গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলার কুমার নদে অনুষ্ঠিত হয়ে গেলো আবহমান গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতা। শুক্রবার (২০ সেপ্টেম্বর) বিকেলে মহেশপুর ইউনিয়নের হোগলাকান্দি ও চকবোনদোলা গ্রামবাসী এ নৌকা বাইচের আয়োজন করে।
দীর্ঘ ৭ বছর ধরে এখানে এ নৌকা বাইচ হয়ে আসছে। কুমার নদের দু’পাড়ে দাঁড়িয়ে বিভিন্ন বয়সের হাজার হাজার নারী-পুরুষ, শিশু-কিশোর এ নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতা উপভোগ করেন। বাইচ উপলক্ষে বসে গ্রামীণ মেলা।
হোগলাকান্দি ও চকবোনদোলা গ্রামবাসী প্রতি বছর কুমার নদে নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতার আয়োজন করে আসছে। চিত্ত বিনোদনের জন্য এ দিনটির অপেক্ষা করে থাকেন এ এলাকার মানুষসহ আশপাশের অনেক গ্রামের মানুষ। উপভোগ করেন কাসির তালে তালে মাল্লাদের গাওয়া জারি সারি আর বৈঠার সলাৎ সলাৎ শব্দ।
এ নৌকা বাইচে গোপালগঞ্জ ও ফরিদপুর জেলার প্রত্যন্ত গ্রামের ৬ টি বাছারী নৌকা অংশ নেয়। বিকাল ৪ টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চলে এ নৌকা বাইচ। কুমার নদে ছোট ছোট অসংখ্য নৌকা ও ট্রলারে বসে নানা বয়সী নারী পুরুষ উপভোগ করেন বাইচ।
এছাড়া কুমার নদের দুই পাড়ে দাঁড়িয়ে হাজার হাজার মানুষও প্রত্যক্ষ করেন এ দৃষ্টিনন্দন বাইচ। এ উপলক্ষে কুমার নদ পাড়ের হোগলাকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় চত্বরে গ্রামীণ মেলা বসে। এ মেলায় মিষ্টি, চানাচুর, চটপটি. ফুসকাসহ বিভিন্ন ধরণের খাবার ও শিশুদের খেলনাসহ বিভিন্ন নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের পসরা নিয়ে বসেন দোকানীরা।
গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী এ নৌকা বাইচ বাঁচিয়ে রাখতে সবাই এগিয়ে আসবে এমনটাই প্রত্যাশা দর্শনার্থীদের।
নৌকা বাইচ দেখতে আসা গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া উপজেলার বর্ণি গ্রামের সাদ্দাম হোসেন, কাশিয়ানী উপজেলার বলুগাঁ গ্রামের সিয়াম, রশিদ রহমান, জয়নগর গ্রামের সুজন কুমার ঢালী বলেন, নৌকা বাইচ দেখতে আনন্দ লাগে। তাই পরিবার পরিজন ও বন্ধু-স্বজনদের সাথে নৌকা বাইচ দেখেছি। আনন্দ ভাগাভাগি করে নিয়েছি। এ এক অন্যরকম প্রশান্তি।
আয়োজক কমিটির সদস্য গণমাধ্যম কর্মী গিয়াস উদ্দিন বলেন, নতুন প্রজন্ম নৌকাবাইচ শুধু বইতে পড়ে। তারা বাস্তবে নৌকা বাইচ দেখতে পারে না। তাই তাদের জন্য এই আয়োজন। এ আনন্দ আয়োজন সমাজে ছড়িয়ে দিতে পাড়লে শিশুদের মোবাইল ও গেমস্ আসক্তি কমবে। কিশোর ও যুব সমাজ মাদকাসক্তি থেকে বেরিয়ে আসতে পারবে বলে আমি বিশ্বাস করি।
এই নৌকা বাইচের আয়োজক কমিটির সদস্য এস.এম আমিনুল ইসলাম বলেন, আমরা ৭ বছর ধরে এ আয়োজন করে চলেছি। আগামীতেও এ ঐতিহ্য ধরতে রাখতে নৌকা বাইচের আয়োজন অব্যাহত থাকবে।
কাশিয়ানী উপজেলার দোলাগ্রামের রেজাউলের নৌকা প্রথম, আড়পাড়া গ্রামের ওসমান মিনার নৌকা দ্বিতীয় ও গেড়াখোলা গ্রামের বরকতের নৌকা তৃতীয় স্থান অধিকার করে। পরে বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন প্রধান অতিথি কাশিয়ানী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মু. রাসেদুজ্জামান।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে কাশিয়ানী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মু. রাসেদুজ্জামান আযোজক কমিটিকে ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, এ বর্ণিল আয়োজন সবাইকে নির্মল আনন্দ দিয়েছে। হাজার বছরের বাঙ্গালীর এ ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে হবে। হৃদয়ে লালন করতে হবে। তবেই আমাদের সাংস্কৃতি আরো সমৃদ্ধ হবে।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল