বুধবার, ১৫ জুন, ২০১৬ ০০:০০ টা

মামলা হচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ছয় কর্মকর্তার বিরুদ্ধে

মানিক মুনতাসির

মামলা হচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ছয় কর্মকর্তার বিরুদ্ধে

নিউইয়র্কের ফেডারেল রিজার্ভ সিস্টেম থেকে চুরি হওয়া বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের অর্থ চুরির ঘটনায় বাংলাদেশ ব্যাংকের যেসব কর্মকর্তাকে দায়ী করেছে ফরাসউদ্দিনের নেতৃত্বাধীন তদন্ত কমিটি, তাদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি বিধিতে মামলা করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সোমবার মন্ত্রণালয়ে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ-সংক্রান্ত এক সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বৈঠকের একটি সূত্র জানায়, দায়িত্বে অবহেলা থাকায় অভিযুক্ত ছয় কর্মকর্তার মধ্যে দুজনের কম্পিউটারের পাসওয়ার্ড জেনে যায় হ্যাকাররা। এ ছাড়া তাদের অসতর্কতার কারণে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সার্ভার সিস্টেমে হ্যাকাররা প্রবেশ করতে সক্ষম হয়। এজন্য তাদের বিরুদ্ধে আইনগত বা ফৌজদারি বিধিতে ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ ক্ষেত্রে আইন মন্ত্রণালয়ের মতামত চেয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের পক্ষ থেকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। অর্থমন্ত্রীর সভাপতিত্বে বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সচিব আবুল কালাম আজাদ, ব্যাংকিং বিভাগের সচিব ইউনুসুর রহমান, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবিরসহ সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের অভিযুক্ত কর্মকর্তারা হলেন : অ্যাকাউন্টস অ্যান্ড বাজেটিং বিভাগের যুগ্ম পরিচালক জুবায়ের বিন হুদা, উপ-পরিচালক মিজানুর রহমান ভূঁইয়া, জি এম আবদুল্লাহ ছালেহীন, শেখ রিয়াজউদ্দিন ও রফিক আহমেদ মজুমদার। এদের দায়িত্বজ্ঞানহীনতা এবং অবহেলার কারণে সার্ভার হ্যাকিংয়ের ঘটনা ঘটেছে। পক্ষান্তরে এরা হ্যাকারদের সহায়তা করেছেন। এ ছাড়া গভর্নর সচিবালয় বিভাগে কর্মরত মইনুল ইসলাম ও অ্যাকাউন্টস অ্যান্ড বাজেটিং বিভাগের শেখ রিয়াজউদ্দিন তাদের ইউজার আইডি ও পাসওয়ার্ড ‘কমপ্রোমাইজড’ হতে দিয়ে মহাবিপত্তির সৃষ্টি করেছিলেন বলে তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। এতে আরও বলা হয় : জুবায়ের বিন হুদা ও জি এম আবদুল্লাহ ছালেহীনের ইউজার আইডির পাসওয়ার্ড চুরি করে তা ব্যবহার করেছে হ্যাকাররা। এমনকি এরাই আগে জানতে পারে তাদের পাওয়ার্ড চুরি হয়েছে। কিন্তু তারা তা আমলে নেননি। এতে তারা দায়িত্ব পালনে চরম অবহেলা করেছেন। কাণ্ডজ্ঞানহীনের মতো কাজ করেছেন। প্রতিবেদনের এসব বিষয় আমলে নিয়ে সোমবারের সভায় বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে বলা হয়, ওই কর্মকর্তারা এখনো নিজ নিজ পদে বহাল রয়েছেন। এটা অনৈতিক। তাদের চাকরিচ্যুত করা যাবে কিনা সেজন্য আইনগত দিকগুলো বিশ্লেষণ করতে আইন মন্ত্রণালয়ের সহায়তা চেয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বৈঠকে ফরাসউদ্দিনের জমা দেওয়া তদন্ত প্রতিবেদনের সুপারিশগুলো ধাপে ধাপে বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এ ক্ষেত্রে সাইবার নিরাপত্তা বাড়াতে বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্ভারে শক্তিশালী অ্যান্টি ভাইরাস সফটওয়্যার ব্যবহার করার নির্দেশ দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। পাশাপাশি এ ধরনের ঘটনা যাতে আর না ঘটে সেজন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার এনে সক্ষমতা বৃদ্ধির সুপারিশটি দ্রুত বাস্তবায়ন করতে বলেছেন তিনি। ৩০ মে ফরাসউদ্দিনের জমা দেওয়া তদন্ত প্রতিবেদনে গত বছরের নভেম্বরে সুইফটের (সোসাইটি ফর ইন্টারব্যাংক ফিন্যানশিয়াল টেলিকমিউনিকেশন) ভুয়া প্রতিনিধি হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংকে আসা নিলাভান্নান এ দুজনের পাসওয়ার্ড নকল করে নেন। এ পাসওয়ার্ড ব্যবহার করে সার্ভারের গোপন নোটবুকে থাকা ব্যাক অফিস অব দ্য ডিলিং রুমের সব কর্মকর্তার আইডি ও পাসওয়ার্ড হাতিয়ে নেয় হ্যাকাররা। সেই ব্যক্তি আদৌ সুইফটের প্রতিনিধি ছিলেন না। তিনি ছিলেন হ্যাকারদের প্রতিনিধি। সে ক্ষেত্রে ওই ব্যক্তির সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তাদের কারও পরে যোগাযোগ হয়েছে কিনা, বৈঠকে তা বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে জানতে চেয়েছেন অর্থমন্ত্রী। এদিকে চুরি হওয়া রিজার্ভের অর্থ ফেরত আনতে ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক, ফিলিপাইন কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও সে দেশের রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাংকিং করপোরেশনে (আরসিবিসি) যোগাযোগ আরও বাড়ানোর নির্দেশনা দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। এ ক্ষেত্রে ফেডারেল রিজার্ভের বিরুদ্ধে মামলা করা যায় কিনা, সে বিষয়েও আইন মন্ত্রণালয়ের মতামত চাওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।

সর্বশেষ খবর