রবিবার, ২০ নভেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

বিশ্বকাপের লড়াই মঞ্চ

রাশেদুর রহমান

বিশ্বকাপের লড়াই মঞ্চ

কাতারে ফিফা বিশ্বকাপ শুরু হচ্ছে আজ। মধ্যপ্রাচ্যের ছোট এ দেশের পাঁচ শহরের ৮ স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হবে ৩২ দলের জমাটি লড়াই। ৬৪টি ম্যাচের এ আটটি স্টেডিয়াম তৈরি করা হয়েছে আরব ঐতিহ্যের কথা মাথায় রেখে। দৃষ্টিনন্দন এসব স্টেডিয়াম নিয়েই এ বিশেষ প্রতিবেদন-

 

লুসাইল আইকনিক স্টেডিয়াম

কাতার বিশ্বকাপের ফাইনাল ভেন্যু লুসাইল আইকনিক স্টেডিয়াম। বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হওয়ার লড়াইয়ে এ মাঠেই আগামী ১৮ ডিসেম্বর লড়াইয়ে নামবে সেরা দুটি দল। লুসাইল স্টেডিয়াম ডিজাইন করেছে ব্রিটিশ প্রতিষ্ঠান ফস্টার ও পার্টনারস। চমৎকার ডিজাইনের এ স্টেডিয়ামটি দেখতে অনেকটা আরবীয় বৌলের মতো। আরবের ঐতিহ্যের সঙ্গে মিশে আছে এ বৌল। প্রাচীনকাল থেকে খাবার পরিবেশনের জন্য তারা ব্যবহার করছে ভিন্ন ধরনের এ বৌল। মোটামুটি গোলাকৃতির বলে মনে হলেও তা আসলে খানিকটা চ্যাপ্টা প্রকৃতির। অনেকটা ডিমের মতো। উপর থেকে দেখলে লুসাইল স্টেডিয়ামকেও তাই মনে হবে।

এ স্টেডিয়ামে গ্রুপ পর্বের ছয়টি ম্যাচসহ মোট ১০টি ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে। এর মধ্যে আছে শেষ ষোলোর একটি, কোয়ার্টার ফাইনালের একটি, সেমিফাইনালের একটি এবং ফাইনাল ম্যাচ। কাতার বিশ্বকাপের ভেন্যুগুলোর মধ্যে দর্শক ধারণক্ষমতার দিক থেকে সবচেয়ে বড় হলো লুসাইল স্টেডিয়াম। স্টেডিয়ামটিতে ৮০ হাজার দর্শক বিশ্বকাপের ম্যাচ দেখতে পারবেন। কাতারের রাজধানী দোহা থেকে ২০ কিলোমিটার উত্তরে লুসাইল শহরে স্টেডিয়ামটি অবস্থিত। ৭৬৭ মিলিয়ন ডলার ব্যয়ে নির্মিত স্টেডিয়ামটির নির্মাণকাজ শুরু হয় ২০১৭ সালে, যা ২০২১ সালে শেষ হয়।

 

আল বায়েত স্টেডিয়াম

কাতার বিশ্বকাপের আরও একটি নান্দনিক স্টেডিয়াম আল বায়েত। এ মাঠেই শুরু হবে বিশ্বকাপের লড়াই। উদ্বোধনী ম্যাচে খেলবে কাতার-ইকুয়েডর। এ মাঠেই হবে জাঁকজমকপূর্ণ উদ্বোধনী অনুষ্ঠান। কাতারের রাজধানী দোহা থেকে ৫০ কিলোমিটার উত্তরের আল খোরে অবস্থিত আল বায়েত স্টেডিয়াম। ৮৪৭ মিলিয়ন ডলার ব্যয়ে নির্মিত তাঁবু আকৃতির এ স্টেডিয়ামটির নির্মাণকাজ শুরু হয় ২০১৪ সালে, যা ২০২১ সালের শেষদিকে সম্পন্ন হয়। আল বায়েত স্টেডিয়াম তৈরির সময়ও মাথায় রাখা হয়েছিল আরবীয় ঐতিহ্য। বেদুইনদের জীবনযাত্রায় তাঁবুর গুরুত্ব অনেক। তারা এক স্থান থেকে আরেক স্থানে বসত গড়ত এ তাঁবুতেই। ৬০ হাজার দর্শক ধারণক্ষমতার এ স্টেডিয়ামে একটি সেমিফাইনাল আর কোয়ার্টার ফাইনালসহ বিশ্বকাপের ৮টি ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে।

 

এডুকেশন সিটি স্টেডিয়াম

কাতারের রাজধানী দোহার অদূরে অবস্থিত আল-রাইয়ান শহর। এ শহরেই অবস্থিত এডুকেশন সিটি স্টেডিয়াম। এ স্টেডিয়ামকে কাতার ফাউন্ডেশন স্টেডিয়াম নামেও অনেকে চেনেন। স্টেডিয়ামটির বাইরের দিক হীরার মতো দেখা যায় বলে এটি মরুভূমির হীরা (ডেজার্টস ডায়মন্ড) বলেও পরিচিত। এ স্টেডিয়ামের চারপাশে অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আছে। এ কারণেই এ স্টেডিয়ামকে এডুকেশন সিটি স্টেডিয়াম বলা হয়। ২০১৫ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত চলা স্টেডিয়ামটির নির্মাণকাজে ৭০০ মিলিয়ন ডলারেরও বেশি খরচ হয়েছে। এ স্টেডিয়ামের ডিজাইন করেছে প্যাটার্ন ডিজাইন প্রতিষ্ঠান। এ মাঠটি তৈরি করতে ব্যবহার করা হয়েছে গ্রিন ম্যাটেরিয়াল। এজন্য পৃথিবীর সবচেয়ে পরিবেশবান্ধব স্টেডিয়ামগুলোর একটি এটি। ৪০ হাজার দর্শক ধারণক্ষমতার এ স্টেডিয়ামে এবারের বিশ্বকাপের ১টি কোয়ার্টার ফাইনালসহ ৮টি ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে।

 

 স্টেডিয়াম ৯৭৪

কাতারের রাজধানী দোহায় অবস্থিত স্টেডিয়াম ৯৭৪ এর পূর্ব নাম রাস আবু আবুদ স্টেডিয়াম। ৯৭৪টি কনটেইনার ব্যবহার করে এ স্টেডিয়াম তৈরি করা হয়েছে। এ কারণেই মাঠের নাম রাখা হয়েছে ৯৭৪ স্টেডিয়াম। এ ছাড়াও কাতারের ডায়াল কোডও এটাই। এ স্টেডিয়ামটির নির্মাণকাজ ২০১৭ সালে শুরু হয়, যা ২০২১ সালে এসে সম্পন্ন হয়। ৪০ হাজার দর্শক ধারণক্ষমতার এ স্টেডিয়ামে এবারের বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্বের ৬টি এবং শেষ ষোলোর একটি ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে। বিশ্বকাপের পর এ স্টেডিয়ামটি সরিয়ে নেওয়া হবে। উরুগুয়েতে এ স্টেডিয়াম স্থানান্তরিত হওয়ার কথা রয়েছে। অভিনব পদ্ধতিতেই তৈরি করা হয়েছে ৯৭৪ স্টেডিয়াম। এর ডিজাইন করেছে ফেনউইক আইরিবারেন আর্কিটেক্টস।

 

আহমাদ বিন আলী স্টেডিয়াম

আহমাদ বিন আলী স্টেডিয়াম, আল রাইয়ান স্টেডিয়াম নামেও পরিচিত। আল রাইয়ান শহরের দুটি স্টেডিয়ামে এবার বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হবে। কাতারের সবচেয়ে সফল ক্লাব আল রাইয়ানের হোম গ্রাউন্ড এটি। শহরের সঙ্গে মরুভূমির সংযোগস্থানে অবস্থিত এ স্টেডিয়ামের কাজ ২০১৬ সালের প্রথমদিকে শুরু হয়। বিশ্বকাপে এর ধারণক্ষমতা প্রায় ৪০ হাজার হলেও বিশ্বকাপের পর তা কমিয়ে ২১ হাজার করা হবে। বিশ্বকাপের ৭টি ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে এ স্টেডিয়ামে। এর মধ্যে একটি আছে নকআউট পর্বের ম্যাচ। এ স্টেডিয়ামটি তৈরি করার সময়ও ডিজাইনাররা ব্যবহার করেছেন কাতারের ইতিহাস-ঐতিহ্য আর প্রকৃতি। স্টেডিয়ামটির দিকে তাকালেই দর্শকদের মনে পড়বে মরুভূমির সৌন্দর্যের কথা।

 

খলিফা ইন্টারন্যাশনাল স্টেডিয়াম

১৯৭৬ সালে নির্মিত এ স্টেডিয়ামটিই কাতারের প্রধান ফুটবল স্টেডিয়াম। এটিই একমাত্র ভেন্যু, যেটি কাতার বিশ্বকাপের আয়োজক স্বত্ব লাভের আগে থেকেই বিদ্যমান ছিল। অবশ্য এরপর সংস্কার কাজের মাধ্যমে স্টেডিয়ামের রূপ অনেকটাই বদলে ফেলা হয়েছে। স্টেডিয়ামের কাজ ২০১৪ সালে শুরু হয়। খলিফা ইন্টারন্যাশনাল স্টেডিয়াম কাতার জাতীয় দলের মাঠ। এখানেই ২০১১ সালের এশিয়ান কাপের ফাইনাল এবং ২০১৯ সালের ক্লাব বিশ্বকাপের ফাইনাল অনুষ্ঠিত হয়েছে। যে ম্যাচে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছে লিভারপুল ও ফ্লেমেঙ্গো। কাতার বিশ্বকাপের ৮টি ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে খলিফা ইন্টারন্যাশনাল স্টেডিয়ামে। এর মধ্যে শেষ ষোলোর একটি ছাড়াও আছে তৃতীয় স্থান নির্ধারণী ম্যাচ।

 

আল থুমামা স্টেডিয়াম

কাতার বিশ্বকাপের আরও একটি স্টেডিয়াম আল থুমামা। সেন্ট্রাল দোহা থেকে ১২ কিলোমিটার দূরে হামাদ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কাছে অবস্থিত আল থুমামা স্টেডিয়াম। এটি গাহফিয়ার আদলে নির্মিত। গাহফিয়া হচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে পুরুষদের পরিধানের একটি ঐতিহ্যবাহী টুপি। আল থুমামা স্টেডিয়ামে ৪০ হাজার দর্শক ধারণক্ষমতার গ্যালারি রয়েছে। অবশ্য বিশ্বকাপের পর এর ধারণক্ষমতা অর্ধেকে নামিয়ে আনা হবে। কাতার বিশ্বকাপের ৮টি ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে আল থুমামা স্টেডিয়ামে। এর মধ্যে শেষ ষোলোর একটি এবং কোয়ার্টার ফাইনালের একটি ম্যাচও আছে।

 

আল জানুব স্টেডিয়াম

আল ওয়াকরাহ শহরটি সমুদ্রের খুব কাছে অবস্থিত। এ শহরেই আছে বিশ্বকাপের স্টেডিয়াম আল জানুব। ফিশিং বোটের আদলে তৈরি করা হয়েছে এ স্টেডিয়াম। দূর থেকে দেখলে একটি নৌকা বলেই ভ্রম হয়। দৃষ্টিনন্দন এ স্টেডিয়ামটি ডিজাইন করেছেন জাহা হাদিদ। কাতার বিশ্বকাপের ৭টি ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে ৪০ হাজার দর্শক ধারণক্ষমতার এ স্টেডিয়ামে। গ্রুপ পর্বের ৬টি ম্যাচ ছাড়াও শেষ ষোলর একটি ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে এ মাঠে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর