বুধবার, ২০ জুলাই, ২০১৬ ০০:০০ টা

জঙ্গিদের শিকড় খুঁজে বের করব, তদন্তে বিশেষ টিম : প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করে বলেছেন, গুলশান ও শোলাকিয়ায় হামলাকারী জঙ্গি ও সন্ত্রাসীদের বিচারের আওতায় আনতে সক্ষম হব। এর মধ্যে সব বাহিনীকে নিয়ে বিশেষ তদন্ত টিম গঠন করে দেওয়া হয়েছে। কোথা থেকে অস্ত্র আসছে, কোথা থেকে অর্থ আসছে, কারা তাদের আশ্রয় দিচ্ছে— তাদের শিকড় পর্যন্ত আমরা খুঁজে বের করব। আমি নিজে ভিডিও ফুটেজ  দেখে সন্ত্রাসীদের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করে নির্দেশনা দিয়েছি। গুলশান, শোলাকিয়াসহ পবিত্র নগরী মদিনা ও ফ্রান্সের নিস শহরে সন্ত্রাসী জঙ্গি হামলায় দেশি-বিদেশি নাগরিক নিহত হওয়ায় এবং বিশ্বব্যাপী জঙ্গি ও সন্ত্রাসী হামলার ঘটনার ওপর গতকাল সংসদে আনীত নিন্দা প্রস্তাবের সমাপনী বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। পরে ডেপুটি স্পিকার মো. ফজলে রাব্বি মিয়ার সভাপতিত্বে সংসদে সর্বসম্মতভাবে নিন্দা প্রস্তাবটি পাস হয়।

জনগণকে নিয়ে প্রতিরোধ করতে হবে : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ধর্মের দোহাই দিয়ে মেধাবী তরুণদের জঙ্গিবাদের দিকে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে। তাদের মাথায় ঢুকিয়ে দেওয়া হয় জঙ্গি চিন্তা, এর পেছনে কারা কাজ করছে তা বের করতে হবে। সামাজিকভাবে একটা আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। জনগণই হচ্ছে সবচেয়ে বড় শক্তি। প্রত্যেকের ভিতর জঙ্গি, সন্ত্রাসবাদবিরোধী মনোভাব সৃষ্টি করে তাদের সঙ্গে নিয়ে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। জনগণই হচ্ছে সবচেয়ে বড় শক্তি। প্রত্যেকের ভিতর জঙ্গি, সন্ত্রাসবাদবিরোধী মনোভাব সৃষ্টি করে তাদের সঙ্গে নিয়ে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। প্রধানমন্ত্রী গতকাল দুপুরে তার কার্যালয়ে স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্সের (এসএসএফ) ৩০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে ভাষণ দিচ্ছিলেন। সন্তানদের সঙ্গে অভিভাবকদের সময় কাটানোর প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারা কী করছে, কীভাবে চলছে, কাদের সঙ্গে মিশছে—সেদিকেও বিশেষ দৃষ্টি দিন। তাদের সঙ্গ দিন, তাদের মনের কথাটা শোনার চেষ্টা করুন। কী চাহিদা সেটা জানা, ভালো-মন্দ, সমস্যা দেখা, উঠতি বয়সের ছেলেমেয়েরা যেন বাবা-মায়ের সঙ্গে মন খুলে কথা বলতে পারে সে সুযোগটা তাদের দেওয়া উচিত। যেসব ছেলেমেয়ে বিভ্রান্তির পথে চলে যাচ্ছে তাদের সঠিক পথে নিয়ে আসতে হবে। জড়িতদের চিহ্নিত করে মূলোৎপাটন করা হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, তিনি দেশের মানুষের উন্নয়নে যে কোনো ত্যাগ স্বীকার করতে প্রস্তুত। মানুষের কল্যাণ সাধনই তার লক্ষ্য। নিজের নিরাপত্তা নিয়ে তিনি খুব একটা উদ্বিগ্ন নন। শেখ হাসিনা বলেন, আমার ওপর বিভিন্ন সময়ে হামলা হয়েছে। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের ইচ্ছায় রক্ষা পেয়েছি। একটা বিষয় নিয়ে বেশি চিন্তায় থাকি, যারা আমার নিরাপত্তার দায়িত্বে রয়েছে, আমার কারণে তাদের যেন কোনো ক্ষতি হয়ে না যায়। ধর্মের নামে মানুষ হত্যার প্রসঙ্গ তুলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ইসলাম ধর্ম শান্তির ধর্ম। কিন্তু সেই ইসলাম ধর্মকে আজ প্রশ্নের সম্মুখীন করে দিচ্ছে। আমরা আমাদের ধর্মকে কোনো মতেই অসম্মানিত হতে দিতে পারি না। যাদের কারণে এগুলো হচ্ছে অবশ্যই আমরা তাদের ব্যাপারে কঠোর ব্যবস্থা নেব, এতে কোনো সন্দেহ নেই। তিনি বলেন, ইংরেজি মাধ্যমে পড়া আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত একজন তরুণ স্বাভাবিকভাবে উদার মনোভাবসম্পন্ন হওয়ার কথা থাকলেও কিছু তরুণ কীভাবে ‘ধর্মান্ধ’ হয়ে উঠছে। মনে হচ্ছে যেন অভাব না থাকাটাই তাদের একটা মানসিক কষ্ট হয়ে দাঁড়াচ্ছে। কারা এর পেছনে— এ প্রশ্ন রেখে শেখ হাসিনা বলেন, আসেম সম্মেলনে এই প্রশ্নটা রেখে এসেছি— কারা এর পেছনে? কারা অর্থ ও অস্ত্র প্রদান করে, প্রশিক্ষণ দেয় এবং এই ধর্মান্ধতার পথে ঢুকিয়ে দেয়, বিপর্যয়ের পথে ঠেলে দেয়। সেই উৎসটাই খুঁজে বের করতে হবে। গুলশান ও শোলাকিয়ার হামলার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমি মনে করি— এসব ঘটনার ষড়যন্ত্রকারীরা কোনোভাবেই বাংলাদেশের স্বাধীনতা এবং বাঙালি জাতির উন্নয়ন প্রত্যাশী নয়। তারা কোনোভাবেই বাংলাদেশকে নিয়ে বিশ্বের অন্যদেশের প্রশংসাবাক্য শুনতেও আগ্রহী নয়, যে কারণে তারা এই জঘন্য হামলা সংঘটিত করেছে। অনুষ্ঠানে এসএসএফ’র মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মো. শফিকুর রহমান স্বাগত বক্তৃতা করেন। প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিক এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সচিব মো. আবুল কালাম আজাদ এ সময় মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমরা লক্ষ্য করছি যে—সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের ক্ষেত্রে প্রযুক্তির ব্যবহার বেড়ে যাওয়ায় এর ধরন বদলেছে। যে কারণে প্রত্যেক বাহিনীকে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের সক্ষমতা অর্জন করতে হবে। এ জন্য প্রত্যেক সদস্যকে সন্ত্রাস এবং জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যেতে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারে দক্ষতা অর্জন করতে হবে। আমি চাই বাংলাদেশ কোনো ক্ষেত্রেই যেন পিছিয়ে না থাকে। আমরা প্রত্যেক বাহিনীকেই আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারে দক্ষ করে গড়ে তোলার উদ্যোগ নেব। তিনি বলেন, এ ধরনের ঘটনা যে শুধু বাংলাদেশেই ঘটছে তা নয়, উন্নত বিশ্বেও ঘটে চলেছে, এগুলো সমগ্র বিশ্ববাসীর জন্যই হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। এসএসএফ সদস্যদের কর্মকাণ্ডের ভূয়সী প্রশংসা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই ফোর্স তাদের অন্তর্ভুক্তিকাল থেকেই উচ্চ মানসিক শক্তি, সর্বোচ্চ আনুগত্য এবং সর্বোচ্চ পেশাদারিত্বের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে চলেছে। প্রধানমন্ত্রী এ সময় এসএসএফ সদস্যদের নিজেদের ও পরিবার-পরিজন থাকার বিষয়টি স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেন, আপনাদেরও সামাজিক ও পারিবারিক দায়বদ্ধতা রয়েছে, পাশাপাশি রয়েছে পেশাগত দায়বদ্ধতা। কাজেই পরিবারের সদস্যদের প্রতিও যত্নবান হবেন বলেই আশা করি।

সর্বশেষ খবর