শিরোনাম
বুধবার, ৫ অক্টোবর, ২০১৬ ০০:০০ টা
আইএসের হয়ে সেনা হত্যার ছক

যুক্তরাষ্ট্রে গ্রেফতার বাংলাদেশি

প্রতিদিন ডেস্ক

যুক্তরাষ্ট্রে জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামী স্টেটের (আইএস) হয়ে মার্কিন সেনাসদস্যদের হত্যার জন্য সহযোগিতার পরিকল্পনা করার অভিযোগ আনা হয়েছে বাংলাদেশি এক তরুণের বিরুদ্ধে। নিলাশ মোহাম্মদ দাস নামে ২৪ বছর বয়সী ওই যুবক ১৯৯৫ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্রের মেরিল্যান্ডে বসবাস করছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আইএসকে সমর্থন এবং প্যারিসসহ বিভিন্ন সন্ত্রাসী হামলার প্রশংসা করার কারণে গত বছর থেকে তিনি এফবিআইর গোয়েন্দাদের নজরে ছিলেন। খবর বিডিনিউজের। বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, ভুয়া পরিচয় দিয়ে নিলাশের সঙ্গে যোগাযোগ করে ফাঁদে ফেলে সেপ্টেম্বরে তাকে গ্রেফতার করে এফবিআই। যুক্তরাষ্ট্রের জাস্টিস ডিপার্টমেন্টের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, নিলাশের বিরুদ্ধে ১ অক্টোবর আদালতে অভিযোগ দাখিলের পর সোমবার তাকে গ্রিনবেল্ট জেলা আদালতে হাজির করা হয়। যুক্তরাষ্ট্রের আইন কর্মকর্তারা নিলাশের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ আদালতে পড়ে শোনান। পরবর্তী শুনানির জন্য ৬ অক্টোবর দিন রেখে বিচারক ওই সময় পর্যন্ত আসামিকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন বলে জানানো হয়েছে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে এই বাংলাদেশি তরুণের ২০ বছরের কারাদণ্ড হতে পারে। প্রসিকিউশনের আনা অভিযোগে বলা হয়েছে, গত বছর সেপ্টেম্বরে নিলাশ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আইএসের প্রতি তার সমর্থনের কথা প্রকাশ করেন এবং প্যারিস ও বাল্টিমোরে হামলার প্রশংসা করেন। পরের মাসে তিনি টুইটারে একজনের ছবি প্রকাশ করেন, যিনি আমেরিকার সেনাবাহিনীতে যোগ দিতে চান। নিলাশ টুইটারে ওই ছবির সঙ্গে লেখেন, ‘এই ব্যক্তি মুসলমানদের হত্যা করতে উৎসাহ দিচ্ছে।’ এরপর জানুয়ারিতে ওই বাংলাদেশি তরুণ একটি একে-৪৭ রাইফেলের ছবি টুইটারে প্রকাশ করে লেখেন, ‘এটা কেবল একটি বন্দুক নয়, এটা জান্নাতের টিকেট।’ তিন মাস পর ৩০ এপ্রিল প্রিন্স জর্জেস কাউন্টিতে তিনি অস্ত্রের লাইসেন্সের জন্য আবেদন করেন। পরের পাঁচ মাস তিনি ফায়ারিং রেঞ্জে শুটিং অনুশীলন করেন এবং অস্ত্রের লাইসেন্স পাওয়ার জন্য আঙ্গুলের ছাপ দেন। চলতি বছর মে মাসে এফবিআইর এক ছদ্মবেশী তথ্যদাতার সঙ্গে নিলাশের যোগাযোগ হয়। নিলাশকে ধারণা দেওয়া হয়, সেই ব্যক্তি তার মতো একই মতাদর্শ লালন করেন।

এরপর জুলাই মাসে তিনি ওই এফবিআইর ওই চরকে বলেন, তিনি সেনাবাহিনীর এক সদস্যকে হত্যা করতে চান, যার ব্যক্তিগত তথ্য তিনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আইএসের ছেড়ে দেওয়া তথ্যের মধ্যে পেয়েছেন। কিন্তু পরে ওই সেনাসদস্যের তথ্য আর ইন্টারনেটে না পেয়ে এ বিষয়ে আইএসের কারও সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব কি না তা জানতে চান। এফবিআইর সেই তথ্যদাতা এরপর এক সেনাসদস্য সম্পর্কে ভুয়া তথ্য সরবরাহ করেন নিলাশকে। সেই সঙ্গে তাকে বিকল অস্ত্রও সরবরাহ করা হয়। নিলাশকে বিশ্বাস করানো হয়, এ হত্যাকাণ্ড চালানোর জন্য আইএসের কাছ থেকে ৮০ হাজার ডলার পাওয়া যাবে। এরপর তারা দুজন সেই অস্ত্র নিয়ে কাল্পনিক টার্গেটকে হত্যা করতে গাড়িতে করে বের হন। পরিকল্পনা অনুযায়ী সে সময় এফবিআই নিলাশকে আটক করে। যুক্তরাষ্ট্রের সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল জন পি কার্লিন সোমবার আদালতকে বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য হলো হামলা চালানোর আগেই বিপজ্জনক সন্দেহভাজনদের ধরে ফেলা। আমেরিকার জনগণ আমাদের কাছে এটাই আশা করে।’ এফবিআই ও যুক্তরাষ্ট্রের সন্ত্রাসীবিরোধী কর্তৃপক্ষ এভাবে ফাঁদ পেতে ‘জঙ্গিভাবাপন্ন’দের ধরার নাম দিয়েছে ‘স্টিং অপারেশন’। এর আগে ২০১২ সালে একই কায়দায় কাজী মোহাম্মদ রেজওয়ানুল আহসান নাফিস নামে আরেক বাংলাদেশি তরুণকে গ্রেফতারের পর ব্যাপকবিধ্বংসী অস্ত্রের ব্যবহার ও আল-কায়েদাকে সহযোগিতা করার অভিযোগে সাজা দেওয়া হয়।

সর্বশেষ খবর