঘুরে দেখার“? 

যাই হোক আমি দৃশ্যমাধ্যমকে কবিতা ভেবে কাজের কাজ কিছু হচ্ছে কী না, সেটাও এক প্রশ্ন! উপরে আমার যে সমস্ত কাজের উল্লেখ করেছি সেই কাজগুলো নিয়ে নির্দিষ্ট একটা দর্শক শ্রেণির উন্মাদনা বলে দেয়-কাজ কিন্তু হয়, যার বা যাদের ভালো লাগার তাদের ঠিকই ভালো লাগে! পৃথিবীর সবাই নিশ্চয়ই জীবনানন্দ দাশের ভক্ত নয়! তবে রবীন্দ্রনাথ ভক্ত বুঝে না বুঝে সবাই। আমি জীবনানন্দ ভক্ত, রবীন্দ্রনাথের তো ভক্তের অভাব নাই, আমার মতো এক মামুলী ইনসান উনার ভক্ত না হলে জগতের তাতে কী বা এসে যায়!

বহু বছর আগে কোন একটা ফিল্ম সোসাইটির পত্রিকাতে একটা লেখা লিখেছিলাম। সেখানে লিখেছিলাম শিল্পের নবীনতম প্রতিনিধি সিনেমা-সাহিত্যের গভীরতা বা উচ্চতায় পৌঁছায়নি। 

আমি সব সময়ে বলি শিল্প সৃষ্টিতে শিল্পীর একটা অন্বেষণ লাগে। আমার অন্বেষণ চলচ্চিত্রকে সাহিত্য’র গভীরতা বা উচ্চতায় নিয়ে যাওয়া। ভালো সিনেমার প্রতিবন্ধকতার জন্য সব সময় ঢালাও ভাবে দর্শককে দায়ী করা হয়। এটা মোটেও ঠিক নয়। ভালো ছবির প্রতিবন্ধকতা the conventional structure of film industry, সে বক্স অফিস হোক আর ফেস্টিভ্যাল! আমি নিজে যথেষ্ট পরিমাণে বিনোদন ধর্মী কাজ দেখি , ইন্সট্যান্ট এন্টারটেইনমেন্ট হিসেবে, সাধারণ দর্শকও একই কাজ করে। দর্শক নতুন যেকোন কাজ সেটা যদি তাকে কনভিন্স করতে সক্ষম হয় সে অবশ্যই সেটা গ্রহণ করে। আমি নিজে তার প্রমাণ, আমার কোনদিন দর্শক সঙ্কট হয় নাই।

নিজের কাজ নিয়ে এতো রকম সাফাই গাওয়ার একটা গোপন উদ্দেশ্য রয়েছে, আমি এই মুহূর্তে আমার নতুন যে সিনেমাটা নিয়ে কাজ করছি সেটা বাড়াবাড়ি পর্যায়ের এক্সপেরিমেন্টাল। কিন্তু দর্শক সেটা বাড়াবাড়ি রকমের পছন্দ করবেন বলেই আমার বিশ্বাস।

লেখক : নির্মাতা।

(ফেসবুক থেকে সংগৃহীত)

বিডি প্রতিদিন/শফিক/আরাফাত

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর